পাভেল পার্থ

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি। নির্দয়ভাবে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছি। যুদ্ধকে জায়েজ করে উৎপাদন ও সমাজকাঠামোর আর সব বিবাদ আড়াল করে সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই যুদ্ধের ওপর। বাজারে ডিম বা রুটির দাম বাড়ছে। কী কারণ? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গাড়িভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে নাকাল দেশ। কারণ কী? ওই সেই যুদ্ধ। এমনকি নিদারুণ খাদ্যসংকট ও আকালের আওয়াজও ভাসছে চারধারে।
করোনা মহামারিকালে অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ এক চরম খাদ্যহীনতায় পড়বে। কিন্তু পড়েনি। কারা বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ? গ্রামীণ নারীরা। মূলত সব ঝঞ্ঝা কি সংকটে গ্রামীণ নারীই বারবার মজবুত রেখেছে দেশের খাদ্যভিত। যদিও গ্রামীণ নারীর রক্ত-ঘামের কোনো স্বীকৃতি বা মর্যাদা পরিবার, সমাজ, বর্গ, শ্রেণি ও রাষ্ট্রে নেই। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের মধ্যে এখনো দুনিয়াজুড়ে গ্রামীণ নারীই সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে। তবে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে গ্রামীণ নারীর এই ঐতিহাসিক অবদান এখনো অস্বীকৃত। এমনকি গ্রামীণ নারী নিজের মতো করে কৃষিকে এগিয়ে নেবে, খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরে তার সক্রিয় অংশগ্রহণে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রকল্প। নিশ্চিত হয়নি বিশেষ অর্থায়ন কিংবা নীতিমালা। জাতিসংঘ (২০২২) বলছে, নারীকে পুরুষের মতো সুযোগ দিলে কৃষি উৎপাদন ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশ বাড়তে পারে এবং অপুষ্টির হার কমতে পারে ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বৈশ্বিক ময়দানে সর্বত্র গ্রামীণ নারী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই দেখা যায় আজ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষিকাজ থেকে গ্রামীণ নারীর নিদারুণ উচ্ছেদ ঘটছে। জীবিকার প্রয়োজনে নারী আজ শিল্পকারখানার দাস-মজুরে পরিণত হতে বাধ্য হচ্ছে।
করোনা মহামারিকালের ছবি ও ঘটনা আমাদের শরীর ও মনে দাগ রেখে গেছে। মনে আছে, যখন পোশাক কারখানা খোলার কথা বলে গ্রাম থেকে শ্রমিকদের টেনে আনা হলো, আবার ঠেলেঠুলে বাড়িতে পাঠানো হলো। তারপর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল দেশময়। মনে আছে, সেই পরিশ্রান্ত, আশাহীন, নিরানন্দ শ্রমিকের দলে কারা ছিল? পুরুষও ছিল, তবে বেশির ভাগ ছিল নারী, যারা প্রত্যেকেই দারুণ সব সাজানো সংসার আর স্মৃতিময় গ্রাম পেছনে ফেলে গত তিরিশ বছর ধরে এমন একটা টালমাটাল লাইনে দাঁড়িয়েছে। এই কিশোরী, যুব বা মধ্যবয়সী নারীদের মা-নানি-দাদিরা কিন্তু বহুকাল এমন কোনো দমবন্ধ লাইনে দাঁড়াননি। তাঁদেরও অভাব ছিল, হাহাকার ছিল। কিন্তু তাঁরা সামলেছেন, সিনা টান করে বাঁচার একটা লড়াই করেছেন। নিদেনপক্ষে হাঁস-মুরগির ডিম বেচে মেয়ের সেন্ডেল, মাচার কুমড়া বা পাগাড়ের কচু বেঁচে সংসারের নানা খরচ মিটিয়েছেন এই অসাধারণ নারীরাই। অভাব, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কি সামাজিক বঞ্চনা সয়ে এই গ্রামীণ নারীরাই গড়ে তুলেছেন বাংলার মায়াময় ভূগোল।
অতিসাধারণভাবে অনেকেই নারীর কাজ বলতে কৃষিকাজ, গৃহস্থালির কাজ আর কিছু হস্তশিল্প বোঝায়। কিন্তু চিকিৎসা, স্থাপত্য, প্রকৌশল, উদ্ভাবন, সৃজনশীল নির্মাণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই আছে গ্রামীণ নারীর অবিস্মরণীয় ছাপ ও ছন্দ। আমাদের সামনে সব সময় একটা দগদগে পুরুষালি বর্ণবাদী আয়না থাকে বলে আমরা ভুলে যাই গ্রামীণ নারীর কর্মপরিসর, অবদান এবং মহিমা। আমরা তাই স্বীকৃতি কিংবা সম্মানের ময়দান উন্মুক্ত করিনি, বরং জাঁদরেল কায়দায় রুদ্ধ করেছি।
আজ পরিস্থিতি বদলেছে, গ্রামীণ নারী আর আগের সেই পরিধি ও পরিস্থিতিতে নেই। নয়া উদারবাদী করপোরেট দুনিয়ার বিশ্বায়িত বাজারে দাঁড়াতে হয়েছে গ্রামীণ নারীকে। গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন থেকে সম্পূর্ণ উদ্বাস্তু ও বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের গ্রামীণ নারীদের পোশাক কারখানা কিংবা করপোরেট কারখানার নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিতে হচ্ছে কিংবা শহরে এসে নাম-পরিচয় হারিয়ে হতে হচ্ছে ‘কাজের বুয়া’। বুঝলাম এতে উন্নয়ন ঘটছে, জিডিপি বাড়ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এই যে গ্রামীণ নারী গ্রাম ছাড়ছে প্রতিদিন, তাতে আমরা কী হারাচ্ছি তার কি কোনো খতিয়ান আছে? নারী সর্বোপরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে খাদ্যব্যবস্থা থেকে। স্মরণ রাখা জরুরি, নিয়ানডার্থালদের যুগ থেকে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স সব মানুষই যুদ্ধ করে খাদ্যের জন্য। খাদ্যের জন্যই লড়াই, দরবার, যুদ্ধ, সংঘাত, সংহতি। আর আজ গ্রামীণ নারীকে কী নিদারুণ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে তার নিজের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন থেকে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবে গ্রামীণ নারীর মাধ্যমেই বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়েছে।
‘বস্ত্রবালিকা’ নামে পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের একটি প্রামাণ্যচিত্র আছে। ছবিটির মূল চরিত্র নূরজাহান নামে গ্রামের এক কিশোরী, যার নিদারুণ গন্তব্য হয়েছিল পোশাক কারখানা। ছবিটিতে নূরজাহানের বাবা ও তানভীর মোকাম্মেলের কিছু আলাপ আছে। সেখানে তানভীর মোকাম্মেল নূরজাহানের বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, গ্রামে একটা মেয়ে কি কোনো আয় করতে পারে? এর উত্তরে নূরজাহানের বাবা জবাব দেন, গ্রামে মেয়েরা কী আয় করব? ছবিতে এর পরের ধারাভাষ্যটি খুবই গুরুত্ববহ ও রাজনৈতিক। ধারাভাষ্যে বলা হয়, ‘...যেসব নারীর অবধারিত পরিণতি ছিল স্বল্প বেতনে গৃহপরিচারিকা হওয়া, আজ তারা গার্মেন্টসে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দরিদ্র মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে এক বিরাট সুযোগ। এ ছিল এক অনাবিষ্কৃত শ্রমশক্তি। অথচ আগে এই শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য ছিল না।’ আদতেই কি গ্রামে একটি মেয়ের আয়রোজগারের কোনো ব্যবস্থা নেই? নাকি পোশাক কারখানার মতো নয়া করপোরেট খাতে সস্তা শ্রমে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণকে পোক্ত করতে এই ধারাভাষ্য তৈরি হয়েছে? এর মাধ্যমে গ্রামীণ উৎপাদনব্যবস্থা এবং গ্রামীণ রূপান্তরে নারীর ভূমিকা ও অবদানকে কৌশলে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। নারীর ওপর নিপীড়ন আর আড়ালীকরণের এমনতর বৈধতাই গ্রামীণ নারীর অবদানকে ‘অনৈতিহাসিক’ করে রাখছে।
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গ্রামীণ গরিব কৃষক পরিবারের ১৫ থেকে ৪৫ বছরের বাঙালি মুসলিম নারীদের সর্বাধিক অভিবাসন ঘটেছে পোশাক কারখানাগুলোতে। এই উপার্জনকারী নারীরা আজ মিনিপ্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করে, নিজে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে, বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতে যায়, মোবাইল ফোনে বাড়িতে টাকা পাঠায়। পাশাপাশি এই নারীরা তাজরীন কি রানা প্লাজায় অঙ্গার বা থেঁতলে একটি ‘মৃত সংখ্যা’ হয়ে যায়।
গ্রামীণ নারীর কী আছে? আছে পরিচয়, অস্তিত্ব, ইতিহাস, লড়াই, মেধা আর সৃজনশীলতা। বাংলাদেশের ২৩০টি নদী অববাহিকায় যত ধরনের মাটির চুলা আছে, তার হিসাব কি করেছে রাষ্ট্র? এসব মাটির চুলার নির্মাণ ও কারিগরি নিয়ে কি বিস্তর কোনো গবেষণা ও জাতীয় বাজেট বরাদ্দ হয়েছে? গ্রামে গ্রামে নারীর গড়ে তোলা বসতবাড়ি, বাগানগুলোর বিন্যাস ও সজ্জা নিয়ে আমরা কতটুকু ভেবেছি? কিংবা প্রতিনিয়ত কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে গ্রামীণ নানা উপকরণ আবিষ্কার ও ব্যবহারকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিয়েছি? গ্রামীণ নারীর এই মেধা, কারিগরি ও উৎপাদনশীলতাকে মূলধারার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব ছিল। তাতে গ্রামীণ নারীর আয়ক্ষেত্র বাড়ত, উপার্জন বাড়ত, স্থানীয় সম্পদের সৃজনশীল ব্যবহার হতো, ভোক্তা হিসেবে আমরা পরিবেশবান্ধব সাংস্কৃতিক উপকরণ ও উপাদান পেতাম। এই গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের জল-মাটির গন্ধ থাকত।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভিত্তি, যার প্রাথমিক সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পরিবেশে এর ব্যবহার পর্যন্ত সব কাজই করতে হয় নারীদের। নারীরাই প্রাকৃতিক বায়োমাসের সংরক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। গ্রামীণ নারীরা প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যময় রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। প্রাণসম্পদের এক্স-সিট্যু জিনব্যাংকের ব্যবস্থাপকও নারীরা। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ নারীকে বারবার তার আপন সম্পর্ক থেকে উচ্ছেদে তৎপর, দখলে মাতোয়ারা।
পাহাড় থেকে সমতল, দেশ থেকে দুনিয়া—কোথাও গ্রামীণ নারীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা নেই। তার পরও গ্রামীণ নারীর জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবস আছে। ১৯৯৫ সালের ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘গ্রামীণ নারীই ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে আলোকবর্তিকা’। কিন্তু আমরা কী দেখি? আজ গ্রামীণ নারীর চারধারে আমরা বহাল রেখেছি সিনথেটিক সার, বিষ ও বিনাশী বীজের এক বিপজ্জনক কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা। আমাদের শরীর-মজ্জায় মিশছে বিষ। মায়ের দুধেও মিলছে প্লাস্টিক। অথচ এই জাঁদরেল করপোরেট কৃষি উৎপাদনের বিপরীতে নির্ঘুম আছে দেশ-দুনিয়ার গ্রামীণ নারী। ক্ষুধার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো গ্রামীণ নারীর কৃষি ও প্রাকৃতিক খাদ্যব্যবস্থাকে নিরাপদ ও মজুবত করতে আসুন আমরাও দাঁড়াবার সাহস করি।

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি। নির্দয়ভাবে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছি। যুদ্ধকে জায়েজ করে উৎপাদন ও সমাজকাঠামোর আর সব বিবাদ আড়াল করে সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই যুদ্ধের ওপর। বাজারে ডিম বা রুটির দাম বাড়ছে। কী কারণ? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গাড়িভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে নাকাল দেশ। কারণ কী? ওই সেই যুদ্ধ। এমনকি নিদারুণ খাদ্যসংকট ও আকালের আওয়াজও ভাসছে চারধারে।
করোনা মহামারিকালে অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ এক চরম খাদ্যহীনতায় পড়বে। কিন্তু পড়েনি। কারা বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ? গ্রামীণ নারীরা। মূলত সব ঝঞ্ঝা কি সংকটে গ্রামীণ নারীই বারবার মজবুত রেখেছে দেশের খাদ্যভিত। যদিও গ্রামীণ নারীর রক্ত-ঘামের কোনো স্বীকৃতি বা মর্যাদা পরিবার, সমাজ, বর্গ, শ্রেণি ও রাষ্ট্রে নেই। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের মধ্যে এখনো দুনিয়াজুড়ে গ্রামীণ নারীই সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে। তবে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে গ্রামীণ নারীর এই ঐতিহাসিক অবদান এখনো অস্বীকৃত। এমনকি গ্রামীণ নারী নিজের মতো করে কৃষিকে এগিয়ে নেবে, খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরে তার সক্রিয় অংশগ্রহণে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রকল্প। নিশ্চিত হয়নি বিশেষ অর্থায়ন কিংবা নীতিমালা। জাতিসংঘ (২০২২) বলছে, নারীকে পুরুষের মতো সুযোগ দিলে কৃষি উৎপাদন ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশ বাড়তে পারে এবং অপুষ্টির হার কমতে পারে ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বৈশ্বিক ময়দানে সর্বত্র গ্রামীণ নারী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই দেখা যায় আজ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষিকাজ থেকে গ্রামীণ নারীর নিদারুণ উচ্ছেদ ঘটছে। জীবিকার প্রয়োজনে নারী আজ শিল্পকারখানার দাস-মজুরে পরিণত হতে বাধ্য হচ্ছে।
করোনা মহামারিকালের ছবি ও ঘটনা আমাদের শরীর ও মনে দাগ রেখে গেছে। মনে আছে, যখন পোশাক কারখানা খোলার কথা বলে গ্রাম থেকে শ্রমিকদের টেনে আনা হলো, আবার ঠেলেঠুলে বাড়িতে পাঠানো হলো। তারপর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল দেশময়। মনে আছে, সেই পরিশ্রান্ত, আশাহীন, নিরানন্দ শ্রমিকের দলে কারা ছিল? পুরুষও ছিল, তবে বেশির ভাগ ছিল নারী, যারা প্রত্যেকেই দারুণ সব সাজানো সংসার আর স্মৃতিময় গ্রাম পেছনে ফেলে গত তিরিশ বছর ধরে এমন একটা টালমাটাল লাইনে দাঁড়িয়েছে। এই কিশোরী, যুব বা মধ্যবয়সী নারীদের মা-নানি-দাদিরা কিন্তু বহুকাল এমন কোনো দমবন্ধ লাইনে দাঁড়াননি। তাঁদেরও অভাব ছিল, হাহাকার ছিল। কিন্তু তাঁরা সামলেছেন, সিনা টান করে বাঁচার একটা লড়াই করেছেন। নিদেনপক্ষে হাঁস-মুরগির ডিম বেচে মেয়ের সেন্ডেল, মাচার কুমড়া বা পাগাড়ের কচু বেঁচে সংসারের নানা খরচ মিটিয়েছেন এই অসাধারণ নারীরাই। অভাব, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কি সামাজিক বঞ্চনা সয়ে এই গ্রামীণ নারীরাই গড়ে তুলেছেন বাংলার মায়াময় ভূগোল।
অতিসাধারণভাবে অনেকেই নারীর কাজ বলতে কৃষিকাজ, গৃহস্থালির কাজ আর কিছু হস্তশিল্প বোঝায়। কিন্তু চিকিৎসা, স্থাপত্য, প্রকৌশল, উদ্ভাবন, সৃজনশীল নির্মাণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই আছে গ্রামীণ নারীর অবিস্মরণীয় ছাপ ও ছন্দ। আমাদের সামনে সব সময় একটা দগদগে পুরুষালি বর্ণবাদী আয়না থাকে বলে আমরা ভুলে যাই গ্রামীণ নারীর কর্মপরিসর, অবদান এবং মহিমা। আমরা তাই স্বীকৃতি কিংবা সম্মানের ময়দান উন্মুক্ত করিনি, বরং জাঁদরেল কায়দায় রুদ্ধ করেছি।
আজ পরিস্থিতি বদলেছে, গ্রামীণ নারী আর আগের সেই পরিধি ও পরিস্থিতিতে নেই। নয়া উদারবাদী করপোরেট দুনিয়ার বিশ্বায়িত বাজারে দাঁড়াতে হয়েছে গ্রামীণ নারীকে। গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন থেকে সম্পূর্ণ উদ্বাস্তু ও বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের গ্রামীণ নারীদের পোশাক কারখানা কিংবা করপোরেট কারখানার নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিতে হচ্ছে কিংবা শহরে এসে নাম-পরিচয় হারিয়ে হতে হচ্ছে ‘কাজের বুয়া’। বুঝলাম এতে উন্নয়ন ঘটছে, জিডিপি বাড়ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এই যে গ্রামীণ নারী গ্রাম ছাড়ছে প্রতিদিন, তাতে আমরা কী হারাচ্ছি তার কি কোনো খতিয়ান আছে? নারী সর্বোপরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে খাদ্যব্যবস্থা থেকে। স্মরণ রাখা জরুরি, নিয়ানডার্থালদের যুগ থেকে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স সব মানুষই যুদ্ধ করে খাদ্যের জন্য। খাদ্যের জন্যই লড়াই, দরবার, যুদ্ধ, সংঘাত, সংহতি। আর আজ গ্রামীণ নারীকে কী নিদারুণ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে তার নিজের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন থেকে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবে গ্রামীণ নারীর মাধ্যমেই বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়েছে।
‘বস্ত্রবালিকা’ নামে পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের একটি প্রামাণ্যচিত্র আছে। ছবিটির মূল চরিত্র নূরজাহান নামে গ্রামের এক কিশোরী, যার নিদারুণ গন্তব্য হয়েছিল পোশাক কারখানা। ছবিটিতে নূরজাহানের বাবা ও তানভীর মোকাম্মেলের কিছু আলাপ আছে। সেখানে তানভীর মোকাম্মেল নূরজাহানের বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, গ্রামে একটা মেয়ে কি কোনো আয় করতে পারে? এর উত্তরে নূরজাহানের বাবা জবাব দেন, গ্রামে মেয়েরা কী আয় করব? ছবিতে এর পরের ধারাভাষ্যটি খুবই গুরুত্ববহ ও রাজনৈতিক। ধারাভাষ্যে বলা হয়, ‘...যেসব নারীর অবধারিত পরিণতি ছিল স্বল্প বেতনে গৃহপরিচারিকা হওয়া, আজ তারা গার্মেন্টসে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দরিদ্র মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে এক বিরাট সুযোগ। এ ছিল এক অনাবিষ্কৃত শ্রমশক্তি। অথচ আগে এই শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য ছিল না।’ আদতেই কি গ্রামে একটি মেয়ের আয়রোজগারের কোনো ব্যবস্থা নেই? নাকি পোশাক কারখানার মতো নয়া করপোরেট খাতে সস্তা শ্রমে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণকে পোক্ত করতে এই ধারাভাষ্য তৈরি হয়েছে? এর মাধ্যমে গ্রামীণ উৎপাদনব্যবস্থা এবং গ্রামীণ রূপান্তরে নারীর ভূমিকা ও অবদানকে কৌশলে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। নারীর ওপর নিপীড়ন আর আড়ালীকরণের এমনতর বৈধতাই গ্রামীণ নারীর অবদানকে ‘অনৈতিহাসিক’ করে রাখছে।
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গ্রামীণ গরিব কৃষক পরিবারের ১৫ থেকে ৪৫ বছরের বাঙালি মুসলিম নারীদের সর্বাধিক অভিবাসন ঘটেছে পোশাক কারখানাগুলোতে। এই উপার্জনকারী নারীরা আজ মিনিপ্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করে, নিজে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে, বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতে যায়, মোবাইল ফোনে বাড়িতে টাকা পাঠায়। পাশাপাশি এই নারীরা তাজরীন কি রানা প্লাজায় অঙ্গার বা থেঁতলে একটি ‘মৃত সংখ্যা’ হয়ে যায়।
গ্রামীণ নারীর কী আছে? আছে পরিচয়, অস্তিত্ব, ইতিহাস, লড়াই, মেধা আর সৃজনশীলতা। বাংলাদেশের ২৩০টি নদী অববাহিকায় যত ধরনের মাটির চুলা আছে, তার হিসাব কি করেছে রাষ্ট্র? এসব মাটির চুলার নির্মাণ ও কারিগরি নিয়ে কি বিস্তর কোনো গবেষণা ও জাতীয় বাজেট বরাদ্দ হয়েছে? গ্রামে গ্রামে নারীর গড়ে তোলা বসতবাড়ি, বাগানগুলোর বিন্যাস ও সজ্জা নিয়ে আমরা কতটুকু ভেবেছি? কিংবা প্রতিনিয়ত কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে গ্রামীণ নানা উপকরণ আবিষ্কার ও ব্যবহারকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিয়েছি? গ্রামীণ নারীর এই মেধা, কারিগরি ও উৎপাদনশীলতাকে মূলধারার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব ছিল। তাতে গ্রামীণ নারীর আয়ক্ষেত্র বাড়ত, উপার্জন বাড়ত, স্থানীয় সম্পদের সৃজনশীল ব্যবহার হতো, ভোক্তা হিসেবে আমরা পরিবেশবান্ধব সাংস্কৃতিক উপকরণ ও উপাদান পেতাম। এই গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের জল-মাটির গন্ধ থাকত।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভিত্তি, যার প্রাথমিক সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পরিবেশে এর ব্যবহার পর্যন্ত সব কাজই করতে হয় নারীদের। নারীরাই প্রাকৃতিক বায়োমাসের সংরক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। গ্রামীণ নারীরা প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যময় রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। প্রাণসম্পদের এক্স-সিট্যু জিনব্যাংকের ব্যবস্থাপকও নারীরা। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ নারীকে বারবার তার আপন সম্পর্ক থেকে উচ্ছেদে তৎপর, দখলে মাতোয়ারা।
পাহাড় থেকে সমতল, দেশ থেকে দুনিয়া—কোথাও গ্রামীণ নারীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা নেই। তার পরও গ্রামীণ নারীর জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবস আছে। ১৯৯৫ সালের ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘গ্রামীণ নারীই ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে আলোকবর্তিকা’। কিন্তু আমরা কী দেখি? আজ গ্রামীণ নারীর চারধারে আমরা বহাল রেখেছি সিনথেটিক সার, বিষ ও বিনাশী বীজের এক বিপজ্জনক কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা। আমাদের শরীর-মজ্জায় মিশছে বিষ। মায়ের দুধেও মিলছে প্লাস্টিক। অথচ এই জাঁদরেল করপোরেট কৃষি উৎপাদনের বিপরীতে নির্ঘুম আছে দেশ-দুনিয়ার গ্রামীণ নারী। ক্ষুধার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো গ্রামীণ নারীর কৃষি ও প্রাকৃতিক খাদ্যব্যবস্থাকে নিরাপদ ও মজুবত করতে আসুন আমরাও দাঁড়াবার সাহস করি।
পাভেল পার্থ

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি। নির্দয়ভাবে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছি। যুদ্ধকে জায়েজ করে উৎপাদন ও সমাজকাঠামোর আর সব বিবাদ আড়াল করে সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই যুদ্ধের ওপর। বাজারে ডিম বা রুটির দাম বাড়ছে। কী কারণ? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গাড়িভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে নাকাল দেশ। কারণ কী? ওই সেই যুদ্ধ। এমনকি নিদারুণ খাদ্যসংকট ও আকালের আওয়াজও ভাসছে চারধারে।
করোনা মহামারিকালে অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ এক চরম খাদ্যহীনতায় পড়বে। কিন্তু পড়েনি। কারা বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ? গ্রামীণ নারীরা। মূলত সব ঝঞ্ঝা কি সংকটে গ্রামীণ নারীই বারবার মজবুত রেখেছে দেশের খাদ্যভিত। যদিও গ্রামীণ নারীর রক্ত-ঘামের কোনো স্বীকৃতি বা মর্যাদা পরিবার, সমাজ, বর্গ, শ্রেণি ও রাষ্ট্রে নেই। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের মধ্যে এখনো দুনিয়াজুড়ে গ্রামীণ নারীই সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে। তবে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে গ্রামীণ নারীর এই ঐতিহাসিক অবদান এখনো অস্বীকৃত। এমনকি গ্রামীণ নারী নিজের মতো করে কৃষিকে এগিয়ে নেবে, খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরে তার সক্রিয় অংশগ্রহণে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রকল্প। নিশ্চিত হয়নি বিশেষ অর্থায়ন কিংবা নীতিমালা। জাতিসংঘ (২০২২) বলছে, নারীকে পুরুষের মতো সুযোগ দিলে কৃষি উৎপাদন ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশ বাড়তে পারে এবং অপুষ্টির হার কমতে পারে ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বৈশ্বিক ময়দানে সর্বত্র গ্রামীণ নারী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই দেখা যায় আজ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষিকাজ থেকে গ্রামীণ নারীর নিদারুণ উচ্ছেদ ঘটছে। জীবিকার প্রয়োজনে নারী আজ শিল্পকারখানার দাস-মজুরে পরিণত হতে বাধ্য হচ্ছে।
করোনা মহামারিকালের ছবি ও ঘটনা আমাদের শরীর ও মনে দাগ রেখে গেছে। মনে আছে, যখন পোশাক কারখানা খোলার কথা বলে গ্রাম থেকে শ্রমিকদের টেনে আনা হলো, আবার ঠেলেঠুলে বাড়িতে পাঠানো হলো। তারপর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল দেশময়। মনে আছে, সেই পরিশ্রান্ত, আশাহীন, নিরানন্দ শ্রমিকের দলে কারা ছিল? পুরুষও ছিল, তবে বেশির ভাগ ছিল নারী, যারা প্রত্যেকেই দারুণ সব সাজানো সংসার আর স্মৃতিময় গ্রাম পেছনে ফেলে গত তিরিশ বছর ধরে এমন একটা টালমাটাল লাইনে দাঁড়িয়েছে। এই কিশোরী, যুব বা মধ্যবয়সী নারীদের মা-নানি-দাদিরা কিন্তু বহুকাল এমন কোনো দমবন্ধ লাইনে দাঁড়াননি। তাঁদেরও অভাব ছিল, হাহাকার ছিল। কিন্তু তাঁরা সামলেছেন, সিনা টান করে বাঁচার একটা লড়াই করেছেন। নিদেনপক্ষে হাঁস-মুরগির ডিম বেচে মেয়ের সেন্ডেল, মাচার কুমড়া বা পাগাড়ের কচু বেঁচে সংসারের নানা খরচ মিটিয়েছেন এই অসাধারণ নারীরাই। অভাব, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কি সামাজিক বঞ্চনা সয়ে এই গ্রামীণ নারীরাই গড়ে তুলেছেন বাংলার মায়াময় ভূগোল।
অতিসাধারণভাবে অনেকেই নারীর কাজ বলতে কৃষিকাজ, গৃহস্থালির কাজ আর কিছু হস্তশিল্প বোঝায়। কিন্তু চিকিৎসা, স্থাপত্য, প্রকৌশল, উদ্ভাবন, সৃজনশীল নির্মাণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই আছে গ্রামীণ নারীর অবিস্মরণীয় ছাপ ও ছন্দ। আমাদের সামনে সব সময় একটা দগদগে পুরুষালি বর্ণবাদী আয়না থাকে বলে আমরা ভুলে যাই গ্রামীণ নারীর কর্মপরিসর, অবদান এবং মহিমা। আমরা তাই স্বীকৃতি কিংবা সম্মানের ময়দান উন্মুক্ত করিনি, বরং জাঁদরেল কায়দায় রুদ্ধ করেছি।
আজ পরিস্থিতি বদলেছে, গ্রামীণ নারী আর আগের সেই পরিধি ও পরিস্থিতিতে নেই। নয়া উদারবাদী করপোরেট দুনিয়ার বিশ্বায়িত বাজারে দাঁড়াতে হয়েছে গ্রামীণ নারীকে। গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন থেকে সম্পূর্ণ উদ্বাস্তু ও বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের গ্রামীণ নারীদের পোশাক কারখানা কিংবা করপোরেট কারখানার নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিতে হচ্ছে কিংবা শহরে এসে নাম-পরিচয় হারিয়ে হতে হচ্ছে ‘কাজের বুয়া’। বুঝলাম এতে উন্নয়ন ঘটছে, জিডিপি বাড়ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এই যে গ্রামীণ নারী গ্রাম ছাড়ছে প্রতিদিন, তাতে আমরা কী হারাচ্ছি তার কি কোনো খতিয়ান আছে? নারী সর্বোপরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে খাদ্যব্যবস্থা থেকে। স্মরণ রাখা জরুরি, নিয়ানডার্থালদের যুগ থেকে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স সব মানুষই যুদ্ধ করে খাদ্যের জন্য। খাদ্যের জন্যই লড়াই, দরবার, যুদ্ধ, সংঘাত, সংহতি। আর আজ গ্রামীণ নারীকে কী নিদারুণ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে তার নিজের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন থেকে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবে গ্রামীণ নারীর মাধ্যমেই বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়েছে।
‘বস্ত্রবালিকা’ নামে পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের একটি প্রামাণ্যচিত্র আছে। ছবিটির মূল চরিত্র নূরজাহান নামে গ্রামের এক কিশোরী, যার নিদারুণ গন্তব্য হয়েছিল পোশাক কারখানা। ছবিটিতে নূরজাহানের বাবা ও তানভীর মোকাম্মেলের কিছু আলাপ আছে। সেখানে তানভীর মোকাম্মেল নূরজাহানের বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, গ্রামে একটা মেয়ে কি কোনো আয় করতে পারে? এর উত্তরে নূরজাহানের বাবা জবাব দেন, গ্রামে মেয়েরা কী আয় করব? ছবিতে এর পরের ধারাভাষ্যটি খুবই গুরুত্ববহ ও রাজনৈতিক। ধারাভাষ্যে বলা হয়, ‘...যেসব নারীর অবধারিত পরিণতি ছিল স্বল্প বেতনে গৃহপরিচারিকা হওয়া, আজ তারা গার্মেন্টসে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দরিদ্র মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে এক বিরাট সুযোগ। এ ছিল এক অনাবিষ্কৃত শ্রমশক্তি। অথচ আগে এই শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য ছিল না।’ আদতেই কি গ্রামে একটি মেয়ের আয়রোজগারের কোনো ব্যবস্থা নেই? নাকি পোশাক কারখানার মতো নয়া করপোরেট খাতে সস্তা শ্রমে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণকে পোক্ত করতে এই ধারাভাষ্য তৈরি হয়েছে? এর মাধ্যমে গ্রামীণ উৎপাদনব্যবস্থা এবং গ্রামীণ রূপান্তরে নারীর ভূমিকা ও অবদানকে কৌশলে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। নারীর ওপর নিপীড়ন আর আড়ালীকরণের এমনতর বৈধতাই গ্রামীণ নারীর অবদানকে ‘অনৈতিহাসিক’ করে রাখছে।
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গ্রামীণ গরিব কৃষক পরিবারের ১৫ থেকে ৪৫ বছরের বাঙালি মুসলিম নারীদের সর্বাধিক অভিবাসন ঘটেছে পোশাক কারখানাগুলোতে। এই উপার্জনকারী নারীরা আজ মিনিপ্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করে, নিজে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে, বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতে যায়, মোবাইল ফোনে বাড়িতে টাকা পাঠায়। পাশাপাশি এই নারীরা তাজরীন কি রানা প্লাজায় অঙ্গার বা থেঁতলে একটি ‘মৃত সংখ্যা’ হয়ে যায়।
গ্রামীণ নারীর কী আছে? আছে পরিচয়, অস্তিত্ব, ইতিহাস, লড়াই, মেধা আর সৃজনশীলতা। বাংলাদেশের ২৩০টি নদী অববাহিকায় যত ধরনের মাটির চুলা আছে, তার হিসাব কি করেছে রাষ্ট্র? এসব মাটির চুলার নির্মাণ ও কারিগরি নিয়ে কি বিস্তর কোনো গবেষণা ও জাতীয় বাজেট বরাদ্দ হয়েছে? গ্রামে গ্রামে নারীর গড়ে তোলা বসতবাড়ি, বাগানগুলোর বিন্যাস ও সজ্জা নিয়ে আমরা কতটুকু ভেবেছি? কিংবা প্রতিনিয়ত কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে গ্রামীণ নানা উপকরণ আবিষ্কার ও ব্যবহারকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিয়েছি? গ্রামীণ নারীর এই মেধা, কারিগরি ও উৎপাদনশীলতাকে মূলধারার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব ছিল। তাতে গ্রামীণ নারীর আয়ক্ষেত্র বাড়ত, উপার্জন বাড়ত, স্থানীয় সম্পদের সৃজনশীল ব্যবহার হতো, ভোক্তা হিসেবে আমরা পরিবেশবান্ধব সাংস্কৃতিক উপকরণ ও উপাদান পেতাম। এই গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের জল-মাটির গন্ধ থাকত।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভিত্তি, যার প্রাথমিক সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পরিবেশে এর ব্যবহার পর্যন্ত সব কাজই করতে হয় নারীদের। নারীরাই প্রাকৃতিক বায়োমাসের সংরক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। গ্রামীণ নারীরা প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যময় রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। প্রাণসম্পদের এক্স-সিট্যু জিনব্যাংকের ব্যবস্থাপকও নারীরা। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ নারীকে বারবার তার আপন সম্পর্ক থেকে উচ্ছেদে তৎপর, দখলে মাতোয়ারা।
পাহাড় থেকে সমতল, দেশ থেকে দুনিয়া—কোথাও গ্রামীণ নারীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা নেই। তার পরও গ্রামীণ নারীর জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবস আছে। ১৯৯৫ সালের ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘গ্রামীণ নারীই ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে আলোকবর্তিকা’। কিন্তু আমরা কী দেখি? আজ গ্রামীণ নারীর চারধারে আমরা বহাল রেখেছি সিনথেটিক সার, বিষ ও বিনাশী বীজের এক বিপজ্জনক কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা। আমাদের শরীর-মজ্জায় মিশছে বিষ। মায়ের দুধেও মিলছে প্লাস্টিক। অথচ এই জাঁদরেল করপোরেট কৃষি উৎপাদনের বিপরীতে নির্ঘুম আছে দেশ-দুনিয়ার গ্রামীণ নারী। ক্ষুধার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো গ্রামীণ নারীর কৃষি ও প্রাকৃতিক খাদ্যব্যবস্থাকে নিরাপদ ও মজুবত করতে আসুন আমরাও দাঁড়াবার সাহস করি।

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি। নির্দয়ভাবে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছি। যুদ্ধকে জায়েজ করে উৎপাদন ও সমাজকাঠামোর আর সব বিবাদ আড়াল করে সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই যুদ্ধের ওপর। বাজারে ডিম বা রুটির দাম বাড়ছে। কী কারণ? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গাড়িভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে নাকাল দেশ। কারণ কী? ওই সেই যুদ্ধ। এমনকি নিদারুণ খাদ্যসংকট ও আকালের আওয়াজও ভাসছে চারধারে।
করোনা মহামারিকালে অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ এক চরম খাদ্যহীনতায় পড়বে। কিন্তু পড়েনি। কারা বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ? গ্রামীণ নারীরা। মূলত সব ঝঞ্ঝা কি সংকটে গ্রামীণ নারীই বারবার মজবুত রেখেছে দেশের খাদ্যভিত। যদিও গ্রামীণ নারীর রক্ত-ঘামের কোনো স্বীকৃতি বা মর্যাদা পরিবার, সমাজ, বর্গ, শ্রেণি ও রাষ্ট্রে নেই। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের মধ্যে এখনো দুনিয়াজুড়ে গ্রামীণ নারীই সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুধার বিরুদ্ধে। তবে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে গ্রামীণ নারীর এই ঐতিহাসিক অবদান এখনো অস্বীকৃত। এমনকি গ্রামীণ নারী নিজের মতো করে কৃষিকে এগিয়ে নেবে, খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরে তার সক্রিয় অংশগ্রহণে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রকল্প। নিশ্চিত হয়নি বিশেষ অর্থায়ন কিংবা নীতিমালা। জাতিসংঘ (২০২২) বলছে, নারীকে পুরুষের মতো সুযোগ দিলে কৃষি উৎপাদন ২ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশ বাড়তে পারে এবং অপুষ্টির হার কমতে পারে ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা বৈশ্বিক ময়দানে সর্বত্র গ্রামীণ নারী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই দেখা যায় আজ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষিকাজ থেকে গ্রামীণ নারীর নিদারুণ উচ্ছেদ ঘটছে। জীবিকার প্রয়োজনে নারী আজ শিল্পকারখানার দাস-মজুরে পরিণত হতে বাধ্য হচ্ছে।
করোনা মহামারিকালের ছবি ও ঘটনা আমাদের শরীর ও মনে দাগ রেখে গেছে। মনে আছে, যখন পোশাক কারখানা খোলার কথা বলে গ্রাম থেকে শ্রমিকদের টেনে আনা হলো, আবার ঠেলেঠুলে বাড়িতে পাঠানো হলো। তারপর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল দেশময়। মনে আছে, সেই পরিশ্রান্ত, আশাহীন, নিরানন্দ শ্রমিকের দলে কারা ছিল? পুরুষও ছিল, তবে বেশির ভাগ ছিল নারী, যারা প্রত্যেকেই দারুণ সব সাজানো সংসার আর স্মৃতিময় গ্রাম পেছনে ফেলে গত তিরিশ বছর ধরে এমন একটা টালমাটাল লাইনে দাঁড়িয়েছে। এই কিশোরী, যুব বা মধ্যবয়সী নারীদের মা-নানি-দাদিরা কিন্তু বহুকাল এমন কোনো দমবন্ধ লাইনে দাঁড়াননি। তাঁদেরও অভাব ছিল, হাহাকার ছিল। কিন্তু তাঁরা সামলেছেন, সিনা টান করে বাঁচার একটা লড়াই করেছেন। নিদেনপক্ষে হাঁস-মুরগির ডিম বেচে মেয়ের সেন্ডেল, মাচার কুমড়া বা পাগাড়ের কচু বেঁচে সংসারের নানা খরচ মিটিয়েছেন এই অসাধারণ নারীরাই। অভাব, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় কি সামাজিক বঞ্চনা সয়ে এই গ্রামীণ নারীরাই গড়ে তুলেছেন বাংলার মায়াময় ভূগোল।
অতিসাধারণভাবে অনেকেই নারীর কাজ বলতে কৃষিকাজ, গৃহস্থালির কাজ আর কিছু হস্তশিল্প বোঝায়। কিন্তু চিকিৎসা, স্থাপত্য, প্রকৌশল, উদ্ভাবন, সৃজনশীল নির্মাণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ—সব ক্ষেত্রেই আছে গ্রামীণ নারীর অবিস্মরণীয় ছাপ ও ছন্দ। আমাদের সামনে সব সময় একটা দগদগে পুরুষালি বর্ণবাদী আয়না থাকে বলে আমরা ভুলে যাই গ্রামীণ নারীর কর্মপরিসর, অবদান এবং মহিমা। আমরা তাই স্বীকৃতি কিংবা সম্মানের ময়দান উন্মুক্ত করিনি, বরং জাঁদরেল কায়দায় রুদ্ধ করেছি।
আজ পরিস্থিতি বদলেছে, গ্রামীণ নারী আর আগের সেই পরিধি ও পরিস্থিতিতে নেই। নয়া উদারবাদী করপোরেট দুনিয়ার বিশ্বায়িত বাজারে দাঁড়াতে হয়েছে গ্রামীণ নারীকে। গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন থেকে সম্পূর্ণ উদ্বাস্তু ও বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের গ্রামীণ নারীদের পোশাক কারখানা কিংবা করপোরেট কারখানার নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বেছে নিতে হচ্ছে কিংবা শহরে এসে নাম-পরিচয় হারিয়ে হতে হচ্ছে ‘কাজের বুয়া’। বুঝলাম এতে উন্নয়ন ঘটছে, জিডিপি বাড়ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এই যে গ্রামীণ নারী গ্রাম ছাড়ছে প্রতিদিন, তাতে আমরা কী হারাচ্ছি তার কি কোনো খতিয়ান আছে? নারী সর্বোপরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে খাদ্যব্যবস্থা থেকে। স্মরণ রাখা জরুরি, নিয়ানডার্থালদের যুগ থেকে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স সব মানুষই যুদ্ধ করে খাদ্যের জন্য। খাদ্যের জন্যই লড়াই, দরবার, যুদ্ধ, সংঘাত, সংহতি। আর আজ গ্রামীণ নারীকে কী নিদারুণ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে তার নিজের আবিষ্কার ও উদ্ভাবন থেকে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবে গ্রামীণ নারীর মাধ্যমেই বিকশিত ও রূপান্তরিত হয়েছে।
‘বস্ত্রবালিকা’ নামে পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের একটি প্রামাণ্যচিত্র আছে। ছবিটির মূল চরিত্র নূরজাহান নামে গ্রামের এক কিশোরী, যার নিদারুণ গন্তব্য হয়েছিল পোশাক কারখানা। ছবিটিতে নূরজাহানের বাবা ও তানভীর মোকাম্মেলের কিছু আলাপ আছে। সেখানে তানভীর মোকাম্মেল নূরজাহানের বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, গ্রামে একটা মেয়ে কি কোনো আয় করতে পারে? এর উত্তরে নূরজাহানের বাবা জবাব দেন, গ্রামে মেয়েরা কী আয় করব? ছবিতে এর পরের ধারাভাষ্যটি খুবই গুরুত্ববহ ও রাজনৈতিক। ধারাভাষ্যে বলা হয়, ‘...যেসব নারীর অবধারিত পরিণতি ছিল স্বল্প বেতনে গৃহপরিচারিকা হওয়া, আজ তারা গার্মেন্টসে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প দরিদ্র মেয়েদের জন্য নিয়ে এসেছে এক বিরাট সুযোগ। এ ছিল এক অনাবিষ্কৃত শ্রমশক্তি। অথচ আগে এই শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য ছিল না।’ আদতেই কি গ্রামে একটি মেয়ের আয়রোজগারের কোনো ব্যবস্থা নেই? নাকি পোশাক কারখানার মতো নয়া করপোরেট খাতে সস্তা শ্রমে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণকে পোক্ত করতে এই ধারাভাষ্য তৈরি হয়েছে? এর মাধ্যমে গ্রামীণ উৎপাদনব্যবস্থা এবং গ্রামীণ রূপান্তরে নারীর ভূমিকা ও অবদানকে কৌশলে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। নারীর ওপর নিপীড়ন আর আড়ালীকরণের এমনতর বৈধতাই গ্রামীণ নারীর অবদানকে ‘অনৈতিহাসিক’ করে রাখছে।
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের গ্রামীণ গরিব কৃষক পরিবারের ১৫ থেকে ৪৫ বছরের বাঙালি মুসলিম নারীদের সর্বাধিক অভিবাসন ঘটেছে পোশাক কারখানাগুলোতে। এই উপার্জনকারী নারীরা আজ মিনিপ্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করে, নিজে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে, বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতে যায়, মোবাইল ফোনে বাড়িতে টাকা পাঠায়। পাশাপাশি এই নারীরা তাজরীন কি রানা প্লাজায় অঙ্গার বা থেঁতলে একটি ‘মৃত সংখ্যা’ হয়ে যায়।
গ্রামীণ নারীর কী আছে? আছে পরিচয়, অস্তিত্ব, ইতিহাস, লড়াই, মেধা আর সৃজনশীলতা। বাংলাদেশের ২৩০টি নদী অববাহিকায় যত ধরনের মাটির চুলা আছে, তার হিসাব কি করেছে রাষ্ট্র? এসব মাটির চুলার নির্মাণ ও কারিগরি নিয়ে কি বিস্তর কোনো গবেষণা ও জাতীয় বাজেট বরাদ্দ হয়েছে? গ্রামে গ্রামে নারীর গড়ে তোলা বসতবাড়ি, বাগানগুলোর বিন্যাস ও সজ্জা নিয়ে আমরা কতটুকু ভেবেছি? কিংবা প্রতিনিয়ত কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে গ্রামীণ নানা উপকরণ আবিষ্কার ও ব্যবহারকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিয়েছি? গ্রামীণ নারীর এই মেধা, কারিগরি ও উৎপাদনশীলতাকে মূলধারার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা সম্ভব ছিল। তাতে গ্রামীণ নারীর আয়ক্ষেত্র বাড়ত, উপার্জন বাড়ত, স্থানীয় সম্পদের সৃজনশীল ব্যবহার হতো, ভোক্তা হিসেবে আমরা পরিবেশবান্ধব সাংস্কৃতিক উপকরণ ও উপাদান পেতাম। এই গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের জল-মাটির গন্ধ থাকত।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদই হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভিত্তি, যার প্রাথমিক সংগ্রহকারী থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পরিবেশে এর ব্যবহার পর্যন্ত সব কাজই করতে হয় নারীদের। নারীরাই প্রাকৃতিক বায়োমাসের সংরক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। গ্রামীণ নারীরা প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যময় রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। প্রাণসম্পদের এক্স-সিট্যু জিনব্যাংকের ব্যবস্থাপকও নারীরা। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পুরুষতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ নারীকে বারবার তার আপন সম্পর্ক থেকে উচ্ছেদে তৎপর, দখলে মাতোয়ারা।
পাহাড় থেকে সমতল, দেশ থেকে দুনিয়া—কোথাও গ্রামীণ নারীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা নেই। তার পরও গ্রামীণ নারীর জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবস আছে। ১৯৯৫ সালের ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘গ্রামীণ নারীই ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে আলোকবর্তিকা’। কিন্তু আমরা কী দেখি? আজ গ্রামীণ নারীর চারধারে আমরা বহাল রেখেছি সিনথেটিক সার, বিষ ও বিনাশী বীজের এক বিপজ্জনক কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা। আমাদের শরীর-মজ্জায় মিশছে বিষ। মায়ের দুধেও মিলছে প্লাস্টিক। অথচ এই জাঁদরেল করপোরেট কৃষি উৎপাদনের বিপরীতে নির্ঘুম আছে দেশ-দুনিয়ার গ্রামীণ নারী। ক্ষুধার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো গ্রামীণ নারীর কৃষি ও প্রাকৃতিক খাদ্যব্যবস্থাকে নিরাপদ ও মজুবত করতে আসুন আমরাও দাঁড়াবার সাহস করি।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি।
১৯ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি।
১৯ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি।
১৯ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

প্রতিদিন দুড়মুড় করে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা কিছুই মনে রাখছি না। এত কঠোর এক মহামারিকাল পাড়ি দিয়েও আমাদের কোনো শিক্ষা হয়নি।
১৯ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫