Ajker Patrika

পশু পালনে নাভিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খামার

শিপুল ইসলাম, রংপুর
Thumbnail image

রংপুরে হু হু করে বাড়ছে গোখাদ্যের দাম। এমন অবস্থায় পশুপালন করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে কৃষক ও খামারিদের। অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের আট উপজেলায় গরুর মোট খামার রয়েছে ১ হাজার ৬৮৮টি। এ ছাড়া কৃষকের ঘরে গৃহপালিত প্রায় ১০ 
লাখ গরু আছে।

জেলার বিভিন্ন বাজারের সাতজন গোখাদ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি গমের ভুসিতে ১০ টাকা, বুটের খোসায় ৮, চালের খুদে ৪, দানাদার ফিডে ৬ ও ধানের কুঁড়ায় ২ টাকা দাম বেড়েছে।

বর্তমানে প্রতি বস্তা ভুসি (৩৭ কেজি) ২ হাজার ২৫০ টাকা, বুটের খোসা (২৫ কেজি) ১ হাজার ৪৫০, চালের খুদ (৫০ কেজি) ১ হাজার ৭০০, দানাদার ফিড (২৫ কেজি) ১ হাজার ৩০০ ও ধানের কুঁড়া (৩৫ কেজি) ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন বছরে প্রতি কেজি গমের ভুসিতে ২৮ টাকা, বুটের খোসায় ২০, চালের খুদে ১৮, দানাদার ফিডে ২০ ও ধানের কুঁড়ায় ৫ টাকা বেড়েছে।

পশুপালনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খড় ও ঘাসের পাশাপাশি গরু ও ছাগলকে এসব খাদ্য খাওয়ানো হয়। এগুলোর দাম দফায় দফা বৃদ্ধি পেলেও দুধের দাম বাড়ছে না। এমন অবস্থায় লোকসান দিয়ে অনেকে খামার চালাচ্ছেন।

রংপুর নগরীর খাসবাগ এলাকায় ৮০টি গরু পালন করা খামারি শাহাদাত ইসলাম জানান, বছরে অন্তত তিন দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু দুধের দাম দু-তিন বছরে একবার বাড়ে। নতুন বছরে ফের ফিড, ভুসি, বুটের খোসা ও খুদের দাম বেড়েছে। গাভিকে খড়ের পাশাপাশি এগুলো না খাওয়ালে শরীর ভালো থাকে না, দুধ কম হয়।

শাহাদাত বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ, কিন্তু দুধ বিক্রি করে পাই ১৮ হাজার টাকা। বর্তমানে গাভির খামার করে তেমন লাভ নেই, বরং লোকসানই হচ্ছে।’

তারাগঞ্জ উপজেলার খামারি হামিদুল হক বলেন, ‘গোখাদ্যের যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে আর কুলাতে পারছি না। ইতিমধ্যে খামারের অর্ধেক গরু বিক্রি করেছি। বাকিগুলোও বিক্রি করে দেব ভাবছি। লোকসান দিয়ে তো আর খামার করতে পারি না।’

বর্তমান অবস্থায় খামারিদের বাঁচাতে হলে দুধের দাম বাড়ানো, গোখাদ্যে ভর্তুকি, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে খামারি পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি, নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ, গোখাদ্যের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিচার ও ভেজাল খাদ্য রোধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানান রংপুর ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম বাড়ায় ছোট ও মাঝারি খামারিরা বিপাকে রয়েছেন। তাঁদের আমরা দানাদার খাবারের বিকল্পের পরামর্শ দিচ্ছি। গাভিকে খড়ের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস বেশি খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া সমবায়ের ভিত্তিতে খামার গড়ার জন্য খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটি করলে খরচ কমবে, লাভ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত