Ajker Patrika

কাঞ্চননগরের লাল পেয়ারা

কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১১: ৪৪
কাঞ্চননগরের লাল পেয়ারা

পটিয়ার পাহাড়জুড়ে এখন শুধু পেয়ারা আর পেয়ারা! দেশেই নয়, এ পেয়ারার কদর রয়েছে বিদেশেও। কেলিশহরের কাজী পেয়ারা ও কাঞ্চননগরের পেয়ারায় ছেয়ে গেছে বাজার। এই পেয়ারা একটানা পাওয়া যাবে অক্টোবরের শেষে পর্যন্ত। প্রতিদিন শত শত টন পেয়ারা পাড়ার পরও শুধু হিমাগারের অভাবে গাছেই নষ্ট হচ্ছে এর দুই-তৃতীয়াংশ। এ নিয়ে স্থানীয় পেয়ারাচাষিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

সরেজমিনে কেলিশহর, পটিয়া রেলস্টেশন, কমলমুন্সির হাট ও রৌশন হাটের পেয়ারার বাজার ঘুরে দেখা যায়, লালসালু কাপড়ে বাঁধা ভাঁড়ে পেয়ারার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। আর সেই পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। একেকটি ভাঁড়ে পেয়ারা থাকে দুই থেকে আড়াই শটি। এ দাম শেষ পর্যন্ত থাকলে চাষিরা লাভবান হবেন বলে জানান বিক্রেতারা। তবে সবাই ভয় পাচ্ছেন অকালবৃষ্টিকে।

পেয়ারাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে দুই জাতের পেয়ারা রয়েছে। একটি কাজী পেয়ারা অন্যটি কাঞ্চননগরী পেয়ারা। কাজী পেয়ারা আকারে বড় হলেও স্বাদ একটু কম। আর কাঞ্চননগরের পেয়ারা আকারে ছোট হলেও স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর।

পটিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পটিয়ার গহিন বনে দুই থেকে তিন শ পেয়ারার বাগান গড়ে উঠেছে। তা ছাড়া পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতেও পেয়ারার চাষ হচ্ছে। এখানকার চাষিরা পেয়ারা চাষ করে অনেকেই ঘুচিয়েছেন বেকারত্বের অভিশাপ।

পেয়ারার পাইকারি ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন জানান, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে পটিয়ার পেয়ারার কদর। সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশে পেয়ারা রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান কামাল উদ্দিন।

পেয়ারাচাষিরা জানান, মিষ্টি বেশি, বিচির সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় এসব পেয়ারার কদর বেশি। এ ছাড়া চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফল আহরণ পর্যন্ত তেমন একটা রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না।

পটিয়া ছাড়াও চন্দনাইশের পাহাড়ে প্রায় সাড়ে ১ হাজার ২০০ একর জমিতে পেয়ারার চাষ করা হয়। যেসব বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছ থেকে ১৪ বা ১৫ ভাঁড় করে পেয়ারা পাওয়া যায়, সেসব বাগান বছরে দুবার পরিষ্কার করাসহ শ্রমিক ও ওষুধ বাবদ খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে বাগান থেকে প্রতিবছর আয় হয় লাখ টাকার মতো। এখানকার অনেক বাগান আবার শহরের আড়তদারেরা বার্ষিক এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা দরে কিনে নেন চাষিদের কাছ থেকে। তখন চাষিরাই বাগানের সবকিছু দেখাশোনা করেন।

অন্যদিকে পেয়ারাচাষিরা তাঁদের বেশ কিছু সমস্যা কথা তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো পেয়ারা বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ও পেয়ারা সংরক্ষণের সুব্যবস্থা না থাকা এবং আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নামমাত্র মূল্যে আগাম পেয়ারা বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া।

এদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা ও তার বাস্তবায়ন। পেয়ারাচাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন এবং উৎপাদিত পেয়ারাকে ঘিরে জুস ইন্ডাস্ট্রি বা ফুড প্রসেসিং জোন গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের ধারণা, এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পেয়ারার জুস, জেলি ও জ্যাম বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত