Ajker Patrika

আগুনের ঝুঁকিতে নারায়ণগঞ্জ

সাবিত আল হাসান, বন্দর (নারায়ণগঞ্জ)
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ৩৮
আগুনের ঝুঁকিতে নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে কিছুদিন পরপরই অগ্নিকাণ্ড আর গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটে চলছে। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটও হয়ে পড়েছে অনিরাপদ। আগুন আর গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে হতাহত হচ্ছেন বাসিন্দা ও পথচারীরা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, গত নভেম্বর জুড়ে জেলায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ ঘটেছে ৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ৯ জন। ক্রমাগত দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। একদিকে তিতাসের ত্রুটিপূর্ণ লাইন, অন্যদিকে অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবন। সব মিলিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জই হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ।

নভেম্বরের ৫ তারিখ দুপুরে রূপগঞ্জের কাঞ্চন বাজার এলাকায় একটি টেক্সটাইল কারখানায় অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হয়। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কাপড়, সুতা ও যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। দমকল কর্মীরা জানান, শর্ট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ড।

১২ নভেম্বর ভোরে ফতুল্লার লালখা এলাকায় একটি ৫ তলা বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। দমকল কর্মীরা জানান, ঘরের ভেতর জমে থাকা গ্যাস থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। এদের ভেতর দুজন পথচারী ও বাকি দুজন বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার পর পুরো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সিলগালা করে দেওয়া হয়। নিহতরা হচ্ছেন, মায়া রানী দাস (৪০), মঙ্গলী রানী দাস (২৫), ঝুমা রানী (১৯) ও তুলসী রানী (৫০)।

ওই দিন দুপুরে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ লিচুবাগান এলাকায় জমে থাকা গ্যাস থেকে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ২ জন বাসিন্দা আহত হন।

১৬ নভেম্বর বিকেলে বন্দরের লক্ষণখোলা এলাকায় একটি তুলার গোডাউনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে আমেনা বেগম (৫৫) নামে এক শ্রমিক দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯ নভেম্বর সকালে বন্দরের ধামগড়ে তুলার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হয়। এতে প্রায় কোটি টাকার তুলো পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হন ৮ জন শ্রমিক। বন্দর, সোনারগাঁ ও মন্ডপাড়ার ৪টি ইউনিট ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ২০ নভেম্বর বিকেলে রূপগঞ্জের রূপসীতে সিটি রাইস মিলে অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হয়। এতে হযরত আলী ও বেলায়েত হোসেন নামে ২ শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। আহত হন আরও একজন।

২৩ নভেম্বর রাতে বন্দরের ধামগড়ে একটি বসতগৃহে অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হয়। এতে টিনশেডের একটি বাড়ি পুরোপুরি পুড়ে যায়। তবে এতে কোনো হতাহত হয়নি।

২৫ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে বিকেলে গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে একটি চারতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ড হয়। এতে ২ গার্মেন্টসকর্মী নিহত হন। এতে আহত হন আরও একজন। নিহতরা হচ্ছেন পারভেজ (২৬) ও মামুন (২৭)। দগ্ধরা সবাই ইপিজেডের একটি কারখানায় চাকরি করতেন।

এসব ঘটনায় শুধু যে প্রাণহানি হচ্ছে তা নয়, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের শিকার ভবনগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মালিক এবং তাঁর আশপাশের বাসিন্দারা। ঘন ঘন আগুনের সংবাদে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়াচ্ছে উদ্বেগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিটি ঘটনার পর ঘটা করে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হলেও তার অধিকাংশ প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না।

একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অগ্নিঝুঁকিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। তাঁদের ফায়ার সেফটি প্ল্যানের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিকাণ্ডে জীবনহানি হতে পারে। আর গ্যাস থেকে যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে সেসব লিকেজ আগে থেকে শনাক্ত করে মেরামত করলে এই ধরনের সমস্যা হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত