Ajker Patrika

ভাঙনের ঝুঁকিতে স্কুলভবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১৩: ৫৩
Thumbnail image

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। গত মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে আকস্মিকভাবে নদীতীরের প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশের পাকা সড়কজুড়ে ধসে গিয়ে স্কুল ভবনটি কেঁপে ওঠে। এতে নদীর ভাঙন একেবারে স্কুলভবনটির কিনার পর্যন্ত চলে এসেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড এর চার দিন আগে থেকে সেখানে জরুরিভাবে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে সেখানে ভাঙনরোধে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করছিল। এ কাজ চলমান অবস্থাতেই সেখানে জিও ব্যাগসহ নদী তীর নদীগর্ভে ধসে যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দেরিতে কাজ শুরু পরে ধীর গতি এবং অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে কাজ চলতে থাকায় এখন বিদ্যালয়টি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যদি কাজটি করা হতো তাহলে এ পরিস্থিতি হতো না।

সরেজমিনে গত বুধবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, গত তিন বছর যাবৎ মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন চলছে। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে আলফাডাঙ্গার চারটি ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রামের বাড়িঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। দীর্ঘদিনব্যাপী এসব রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিলেন গ্রামবাসী। সম্প্রতি ভাঙনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় পাউবো সেখানে ১০ জুন হতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করে।

বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির নতুন ভবন তৈরি করা হয় ২০১২ সালে। ৬৫ জন ছাত্রছাত্রী প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। মঙ্গলবার দুপুরে নদীর তীর ভাঙনে বিদ্যালয় ভবনটি কেঁপে উঠে। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে হলেও বিদ্যালয়টি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতা গোলাম রসুল মিয়া জানান, অনেক আশা নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় জমি দিয়েছিলাম। সরকার সেখানে ভবন করেছে। এই বয়সে বিদ্যালয়টি আমার একটি কীর্তি। এখন বিদ্যালয়টি চলে গেলে আমি খুব কষ্ট পাব বলে তিনি কেঁদে দেন ফেলেন। তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই নদীর ভাঙনে আমরা জর্জরিত। আমাদের জমাজমি সব নদীতে তলিয়ে গেছে। নদীর ওপারে চরে জেগে উঠছে সেখানে ঘাস ছাড়া কিছু হয় না।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ আগে যদি তাঁরা কাজ করত তাহলে বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে পড়ত না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিঘ্ন হতো না। এখানে অনেক গাফিলতি রয়েছে। যেখানে একশত শ্রমিক লাগবে সেখানে পাঁচজন দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। বিদ্যালয়টি চলে গেলে চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে এসব শিশুদের। দিনের পর দিন ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে আসলেও শুধু আমাদের আশ্বাসই দেওয়া হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। এলাকাবাসীর দাবি ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।’

ব্যাপারে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজে নিযুক্ত পাউবোর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মেসার্স এআরবি ব্রিকসের মালিকর মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে গত চার দিন ধরে উজান হতে কাজ চলছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে জিও ব্যাগও ধসে যাওয়ার পর সেখানে নতুন করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে।’

কাজের তদারকিতে নিযুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার কর্মকার জানান, বিদ্যালয়ের পাশের ওই জায়গায় পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় ধসে গেছে। এখন সেখানে বালি ভর্তি করে ৬ মিটার লম্বা জিও টিউব ও ১৭৫ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়টি রক্ষা পাবে। গত বুধবার পর্যন্ত সেখানে ৩৩০ মিটার নদী তীরে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ডাম্পিং করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে মধুমতি নদীর ভাঙনরোধে জরুরি কিছু কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। কাজের ধীর গতির অভিযোগটি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, এখনো সেখানে ভাঙন তীব্র হয়নি। মধুখালি ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীতে ভাঙনের মাত্রা একটু বেশি উল্লেখ করে তিনি জানান, মধুমতির এই ভাঙনরোধে সাড়ে সাত কিলোমিটার নদীতীর জুড়ে প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রি-একনেকে পাশ হয়েছে। এখন সেটি বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের অপেক্ষায়। এ প্রকল্পটি একেনেকে পাশ হলে সেখানে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

‘মধ্যমপন্থী’ দল গড়ছেন অভ্যুত্থানের নেতারা, আলোচনায় ইলিশ প্রতীক

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ করল আ.লীগ

লিবিয়ার সৈকতে ২০ জনের গলিত লাশ, সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, বিচার চাইল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত