Ajker Patrika

নদী রক্ষা বাঁধে ভিড় পর্যটকের

মো. সোহাগ খান, নড়িয়া (শরীয়তপুর)
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১১: ৩৫
নদী রক্ষা বাঁধে ভিড় পর্যটকের

নদীভাঙনে প্রতিবছর বিলীন হয় বসতবাড়ি, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফসলি জমি। নিঃস্ব হয় হাজার হাজার মানুষ। দুঃখ তাঁদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দেখা দেয়। নদীভাঙন রোধে সরকার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

চলছে নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ। দ্রুতই এর উদ্বোধন করা হবে। এই নদী রক্ষা বাঁধে পদ্মাপারের মানুষের মনে এনে দিচ্ছে স্বস্তি। তবে এই বাঁধ শুধু ভাঙন ঠেকানো কাজে সীমাবদ্ধ থাকছে না, দৃষ্টিনন্দন নদী রক্ষা বাঁধে বিকেল থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয়। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায় স্থানীয়দের। আশপাশের জেলা থেকেও অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসছেন ঘুরতে। পড়ন্ত বিকেলে পদ্মাপারের উন্মুক্ত পরিবেশ আর নয়নাভিরাম দৃশ্য আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের। চাঁদনি রাতেও ভিড় থাকে এখানে। দর্শনার্থীদের আনাগোনা দেখে স্থানীয় প্রশাসনকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। পর্যটকদের কথা ভেবে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা তাঁদের।

তবে পৌরসভার মেয়র বলছেন, নদী রক্ষা বাঁধকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের কথা ভেবে গড়ে তোলা হবে পার্ক।

জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাঁশতলা, মুলফৎগঞ্জ, কেদারপুর, চণ্ডীপুর, সুরেশ্বর ভাঙনকবলিত এলাকা। প্রতিবছরই নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে হাজারো মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুধু ২০১৮ সালে এসব এলাকায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্ট, হাটবাজার, ফসলি জমি, মসজিদ-মন্দির, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান।

ভাঙন-আতঙ্কে হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। বর্ষায় পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে ভাঙন-আতঙ্ক দেখা দেয়। ক্ষমতাসীন সরকার নড়িয়া ও সখীপুরের উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫০ বছরের নদীভাঙন রোধসহ উন্নয়নের মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীতীরবর্তী ১০টি স্থানে সিসি ব্লক নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের শুরু থেকে বদলে যেতে শুরু করেছে দৃশ্যপট। বেড়িবাঁধের পাশ দিয়ে গড়ে উঠছে অট্টালিকা, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বাঁধের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নির্মাণ করা হয়েছে রিভার ড্রাইভ। সোডিয়াম লাইটে দূর হয়েছে আঁধার। দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি হয়েছে রেস্টুরেন্ট। পদ্মার কোল ঘেঁষে প্রায় ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জায়গায় বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে সড়কপথ। নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্ট থেকে জাজিরার বিলাসপুর এলাকা পর্যন্ত সড়কপথ নির্মাণ করা হয়েছে। নদী রক্ষা বাঁধকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে।

নড়িয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় বেড়াতে আসা ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘ইতালি থেকে দেশে এসেছি কয়েক দিন আগে। শরীয়তপুরে বেড়ানোর মতো ভালো কোনো পর্যটনকেন্দ্র নেই। এ বাঁধের কথা শুনে এখানে এসেছি। এখানের দারুণ পরিবেশ ও প্রকৃতি বেশ উপভোগ্য।’

ঘুরতে আসা নড়িয়া কলেজের শিক্ষার্থী তাবাসসুম বলেন, ‘আশপাশে খাবারের রেস্তোরাঁ থাকলে ভালো হতো। এ ছাড়া বাঁধজুড়ে বেশ কয়েকটি বসার বেঞ্চ বানানো দরকার। এখানের বিকেল ও সন্ধ্যার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। তাই পরিকল্পনা করে যদি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেত, তা হলে খুবই ভালো হতো।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, ‘সুরেশ্বর পয়েন্ট থেকে নড়িয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ প্রায় শেষ। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এর উদ্বোধন করা হবে। পাশাপাশি ওয়াকওয়ের (হাঁটার পথ) কাজ চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে পারব। সোডিয়াম লাইট বসানোর কাজ চলছে। বেড়িবাঁধের সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।’

পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই এই বেড়িবাঁধে থাকবে। বেড়িবাঁধের পাশে ঝাউগাছ লাগানো হবে। পাবলিক টয়লেট। নড়িয়া পৌরসভা থেকে বেড়িবাঁধের পাশে একটা খালি জমি বের করে পর্যটকদের জন্য পার্ক নির্মাণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

দায়িত্ব পেয়েই ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ মাসুদ রানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত