Ajker Patrika

কর্মকর্তাদের দুপক্ষের দ্বন্দ্ব শিক্ষায় ‘অশনিসংকেত’

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৩
Thumbnail image

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এত দিন তাঁদের দ্বন্দ্ব চার দেয়ালের ভেতরে ছিল। তবে এখন এর প্রভাব পড়ছে বাইরেও। কর্মকর্তাদের এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিপক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিচ্ছেন।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শিক্ষা বোর্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ওপর লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িত। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে সেটির প্রভাব পড়তে পারে শিক্ষা খাতে। এতে একদিকে সেবা দেওয়া কমবে, অপর দিকে সেবার মানও কমবে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুতে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন চট্টগ্রামের সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। একেবারে শীর্ষ পদ থেকে নিচের স্তরের পদ পর্যন্ত নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়। ওই সময় বিদায় নিতে হয় বহুদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসা কর্মকর্তাদের। যুক্ত হন নতুনেরা। তবে এই নিয়োগের শুরুতেই পদে পদে অনিয়ম আর পদোন্নতিতে প্রবিধি মালা না মানার অভিযোগ ওঠে।

জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে প্রাধান্য না দিয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। শুরুতে একযোগে কাজ করলেও কদিন যেতে না যেতেই কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তীর বলয়ে। অপর পক্ষটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া তৎকালীন সচিব আবদুল আলীমের বলয়ভুক্ত হিসেবে পরিচিতি পায়। নিয়মিতই এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কোণঠাসা করার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন।

শিক্ষা বোর্ডে নিরপেক্ষ হিসেবে পরিচিত কয়েক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অতীতে শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারীদের বিরুদ্ধেই একের পর এক অভিযোগ পাওয়া যেত। তবে গত কয়েক বছর ধরে কর্মকর্তারাও নানা অনিয়মের কারণে অভিযুক্ত হচ্ছেন। অবৈধ সুবিধা আদায়ে কিছু কর্মকর্তার চেষ্টা থেকেই মূলত দ্বন্দ্বের শুরু।

সম্প্রতি নতুন করে এই কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান হয় বোর্ডের ‘নাম ও বয়স সংশোধন’ কমিটি নিয়ে। তিন বছর মেয়াদি ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ৯ জানুয়ারি। কিন্তু এর আগেই গত ২১ ডিসেম্বর হঠাৎ এ কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন বিদায়ী বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী। এরপর ২৬ ডিসেম্বর এই কমিটি পুনর্গঠিত হয়। যদিও ২৯ ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যান প্রদীপ চক্রবর্তী।

কর্মকর্তাদের অপর পক্ষের অভিযোগ, ছুটিতে যাওয়ার মাত্র কদিন আগে নিজের পছন্দের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করেন প্রদীপ চক্রবর্তী।

তিনি অবসরে যাওয়ার পর আবদুল আলীম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ২ জানুয়ারি। এর পরদিনই তিনি পুনর্গঠিত নাম ও বয়স সংশোধন কমিটি বাতিলের উদ্যোগ নেন। তবে এটিকে অরডিন্যান্স লঙ্ঘন বলে দাবি করেন বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী। কর্মকর্তাদের বিভক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটা বিভক্তি তো সব জায়গায় থাকে। এগুলো কর্মচারীদের মধ্যেও থাকে। তবে আমি মানুষকে কীভাবে সেবা দেওয়া যাবে সেটিই সব সময় ভেবেছি।’

অপর দিকে বিধি মেনেই কমিটি বাতিলের দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই কমিটির সদস্যদের সম্মানী দেওয়া হয়। এ ধরনের আর্থিক সংশ্লিষ্ট কমিটি গঠন করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। এ ছাড়া কখনো উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এই কমিটিতে না থাকলেও তখনকার বোর্ড চেয়ারম্যান বিশেষ আমন্ত্রণে বর্তমান উপসচিবকে কমিটিতে সদস্য করেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। সেটি নিষ্পত্তি না করে এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কমিটি করা আমার কাছে শোভনীয় মনে হয়নি।’

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দর খান বলেন, এখন রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক কর্মকর্তা বোর্ডে নিয়োগ পাচ্ছেন। তাঁরা আবার নানা কারণে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন। তাঁদের এই অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এই প্রতিষ্ঠান থেকে যাঁদের সেবা নেওয়ার কথা তাঁরা ঠিকঠাক সেবা পাবেন না। একদিকে সেবা দেওয়া কমবে, অপর দিকে সেবার মানও কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত