Ajker Patrika

বিধি ভেঙে ইচ্ছেমতো প্রচার

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩৬
বিধি ভেঙে ইচ্ছেমতো প্রচার

গঙ্গাচড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের জমজমাট প্রচার। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি পালন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রার্থীরা বিধি ভেঙে ইচ্ছেমতো প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ব্যক্তিরা আচরণবিধির প্রতি কোনো তোয়াক্কা করছেন না। রাত ৮টার মধ্যে প্রচার বন্ধ করার কথা থাকলেও এই সময়ের পরে জনসভা শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে।

নিষেধ থাকলেও প্রচারে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহার কোথাও কোথাও দেখা গেছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ির দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। রেস্তোরাঁয় চলছে ভোটারদের খাওয়ানো। মোটরসাইকেল মহড়ার পর দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ ও খাবারের প্যাকেট। কোনো কোনো প্রার্থী জনসভা শেষে খিচুড়ি ও বিরিয়ানি রান্না করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে নির্বাচনী আমেজ। হাটবাজারের চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় করেছিলেন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা। চা-সিগারেটের পাশাপাশি চলে ভোট প্রার্থনা। ইজিবাইকে করে চলছিল মাইকে প্রচার। বিভিন্ন স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে চলতে দেখা গেছে অনেককে।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের মণ্ডলের হাটে কথা হয় মেচনিকুন্ডা গ্রামের মজিবার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট আসায় চা-বিড়ি খাওয়ার খরচ কমেছে। হাটোত আসলে কায় যে কাক ডাকে চা খিলায় তার দিশা নাই। যদি চা না খান তাইলে মন খারাপ করে। মনে করে ভোট তাঁর মার্কাত দিবার নেই। ওই জন্যে হামরা যায় খিলায় তারে খাওছি।’

কোলকোন্দ ইউনিয়নের পিরের হাট এলাকায় অনেক বাড়িতে দেয়ালজুড়ে সাঁটানো হয়েছে প্রার্থীদের পোস্টার। বাবুপাড়া গ্রামের বীরেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘কর্মীরা ছোট ছোট চ্যাংরা, এরা কায়ো নির্বাচনী নীতিমালা বুঝে না। বাধা করলেও জোর করি দেয়ালোত পোস্টার নাগায়।’

ভোরে মাইকের আওয়াজে ঘুম ভাঙে এবং তা রাত ১টা পর্যন্ত বাজতে থাকে বলে জানান মর্নেয়া ইউনিয়নের খলিফাবাজার গ্রামের আবু বক্কর মিয়া। তিনি বলেন, ‘এক প্রার্থীর মাইকিং যাইতে না যাইতে আরেক প্রার্থীর গাড়ি চলি আইসে। তার ওপর গভীর রাইতোত ভোট দেওয়ার কথা কবার জন্য বাড়িও আইসে প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী রাতের বেলা আসি দুই-এক শ টাকাও দিবার চায়। কয়, ভোটটা হামার ওমুক মার্কায় দেন। রাতে ভালো করি ঘুমবারও পাই না। ভোট আসি হইছে যত যন্ত্রণা।’

প্রার্থীদের সঙ্গে যাতে সম্পর্ক খারাপ না হয় সে জন্য গভীর রাতেও সমাবেশে যেতে হয় বলে জানান বেতগাড়ী ইউনিয়নের আনজুর মোড় এলাকার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাইত ১২টা থাকি ১টা পর্যন্ত এই সভা চলে। প্রার্থী, কর্মীরা বাড়িত আসি ডাকে যায়। না যেয়াও পারি না। ওই জন্যে যাওয়া নাগে, ভোটের পরে যেন কারও শত্রু না হই। তা ছাড়া কামাইও আছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. আইনুল হক (চলতি দায়িত্ব) আজকের পত্রিকাকে জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের জেল-জরিমানা করা হবে।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আমরা নির্বাচনী এলাকার ১০৭টি ভোটকেন্দ্র এলাকাসহ সর্বত্র পুলিশি টহল জোরদার করেছি। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উপজেলার সর্বত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।’

দেশে ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ দিন গঙ্গাচড়ার ৯ ইউনিয়নে ভোট হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৫০, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২২ ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত