বাড়তি ব্যয়ের চাপে পোশাক খাত

পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় পোশাক খাত চাপে আছে জানিয়ে বলেছেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিয়েও লোকসান কমানো যাচ্ছে না। কাঁচামাল ও শিপিং খরচ বাড়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তিনি গতকাল রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির ‘বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ সুরক্ষা’ শীর্ষক সংলাপে এ তথ্য জানান। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

বিজিএমইএ সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘কেউ শিপিং খরচ নিয়ে কথা বলেন না। সেখানে একচেটিয়া ব্যবসা চলছে। এ সময় তিনি পোশাক খাতে সবুজ কারখানায় বিনিয়োগ বাড়ানোর ফলে সাফল্যের নানান চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ১৫৭টি গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়েছে। তার মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। প্রতি মাসে গ্রিন হিসেবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে চাই। আমরাও দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে চাই। কোনো দুর্ঘটনা হলেই গার্মেন্টসের নাম আগে উচ্চারিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু সমালোচনা না করে ভালো কাজগুলো ফোকাস করাও জরুরি। তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশে সবুজ কারখানায় বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে। এর ফলে এখানে অনেক গ্রিন কারখানা হয়েছে। নিজ উদ্যোগেই উদ্যোক্তারা এসব করেছেন। অথচ এর জন্য কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাওয়া যায় না। ইটিপি স্থাপনে বিদেশ থেকে কেমিক্যাল আমদানি করতে হয় শুল্ক দিয়ে। এ সময় বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হকসহ অন্যরাও বিনিয়োগ করে পণ্যের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

তাঁরা বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনার খরচ বেশি। ক্রেতা-বায়াররা কর্মপরিবেশের মানোন্নয়নের কথা বলেন; কিন্তু বাড়তি দাম দিতে চান না। তা ছাড়া, সরকারের নীতিসহায়তাও সবুজ শিল্পায়নবান্ধব নয়। তাঁরা বলেন, বেসরকারি খাতের পোশাকমালিকেরা নিজ উদ্যোগে, বড় বিনিয়োগে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তুললেও তা লাভজনক করা যাচ্ছে না। তাঁরা জানান, অনেক ক্রেতাই পোশাকের ন্যায্যমূল্য দিতে গড়িমসি করছেন।

মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক খাতের অবস্থান আরও ভালো করতে হলে পরিবেশবান্ধব কারখানায় আরও বিনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের জীবনমানের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ দেন তিনি। তবে সবুজায়নের পথে পর্যাপ্ত নীতি ও বিনিয়োগ, অর্থ স্বল্পতাসহ বেশ কিছু কারণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে মনে করে সিপিডি।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে নীতিসহায়তা ও অর্থনৈতিক সহায়ক পণ্যগুলো পর্যাপ্ত নয়। সবুজায়নের পথে কারখানা আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতার জন্য বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলোর সে সক্ষমতা সীমিত। তা ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে পোশাকের দাম না বাড়ায় খাতটির উদ্যোক্তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না। তবে পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে বড় বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

সংলাপে সিপিডি জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ নিয়োজিত। বছরে এখান থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি। তাই খাতটিকে টেকসই করে এর মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের মনোযোগ প্রত্যাশা করেন সংলাপে অংশ নেওয়া আলোচকেরা।