পদে পদে প্রতারণার শিকার ভোক্তারা

রাজধানীর পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা শান্তা আলম। এক অনলাইন প্রতিষ্ঠান থেকে গত বছরের জুলাইয়ে একটি ৫০ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি কেনেন। মাত্র তিন মাসের মাথায় টিভিতে সমস্যা দেখা দেয়। পর্দা কাঁপতে থাকে, অস্পষ্ট দেখা যায়। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানকে জানালে মেরামত করতে লোক পাঠানো হয়। প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো লোকটি জানান, টিভিতে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। এ টিভির পরিবর্তে আরেকটি দেওয়ার অনুরোধ করেন শান্তা আলম। কিন্তু তাঁরা কোনো সার্ভিস ওয়ারেন্টি দিচ্ছিলেন না। প্রতিকার পেতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ক্যাব) আবেদন করেন শান্তা।

চিনির দাম কয়েক দফা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণের পরও সে দামে কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণের পর সেই দামে ভোক্তা কিনতে পারছেন না। প্রতিশ্রুত সেবা প্রাপ্তি থেকে ভোক্তা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর নিত্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক দেশই জ্বালানি তেল পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।

এসবের মধ্যেই আজ বুধবার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিরাপদ জ্বালানি, ভোক্তাবান্ধব পৃথিবী’।

দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতি পদে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কখনো পণ্য কিনে, কখনো খাবার কিনে, কখনো সেবা পেতে। পণ্য কিনতে গিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। আবার কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোক্তা আজ প্রতারিত।

তবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানুষ অভিযোগ দায়ের করতে শুরু করেছে। ভোক্তার অধিকারে জাতিসংঘও স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি। এগুলো হচ্ছে মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, তথ্য পাওয়ার অধিকার, নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, পছন্দের অধিকার, জানার অধিকার, অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার, ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার, সুস্থ পরিবেশের অধিকার।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের অভিযোগে ৩৪ হাজার ২৪৮টি মামলা করা হয়েছে। পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করায় ৩২ হাজার ৭৯৩টি, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রির দায়ে ৩২ হাজার ২০৬টি, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় ২৯ হাজার ৫২০টি, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রির অভিযোগে ১৯ হাজার ৭৮৪টি এবং প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা না দেওয়ায় ১০ হাজার ৪০০টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১০৮ কোটি ৮০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানুষের আস্থা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে। আইন প্রয়োগ করতে অধিদপ্তর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ভোক্তার প্রতিটি অভিযোগই আমলে নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য মানুষের আস্থাও দিন দিন বাড়ছে।