Ajker Patrika

৭ ইউপির সব কটিতে আ.লীগের পরাজয়

জাকির হোসেন ও রাজন চন্দ (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৩২
৭ ইউপির সব কটিতে আ.লীগের পরাজয়

সপ্তম ধাপে সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। একটিতেও বিজয়ী হতে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

এ নিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে কাদা-ছোড়াছুড়ি। তাঁরা একে অপরকে দুষছেন। স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, তৃণমূলের মনোনীত প্রার্থীদের নৌকা না দেওয়া, দলীয় আনুগত্য না থাকাসহ স্বজনপ্রীতির কারণেই নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

উপজেলার উত্তর বড়দল ইউপির আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেও আমার ইউপিতে অনেক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ থাকা সত্ত্বেও নৌকার পক্ষে মাঠে কাজ করেননি।’

ইউপির আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সমন্বয়ের অভাবেই নৌকার পরাজয় হয়েছে।

বালিজুরী ইউপির আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিলন তালুকদার বলেন, এ ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর দলীয় কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে সমন্বয় করেননি। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে নৌকার পরাজয় হয়েছে।

এ ইউপির দক্ষিণকুল গ্রামের ভোটার মনির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে আতাউর রহমান তিনবার চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাঁর আধিপত্য ও দাম্ভিকতার কারণেই নৌকা নিয়ে এবার পরাজিত হয়েছেন।

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপির শ্রীপুর গ্রামের ভোটার কবির মিয়া বলেন, ‘১০ বছর ধরে বিশ্বজিত সরকার আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। তাঁর কর্মকাণ্ডে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিবর্তন চেয়েছিলাম।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা যে প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছিলাম, তাঁদের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়। এতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আমি নিজেও উত্তর শ্রীপুর ইউপি থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের তালিকাকে প্রাধান্য না দেওয়ায় নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি।’ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট সরাসরি দায় দিলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর।

আজকের পত্রিকাকে মুকুট জানান, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে যাঁরা যোগ্য, তাঁদের নাম দেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকায় বসে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নাম দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়ায় নৌকার পরাজয় হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী এনামুল কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। আমরাও চেয়েছিলাম নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক।

নৌকার পরাজয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই উপজেলায় যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, আমরা তাঁদের নাম তালিকার প্রথমে রেখেই কেন্দ্রে তালিকা পাঠাই। হয়তো নৌকার প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হতে পারেননি। তবে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরাও আওয়ামী লীগের প্রার্থী।’

গত সোমবার ইউপি নির্বাচনের সপ্তম ধাপে তাহিরপুর উপজেলার ৭ ইউপিতে চারজন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, তিনজন বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত