Ajker Patrika

ভুল চিকিৎসায় প্রাণ যাচ্ছে পশুর

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫০
ভুল চিকিৎসায় প্রাণ যাচ্ছে পশুর

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের চিকিৎসায় একাধিক গবাদিপশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন কতিপয় অসাধু ব্যক্তি। এতে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় একাধিক গবাদি পশু মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসীরা।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার শাহজাদপুরে চলতি মাসের ১৪ অক্টোবর দারগ আলী ভূঁইয়া বাড়ির টিপুর একটি গাভির বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে বাচ্চাসহ মারা যায়। এতে লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর জন্য হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করেছেন টিপু। এর কয়েক মাস আগে একই এলাকার আহম্মদ সর্দার বাড়ির আল আমিনের একটি ছাগল বাচ্চা প্রসব করার সময় মারা যায়।

এদিকে চরহাজারী ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেতাহের হোসেনের একটি বাছুর ও একটি উন্নত জাতের গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ইয়াছিন নামের এক হাতুড়ে চিকিৎসককে ডেকে চিকিৎসা করান। কিন্তু তাঁর ভুল চিকিৎসায় দুটো গরুই মারা যায়। এ ধরনের আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে এমন হাতুড়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সাবেক ড্রেসার জিন্নত আলী। তিনি পশু চিকিৎসক পরিচয়ে গত কয়েক বছর যাবত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। তাঁর ভুল চিকিৎসায় কয়েকজনের গবাদিপশুর প্রাণ গিয়েছে। বর্তমানেও জিন্নত আলী ও তাঁর ছেলে ইয়াছিন পশু চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা ও ওষুধ বিক্রি করে যাচ্ছেন।

অভিযুক্ত জিন্নত আলী তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ ডাকে বলে ভালো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি। ভুলভ্রান্তি তো হতেই পারে।’

অপর অভিযুক্ত রাব্বানী প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মাঠ সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে বর্তমানে তাঁর এখানে চাকরি করার বৈধতা না থাকলেও প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের খাতিরে তিনি এখানে পশু চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তাঁর ভুল চিকিৎসায় সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাব্বানী তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তিনি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে খানে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর চিকিৎসা দেওয়ার বৈধতা আছে কি–না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘স্যারেরা মাঠে তেমন যান না। আমাদেরই পাঠান। আমরা গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে লিখলে লিখতে পারেন, আমার কিছুই হবে না।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী বলেন, এমন পশু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সত্য। কিন্তু তাঁরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অধীনে না থাকায় কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিংবা নিজেরা প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা এসব করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর এদের সকলকে হাতুড়ে চিকিৎসক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমার অফিসের কেউ নয়। আমি ও আমার অফিসের নাম ভাঙিয়ে তাঁরা ভুল চিকিৎসা দেয় বলে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। তবে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আমার কোনো ক্ষমতা নেই। জিন্নত আলী অফিসের সাবেক ডেসার, তাঁর ছেলে ইয়াছিন, সৌরভ বাবু ব্র্যাকের ইএলও (কৃত্রিম প্রজননের কাজ করে), রাব্বানী ও করিম একটি প্রকল্পের সাবেক অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত