Ajker Patrika

অব্যবস্থাপনা-উৎপাতে কমছে পরিযায়ী পাখি

বেলাল হোসেন, জাবি
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ২৭
অব্যবস্থাপনা-উৎপাতে কমছে পরিযায়ী পাখি

পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এখানকার জলাশয়ে লাল শাপলার ফাঁকে পাখির জলকেলির দেখা মেলে অহরহ। প্রকৃতিপ্রেমীরা দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসেন এই অপরূপ সৌন্দর্য।

তবে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় পাখিদের জন্য বেড়েছে উৎপাত। এ ছাড়া জলাশয় খনন, কচুরিপানা পরিষ্কার করে অতিথি পাখির আবাস নষ্ট করা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কমছে পাখির সংখ্যা।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাবিতে পাখিদের বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এখানকার দুটি জলাশয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কের পাশে অবস্থিত। এতে দর্শনার্থীদের উৎপাত বেশি হয়। পাখি দেখতে গিয়ে দর্শনার্থীদের কেউ ঢিল মারেন, কেউ দেন হাততালি। অনেকেই উড়ন্ত অবস্থায় পাখির ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে এ কাজ করেন। এ ছাড়া জলাশয়ে চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল ফেলেন তাঁরা। পাশাপাশি গাড়ির হর্ন এবং অতিরিক্ত কোলাহল পাখিদের বিরক্ত করে। এতে পাখিরা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি ছোট-বড় জলাশয়ের মধ্যে শুধু ট্রান্সপোর্ট-সংলগ্ন জলাশয় ও মেডিকেল সেন্টারের পেছনের জলাশয় পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে নতুন প্রশাসনিক ভবনের পেছনের জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি নেই এবং সুইমিং পুল-সংলগ্ন জলাশয় সংস্কার করা হয়নি। জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায়ও প্রভাবিত হচ্ছে অতিথি পাখির আনাগোনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ জানায়, জাবিতে অতিথি পাখি আসে ১৯৮৬ সাল থেকে। তখন প্রায় ৯৬ প্রজাতির পাখি শনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২০৫ প্রজাতির পাখির খোঁজ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১২৬ প্রজাতির পাখি দেশি ও বাকিগুলো অতিথি পাখি হিসেবে পরিচিত।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আরও জানায়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যানে সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছে ২০২০ সালে। তখন আসা পাখির সংখ্যা ৮ হাজার ১২০। তবে এ বছর এখন অবধি সে সংখ্যা ৪ হাজারের মতো হবে বলে জানিয়েছেন পাখি পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোয় খননকাজ হয়। এরপর বাজেট সংকটের কারণে খননকাজ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করতেও অনেক বড় বাজেটের প্রয়োজন।’

পাখি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘পাখির সংখ্যা এবার তুলনামূলক কম। গত বছর ক্যাম্পাসে বিপন্নসহ ১২ প্রজাতির ৮ হাজারের বেশি পাখি এসেছিল, যা বিগত তিন দশকে সর্বোচ্চ। করোনার কারণে উৎপাত কম থাকায় অতিথি পাখি বেশি এসেছিল। কিন্তু এ বছর ক্যাম্পাসে দুটি প্রজাতির প্রায় ৪ হাজারের মতো পাখি এসেছে। এ অবস্থায় আমাদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। না হলে আগের পরিস্থিতি আনা সম্ভব নয়। এখন দর্শনার্থীদের ঢোকার ব্যাপারে সুব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।’

এদিকে পাখিসংক্রান্ত গবেষণায় এগিয়ে জাবি। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে পাখি নিয়ে ২০টি গবেষণা হয়েছে। এ বছরও কিছু কাজ হচ্ছে। এখানে পাখি বিষয়ে গবেষণার সুযোগ বিস্তর। গবেষণা আরও হতে পারত। আসলে পাখি নিয়ে যত পর্যবেক্ষণ হয়, সে পরিমাণ গবেষণা হচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত