Ajker Patrika

ঋণের কিস্তি শিথিলের পক্ষে ব্যাংকাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১৫
Thumbnail image

খেলাপি ঋণ কম দেখাতে প্রণোদনাসহ সব ঋণের কিস্তি আদায়ে শিথিলের পক্ষে ব্যাংকাররা। তাঁরা মনে করেন, কিস্তি শিথিল করা হলে ঋণ খেলাপি হবে না। তা ছাড়া, বড়রা খেলাপি হলে ঋণ আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। তখন অর্থ ফেরত পাওয়াটা জটিল হয়ে পড়ে এবং তা সময়সাপেক্ষ বিষয়ে পরিণত হয়। আদালতে গেলে ঋণগ্রহীতারা কিস্তি বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংক অর্থসংকটে পড়ে। গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী কিস্তি আদায়ে শিথিলতার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে এসব বিষয় নিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরাও এ তথ্য জানান।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘ব্যাংকের ব্যবসাই হলো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা। আর বড় গ্রাহকেরা ব্যাংকের জন্য বেশি ঝুঁকির। তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে বড় গ্রাহকদের কাছ থেকেই ব্যাংকের মুনাফার বড় একটি অংশ অর্জন হয়।’

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ করে কিছু ঋণ পুনঃ তফসিল করেছিল। গ্রাহকেরা এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ঋণ সমন্বয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা করোনায় তা পারেননি। এখন ওইসব ঋণে সুবিধা প্রদান করা না হলে তা বিরুপমানে শ্রেণীকৃত হবে। এসব ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুযোগ প্রয়োজন।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, অনেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করেননি। তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত কামনা করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ মুহূর্তে ব্যাংকের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো শীর্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায় করা। শীর্ষ তিন গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়লে ন্যূনতম মূলধন সক্ষমতা (সিআরআর) হারাবে ১৬টি ব্যাংক। দেশে এমনও ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ৩০-৩৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে। এমনকি ১০০ প্রতিষ্ঠানের হাতেই ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ কেন্দ্রীভূত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বড় গ্রাহকদের ঋণ নিয়মিত রাখার স্বার্থে তদবির করেন। তাঁরা ঋণ নিয়মিত দেখানোর জন্য নীতিনৈতিকতার তোয়াক্কা না করেই গ্রাহকদের অবারিত সুযোগ দেন। নতুন ঋণ দিয়ে পুরোনো ঋণের সুদ আদায় দেখান।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোয় আমানত রাখা গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৫ লাখ। বিপুল সংখ্যার এ গ্রাহক ব্যাংকগুলোতে মোট ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার আমানত রেখেছেন। এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া হিসাবের সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বড় গ্রাহকেরা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় ঝুঁকি। পর্যাপ্ত জামানত নিয়ে নীতিনৈতিকতার মধ্যে থেকে বড় গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া উচিত। বড় একজন গ্রাহক খেলাপি হলে ব্যাংকের যে ঝুঁকি তৈরি হয়, ছোট ১০০ জন গ্রাহক খেলাপি হলেও সে ঝুঁকি তৈরি হয় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত