Ajker Patrika

কমলনগরে বিনা মূল্যের চালের কার্ড টাকার বিনিময়ে বিতরণ

মো. ইব্রাহিম, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
কমলনগরে বিনা মূল্যের চালের কার্ড টাকার বিনিময়ে বিতরণ

ইলিশ রক্ষায় মাছ শিকার বন্ধ থাকার সময়ে তালিকাভুক্ত জেলেদের চার ধাপে মোট ১৬০ কেজি করে চাল সহায়তা দিচ্ছে সরকার। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে এই চাল পাওয়ার জন্য জেলেদের ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের সহযোগীদের মাধ্যমে এই টাকা নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন।

কমলনগর উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কমলনগরে নিবন্ধিত ও কার্ডধারী জেলে আছে ১২ হাজার ৯৩৮ জন। তাঁদের মধ্যে এবার ৭ হাজার ৫৩৩ জনকে সহায়তার জন্য চালের সরকারি বরাদ্দ এসেছে।

গত মঙ্গলবার চর কালকিনি ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে এ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন জেলের সঙ্গে। এ সময় নদীতে ১৫-২০টি রকেট নৌকাসহ ছোট নৌকা দিয়ে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। তা দেখতে দেখতে পাড়ে বসে কয়েকজন জেলে সহায়তার চাল বিতরণের অনিয়ম তুলে ধরেন। তাঁরা নাম প্রকাশ না করে জানান, প্রতিবারের মতো এবারও টাকা ছাড়া কেউ চাল সহায়তার কার্ড পাননি। হারুন নামের এক ব্যক্তি দুই দিন আগে মারা গেছেন। তাঁর কাছ থেকে এক ইউপি সদস্য কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ২ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সেই চালের ভাত হারুন আর খেয়ে যেতে পারেননি।

জেলেদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা তাঁদের কিছু লোকের কাছে চালের টোকেন বিক্রি করেন। তাঁরা আবার সেটা অন্যের কাছে বিক্রি করেন। এতে করে প্রকৃত জেলেরা চাল সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন।

নাছিরগঞ্জ বাজারে মেঘনা নদীর পাড়ের আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন চর কালকিনি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুর রহিম। তিনি দাবি করেন, ইউপি চেয়ারম্যান সরাসরি কারও কাছ থেকে টাকা না নিয়ে নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে সংগ্রহ করেন। প্রত্যেক জেলের কাজ থেকে ২-৩ হাজার টাকা নিয়েছেন।
স্থানীয় জেলে মো. ইব্রাহিম জানান, কালকিনি ইউনিয়নে জেলেদের থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আরেক জেলে আনোয়ার জানান, ফারুক মাঝি নামের একজন তাঁর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন। তারপর তিনি জেলেদের চাল সহায়তার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

চর মার্টিন ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তারেক রহমান রকি বলেন, ‘এবারও জেলে কার্ডের চাল জেলেদের টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়েছে। কত অসহায় মুখ দেখেছি কিন্তু নিজে ব্যথিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আমার। মার্টিন ইউনিয়নে জেলেদের কাছ থেকে কমবেশি টাকা নিয়েছে। তবে সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে কালকিনি ইউনিয়ন, জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।’ এ নিয়ে জানতে চাইলে চর কালকিনি ইউপির চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ জানান, তিনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না। টোকেন যাঁরা বিক্রি করেন, তাঁদের ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে সাহেবের হাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক মাতব্বর অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন চেয়ারম্যানের হয়ে জেলেদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন। জেলে কার্ড বিক্রি করার জন্য চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁদের গোপন চুক্তি হয়েছে। তাঁরা কার্ড বিক্রির টাকার একটি অংশ চেয়ারম্যানকে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস বলেন, সুবিধাভোগী জেলেদের তালিকা ইউপি চেয়ারম্যানরা তৈরি করেন। যদি জেলেরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন, তাহলে ইউএনওর মাধ্যমে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, জেলেদের অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত