Ajker Patrika

বাঁধের কাজ শেষ না হতেই ধস

লোকমান হাকিম, মহেশখালী (কক্সবাজার)
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ০৯: ২৮
বাঁধের কাজ শেষ না হতেই ধস

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ির পশ্চিমে সাগরঘেঁষা ষাইটপাড়ার সংস্কার করা বেড়িবাঁধের জিওব্যাগ জোয়ারে ভেসে গেছে। বাঁধের ১০টি অংশ এরই মধ্যে ধসে বিলীন হয়ে গেছে সাগরে। নির্দিষ্ট ১০ মিটারের স্থলে ৮-৯ মিটারেই কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান; তাও আঁকাবাঁকা। এর ওপর সংস্কার করা বাঁধের কোনো কোনো অংশে মাটি নেই। যেটুকু আছে সেখানেই সৃষ্টি হয়েছে ফাটল।

সংস্কারকাজ শেষ না হতেই পুনরায় বাঁধ ভেঙে পড়ায় মাতারবাড়ির মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হয়নি।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ির ষাইটপাড়া সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পাউবো। ৮০০ মিটার এ বাঁধ সংস্কারের জন্য ৮ প্যাকেজের মাধ্যমে এলাকা নির্ধারণ করে ঠিকাদারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আগামী জুন মাসে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

দেখা যায়, সংস্কার করা ৮০০ মিটার বাঁধের এক ঠিকাদারের কাজের সঙ্গে অন্য ঠিকাদারের কাজে মিল নেই। আঁকাবাঁকা বাঁধ নির্মাণ, কোনো কোনো অংশে মাটি নেই, জিওব্যাগে ফাটল সৃষ্টিসহ নানা অনিয়ম চোখে পড়ার মতো। শর্ত অনুয়ায়ী, বাঁধের প্রস্থ ১০ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও ৮ থেকে ৯ মিটার কাজ করেই ১০ মিটার বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ৯ মিটার বাঁধে কোনো জিওব্যাগ বসানো হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে গেল বছরের মতো পুনরায় প্লাবিত হতে পারে পুরো মাতারবাড়ি। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে এখানকার বাসিন্দারা।

বাঁধে বসবাসকারী আবদুল মালেক নামের এক জেলে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নকশা অনুয়ায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে না। বাঁধের বিভিন্ন অংশে মাটি কম দিয়েছে। পাশাপাশি বসতভিটা থেকে মাটি নেওয়ায় বর্ষায় ওই এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এভাবে চললে অস্তিত্ব-সংকটে পড়বে মাতারবাড়ির মানুষ।’

পারভীন আক্তার বলেন, ‘এখনো বর্ষা আসেনি। কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমরা এ বাঁধে বসতি গেড়ে বাস করি। অন্যত্র যাওয়ার জায়গা নেই। তিন সন্তান নিয়ে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে কাটাচ্ছি।’

স্থানীয় মুজাম্মেল হক বলেন, ‘বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেড়িবাঁধ ঘেঁষে বালু উত্তোলন করেছে। এ কারণে আবারও ধসে পড়েছে। আমাদের শঙ্কা কাটছে না।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ষাইটপাড়ার এ বাঁধ ভেঙে বিগত কয়েক বছরে শতাধিক পরিবার বসতি হারিয়েছে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকের ঠাঁই হয়েছে আত্মীয়ের বাসায়।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্যসচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছরই দেখি উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ আর সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু বর্ষা এলেই জোয়ারে বাঁধগুলো বিলীন হয়ে যায়। এটা উপকূলের মানুষের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। যেসব ঠিকাদার এসব অনিয়মে জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

এ ব্যাপারে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার বলেন, ‘সংস্কার করা বেড়িবাঁধ টেকসই হওয়া দরকার। না হলে মাতারবাড়িকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ‘মাতারবাড়িতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নকশা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের রক্ষায় বর্তমানে জিওব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। পানির তোড়ে যেসব অংশে ভেঙে গেছে, সেটির দ্রুত সমাধান করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত