Ajker Patrika

পারিবারিক লাইব্রেরি থেকে ঢাকা কেন্দ্র

হারুনুর রশিদ, জবি
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ২৫
Thumbnail image

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ ছিল ইস্টবেঙ্গলের একটা সাংস্কৃতিক চারণভূমি। এখানকার জমিদারেরা কেউই বনেদি জমিদার ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন মূলত ব্যবসায়ী। অঢেল টাকা থাকায় তাঁরা জমিদারি কিনে নেন। প্রতিটি জমিদারবাড়িতে ছিল লাইব্রেরি। তাঁদের দেখাদেখি ফরাশগঞ্জের সব বাড়িতেই লাইব্রেরি ছিল। আমাদের পরিবারের যে লাইব্রেরি ছিল, সেটাই আমরা ১৯৯৭ সালে ‘ঢাকা কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলি।

এভাবেই ঢাকা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বলছিলেন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আজিম বখ্শ। ৭৫ বয়স বয়সী এই মানুষটিকে ঢাকার জীবন্ত ইতিহাস বলে অভিহিত করেন অনেকে। থাকেন গুলশানে। পারিবারিক স্মৃতিবাহী এই কেন্দ্রের টানে প্রতিদিনই আসেন ফরাশগঞ্জে।

পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে নেমে যানজট পেরিয়ে শ্যামবাজারের দিকে অগ্রসর হলে ২৪ মোহিনী মোহন দাস লেনে মিলবে একটি আটপৌরে ভবন। এটিই ‘ঢাকা কেন্দ্র’। কেন্দ্রের একটা অংশে রয়েছে গ্রন্থাগার ও সুপরিসর পাঠকক্ষ। অপর অংশে রয়েছে সংগ্রহশালা, অডিটোরিয়াম, সুদৃশ্য বাগান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য। এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাওলা বখ্শ সর্দার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। ট্রাস্টি হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখ্শ। 
ট্রাস্টের ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রকল্পের অধীন ১৯৯৭ সালে ঢাকা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঢাকা কেন্দ্রে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ সংগ্রহ। এখানে পাঠাগারে আবদুল করিমের ‘ঢাকাই মসলিন’, আবু যোহা নূর আহমদের উনিশ শতকের ‘ঢাকার সমাজজীবন’, কেদারনাথ মজুমদারের ‘ঢাকার বিবরণ ও ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাস’, নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’, নির্মল গুপ্তের ‘ঢাকার কথা’, যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’, রফিকুল ইসলামের ‘ঢাকার কথা’, সত্যেন সেনের ‘শহরের ইতিকথা’, হরিদাস বসুর ‘ঢাকার কথা’সহ প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে।

আজিম বখ্শ বলেন, ‘লাইব্রেরির চর্চা এখন শেষদিকে। এখন কেউ লাইব্রেরিতে আসতে চায় না। আগে লাইব্রেরিগুলো ছিল সংস্কৃতির একটা অংশ। এই সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রাখতে আমরা ঢাকা কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। এখানে আগে শুধু বই ছিল, এখন বইয়ের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন বিষয় সংযোজন করেছি। মূলত, ঢাকা কেন্দ্রের কাজ হলো, ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য লালন করা।’

পাঠাগারে পড়তে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মোর্শেদ আলম বলেন, ঢাকা কেন্দ্র অসাধারণ একটি জায়গা। বাংলাদেশে এতটা শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ সম্ভবত কোথাও নেই। এখানকার লাইব্রেরিতে ঢাকা সম্পর্কে প্রায় ১০ হাজার বই আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাহিত্য আড্ডা হয়। আমি প্রতিদিনই আসি। নিরিবিলিতে পড়ে শান্তি পাওয়া যায়।ঢাকা কেন্দ্রে পাঠাগার ও প্রদর্শনী কক্ষ খোলা থাকে সপ্তাহে ছয় দিন। বৃহস্পতিবার বন্ধ। গবেষকদের জন্য নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা এবং সাধারণ পাঠকদের জন্য বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত