Ajker Patrika

ইফতারসামগ্রীর মূল্য দ্বিগুণ

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৩৬
ইফতারসামগ্রীর মূল্য দ্বিগুণ

মাগুরায় এক সপ্তাহ আগে পাকা কলার হালি ছিল ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা। রোজার একদিন আগে গতকাল শনিবার সেই কলার হালি ১৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়েছে। শসার দামও ৩০ টাকা কেজি থেকে হয়েছে ৬০ টাকা। হঠাৎ করেই ইফতারসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় বাজারে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

গতকাল শনিবার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আবদুল বাতেন মাগুরার নতুন বাজারে আসেন ইফতার সামগ্রী কেনাকাটার জন্য। কিন্তু এসে দেখেন সবকিছুর দাম বাড়তি। এ সময় তিনি ক্ষোভ নিয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারে এসে দেখি সব জিনিসের দাম দ্বিগুণ। অথচ কেউ কোনো প্রতিবাদ করছে না। এ কেমন কথা! এভাবে দাম বেড়ে গেলে আমরা ইফতার করব কি দিয়ে!’

রমজান মাস শুরু হচ্ছে আজ রোববার থেকে সে লক্ষ্যে মাগুরা সদরের পুরোনো ও নতুন বড় দুই বাজারে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। বিশেষ করে পুরোনো বাজারে সবজি বাজার থেকে শুরু করে মাছের বাজার ছিল সরগম।

এই বাজারে লেবু কিনছিলেন সকিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘যে লেবু কিনছি তাতে রস কতটুকু হবে জানি না। তবে আমার সন্তানেরা বলেছে বাজার থেকে লেবু নিয়ে আসবে। লেবুর শরবত ছাড়া ইফতার নাকি ভালো হয় না। তাই লেবু কিনছি। তবে চারটি লেবু যেখানে গত সপ্তাহে ২০ টাকায় কিনেছি সেখানে আজ ৫০ টাকা নিচ্ছে।’

সকিনা বেগম আরও বলেন, ‘লেবুর সঙ্গে বাড়িতে বেগুনের তৈরি চপ খুব প্রিয় আমার বড় মেয়ের। সেই বেগুন মাত্র দু-একজন বিক্রেতার কাছে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিকেজি ৮০ টাকা। ৩০ টাকার বেগুন সাত দিনের ব্যবধানে এতটা হয় কি করে বুঝতে পারলাম না। বাজার নিয়ন্ত্রণ কে করে জানি না। তবে এটাতো খুবই কষ্টদায়ক। আমাদের মতো হিসেব করে সংসার চালায় যারা।’

নতুন বাজারে কলা, বাঙ্গি, পাকা পেঁপেসহ খেজুর বিক্রেতা আকরাম মোল্লা জানান, ‘কলার দাম আকাশ ছোঁয়া। প্রতি রমজানে এটা হয়। আমি পাইকারি কিনি মেহেরপুর, ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর থেকে। সেখানে এতটা দাম বেশি যে ক্রেতাদের কাছে সামান্য লাভে বিক্রি করলেও নিজের আসা যাওয়ার খরচ ওঠানো যাচ্ছে না। রোজার রেখে মানুষ এই ফলগুলোই খায়। অথচ আমি বিক্রি করতে পারি না কম দামে। এর কারণ যারা বড় ব্যবসায়ী তারা দাম বাড়িয়ে দেয় এই রোজাকে অজুহাত করে। সেখানে আমার কিছুই করার নেই।’

শনিবার জেলার আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সৌদি খেজুর ২৫০ টাকার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। পাকা পেঁপে আকার বুঝে ৭০-১২০ টাকায়, ছোলার বেসন ১১০ টাকা কেজি ও বুটের ডালের বেসন ৭০ টাকায় যা এক সপ্তাহ আগে কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা কম ছিল।

এ ছাড়া কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি থেকে ১০০ টাকা। দাম বেড়েছে পেঁয়াজের, কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়ে এখন ৫৫-৬০ টাকায়। কাগুজে লেবুর পাইকারি মূল্য হালি ৩০ টাকা তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।

একতা পাইকারি বাজারের বিক্রেতারা জানান, ‘রমজান মাসে টুকটাক এসব পণ্যর দাম বাড়ে। এটা হয় চাহিদা বেড়ে যাওয়ার জন্য। তবে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারের দামের এত তারতম্য ঘটে যে ক্রেতারা সঠিক দামে কিনতে পারেন না।’

রমজান মাস উপলক্ষে রোজায় ব্যবহৃত পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আলাদা সতর্কতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাগুরা ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা মামুন হোসেন। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা যা কেনেন তা যদি মনে হয় তাঁরা ঠকছেন তবে আমাদের জানাতে পারেন। তা রমজান মাস হোক আর সারা বছরই হোক। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।’

মামুন হোসেন আরও বলেন, ‘এ ছাড়া রোজার সময় আমরা বাজার নিয়মিত পরিদর্শন করব। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাজারে অভিযান চালিয়েছি। অন্যান্য বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে মাগুরার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। বেশি দামে বিক্রি করলে বা এ ধরনের প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হচ্ছে।’

মাগুরা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মুঠোফোনে আজকের পত্রিকাকে জানান, কিছু দ্রব্য যা রোজার সময়ে ব্যবহার বেশি হয় সেগুলোর দামে অসংগতি আছে। তা প্রতিবেদন আকারে তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোজার নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হলেই ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত