Ajker Patrika

বিচ্ছিন্ন জনপদ রামুক্যাছড়ি পৌঁছায় না সরকারি সুবিধা

হিমেল চাকমা, রামুক্যাছড়ি (বরকল) থেকে ফিরে
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ৫৬
বিচ্ছিন্ন জনপদ রামুক্যাছড়ি পৌঁছায় না সরকারি সুবিধা

রাঙামাটির বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়ের ১৭৪ নম্বর রামুক্যাছড়ি মৌজা। এ মৌজার সঙ্গে উপজেলা কিংবা জেলা সদরে সড়কপথে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। মূলত পাহাড় ও ঘন জঙ্গলের কারণে খুবই দুর্গম। উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ নদী। রামুক্যাছড়ি থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। জেলা সদরের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।

কোনো প্রয়োজনে কর্ণফুলী ও ঠেগা নৌপথে জেলা-উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্ষায় ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় যাতায়াত করতে পারলেও নদীর পানি কমলেই রামুক্যাছড়ির বাসিন্দাদের পড়তে হয় বিপাকে। তখন বৈঠা ঠেলে নৌকা কিংবা বাঁশের ভেলায় যাতায়াত করতে হয়। রামুক্যাছড়ির মানুষ বরকলের বাসিন্দা হলেও নির্ভর করেন জুরাছড়ি উপজেলার ওপর। কারণ, রামুক্যাছড়ি থেকে জুরাছড়ি হাঁটা পথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে।

১৬টি পাড়া ও চারটি গ্রাম নিয়ে রামুক্যাছড়ি মৌজা গঠিত। গ্রাম চারটি হলো মেম্বারপাড়া, গোইহাট ছড়া, নোয়াপাড়া ও রামুক্যাছড়ি বা গুইছড়ি। জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। মৌজার শতভাগ লোকই কৃষিজীবী। সম্প্রতি জুরাছড়ি উপজেলা হয়ে দেড় দিন হেঁটে রামুক্যাছড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, সবাই পাহাড়ের ঝরনার পানি পান করেন।
মৌজার বাসিন্দা লক্ষ্মীধন চাকমা (৬০) বলেন, ‘রামুক্যাছড়ি মৌজায় নেই কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান। নেই স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র। ফলে সরকারের বিভিন্ন সময়ের টিকাদান কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত এ মৌজার শিশুরা। আছে প্রসূতিমৃত্যু।’ একই কথা বলেন প্রীতি বিন্দু চাকমা (৪৫), বিনা মোহন চাকমা (৪৫), চিত্র রঞ্জন চাকমা (৪৫) ও স্নেহ কুমার চাকমা (৫০) স্নেহ কুমার চাকমা। স্নেহ কুমার চাকমা আঙুল গুনে গুনে বলেন, গত ৩ বছরে ৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।

১৬টি পাড়ার শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করতে স্থানীয় বাসিন্দারা গড়েছেন হদুছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামুক্যাছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নোয়াপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

হদুছড়া বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জ্ঞানময় চাকমা বলেন, স্থানীয় বাসিন্দারা চাঁদা তুলে বিদ্যালয়গুলো চালাচ্ছেন। সম্প্রতি সুবর্ণভূমি ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও শিক্ষকদের মাসিক ৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দিচ্ছে। সেই সম্মানী বন্ধ হলে হয়তো পেশা বদল করতে হবে। তখন স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হলে শিশুরা নিরক্ষর থেকে যাবে।
আইমাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুবিমল চাকমা বলেন, ‘রামুক্যাছড়ি যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত এলাকা। এটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হলেও রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী কেউ যান না। কৃষি কর্মকর্তারা তো কোনো দিনই যাননি। যে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহেলায় সম্প্রতি জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়েছে।

চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, ‘আমরা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যে হাঁটছি। কিন্তু রামুক্যাছড়ির মতো এলাকাকে পেছনে ফেলে এসডিজি বাস্তবায়িত হবে না। এরা যদি পেছনে পড়ে থাকে, তাহলে তারাই বাংলাদেশকে টেনে ধরবে। এদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক বিষয়গুলো পূরণে সরকারকে বিশেষভাবে ভাবা উচিত।’

বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল রানা বলেন, ‘এলাকাটি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই। তিনটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এগুলো সম্প্রতি জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এগুলো যেন জাতীয়করণ হয়, সে জন্য আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সেখানে ক্লিনিক না থাকলে কীভাবে সেখানে তা করা যায়, সে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত