Ajker Patrika

পান্নার সঙ্গে ‘রসিকতা’

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

একটু ভেবে দেখুন, গত ১৯ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বর্ষীয়ান আইনজীবী জেড আই খান পান্না ছুটে চলেছেন একজন আন্দোলনকারী আহাদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করার জন্য! তিনি বীর বিক্রমে মারধর করছেন আহাদুলকে! ভাবা যায়! 

আহাদুলকে গুলি করা হয়, মারধর করা হয় বলে অভিযোগে প্রকাশ। অর্থাৎ, তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। এই হত্যাচেষ্টাকারীদের নামে ১৭ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় মামলা করেছেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের। ওই মামলায় ১৮০ জন আসামির নাম আছে, যার ৯৪ নম্বরে আছে জেড আই খান পান্নার নাম। এই সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর জেড আই খান পান্নাকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। 

ক্ষমতার পালাবদলের পর এমন অনেক মামলাই হয়েছে, যেগুলোর কোনো মেরিট নেই। একসঙ্গে এক-দেড় শ বা ততোধিক মানুষের নামে মামলা করা হয়েছে। কেউ কেউ মামলা করেই অভিযুক্তদের ফোন করেছেন, ‘মালপানি’ খরচ করলেই মামলা থেকে নাম উঠিয়ে নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। অর্থাৎ, একধরনের মামলা-বাণিজ্য চলছে।

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য মামলা করার ঐতিহ্য বহাল রয়েছে। এ রকম অবিশ্বাস্য মামলার ভিড়ে হঠাৎ করে জেড আই খান পান্নার নামটি যুক্ত হওয়ায় অনেকে চমকে উঠেছেন। তবে পত্রিকার খবরের ওপর আস্থা রাখলে বলা যায়, এটা কোনো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা নয়, অতি উৎসাহী মানুষের কূট ভাবনার ফসল। হত্যাচেষ্টার মামলায় হাইকোর্ট থেকে এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আগাম জামিন পেয়েছেন। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, মামলার বাদী রাজধানীর খিলগাঁও থানায় জেড আই খান পান্নার নামটি এজাহার থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ওই এজাহারের ৯৪ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে (৬৫) অজ্ঞতা ও ভুলবশত আসামি করা হয়। ৯৪ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার আবেদন করছি।’ 

এই আবেদনের ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠবে। বাকি ১৭৯ জনের মধ্যে আর কারও নাম ‘অজ্ঞতা’ ও ‘ভুলবশত’ এজাহারে রয়ে গেছে কি না, তা কি মামলার বাদী হলফ করে বলতে পারবেন? জেড আই খান পান্না নিজেই অনুসন্ধান করে জেনেছেন, এই মামলার পেছনে রয়েছে মূলত বরিশালের মুলাদী নামক স্থানের ‘লোকাল পলিটিকস’। শেষ পর্যন্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন আইনজীবী ‘লোকাল পলিটিকসের’ শিকার হলেন! 

আমাদের দেশে ক্ষমতায় থাকা যেকোনো দল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ভূরি ভূরি মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীর জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। বিগত সরকারের সময়েও সে রকম গায়েবি মামলা কম হয়নি। রাষ্ট্র সংস্কারের ব্রত নিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকার এই কু-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে, সেটাই কাম্য। বাক্‌স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে যেকোনো দেশে যেকোনো সময় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে—এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত