Ajker Patrika

নামে থাকলেও কাজে নেই

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২১, ১০: ১১
নামে থাকলেও কাজে নেই

অজ্ঞাত পরিচয়ে প্রায়ই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে এদের শনাক্ত করেন। খোঁজ করে বের করেন আত্মীয়-স্বজনদের। এদের কেউ কেউ হাসপাতালেই মারা যান। কারও কারও আবার লম্বা সময় ধরে চিকিৎসার দরকার হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে অনেকেই ফিরে যান গ্রামের বাড়ি। অথচ এমন রোগীদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি রয়েছে। কিন্তু সেখানে বেশির ভাগ রোগীই সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের ৭০ ভাগের বেশি একেবারে গ্রাম থেকে আসা ও নিম্ন আয়ের পরিবারের। হাসপাতালের সমাজ কল্যাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে গত আড়াই বছরে মাত্র ১২০ জনকে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ১৯৫৯ সালে সংগঠনের যাত্রা শুরুর পর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখান থেকে সেবা নিয়েছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৪ জন। বর্তমানে প্রতিদিন ১৫-২০ জন সেবা নিচ্ছেন সমিতির মাধ্যমে। আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় একজন রোগীকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এখান থেকে।

ঢামেকের ডা. দীপিকা রাণী সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছি না আমরা। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবেই আমরা তা করতে পারছি না।’

সমিতি থেকে সেবা নিয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত মাহফুজ (১৭)। এই কিশোরের মা বলেন, ডাক্তার সেখানে পাঠিয়েছিল, কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। তবে পাশের শয্যাতেই ২০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন অসহায় জনির স্ত্রী মমতাজ এই সেবার কথা জানতে চাইলে বিস্ময় প্রকাশ করেন। কারণ, রোগী কল্যাণ সমিতির নামই তিনি এই প্রথম শুনেছেন।

শুধু ঢামেক নয়, দেশের অন্য হাসপাতালের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি। রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে রোগীদের সহায়তার নাম করে প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র পাল অভিযোগ করে বলেন, প্রায়ই স্থানীয় প্রভাবশালীরা রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে ওষুধ ও চিকিৎসার কথা বলে টাকা নেন। পরে সেগুলো বাইরে বিক্রি করে দেন।

কুমিল্লার বেশ কিছু হাসপাতালে লোকবলসংকট নিয়েই চলছে সমিতির কার্যক্রম। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে এ সংকট আরও তীব্র। স্থানীয় রোগীদের অভিযোগ, রোগী কল্যাণের টাকা পেতে এখানে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যে কারণে অনেকেই সমিতিতে আসেন না।

সার্বিক বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম) মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, ‘আমরা এখনো সেইভাবে প্রচারণা চালাতে পারিনি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সেবা সম্পর্কে জানাতে টেলিভিশনসহ অন্যান্য সব মাধ্যমে প্রচাররের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জনবলসংকট ধীরে ধীরে দূর করা হবে। অর্থ বরাদ্দের বিষয়টিও সমাধান করা হবে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত অর্থবছরে ১ হাজার ৯২০ জন রোগীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অর্থ ছাড়া সামাজিক সহায়তা পেয়েছে ৯ হাজার ৮২৯ জন। করোনাকালে সমিতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

রামেক রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তহবিল-সংকটের কারণে চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।’

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিকিৎসা ও প্রবেশন) লামিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘বিত্তবানদের দান-জাকাতের টাকায় চলে সমিতির কার্যক্রম। সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। ভালোভাবে চালাতে হলে বরাদ্দ লাগবে।’

সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে সারা দেশের ৫২৫টি সমিতির মাধ্যমে ৫ লাখ ৯১ হাজার ২৫৬ জনকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ওষুধ-পথ্য, যাতায়াত ভাড়া, রক্ত, পরীক্ষাসহ বিভিন্নভাবে তাঁদের চিকিৎসায় ব্যয় করা হয়েছে ১৮ কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার ১৬২ টাকা। সামাজিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি মানুষকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিব

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত