Ajker Patrika

উলিপুরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরুষেরা, পরিবারে অভাব

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৪৯
Thumbnail image

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়ন। তাদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও রয়েছে। সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় খেয়ে-না খেয়ে সন্তান নিয়ে দিন কাটছে পরিবারের অন্য সদস্যদের।

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার ঘটনায় কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় ৩টি ইউনিয়নের ৫টি মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় গুনাইগাছ ইউনিয়নের পশ্চিম কালুডাঙ্গা ব্রাহ্মণপাড়া দুর্গা মন্দির, পশ্চিম কালুডাঙ্গা সর্বজনীন দুর্গা মন্দির, নেফড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দির ও থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা ভারতপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দির এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বেগমগঞ্জ সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মন্দিরসহ প্রতিমা ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায়।

ওই ঘটনায় উলিপুর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক ৫টি মামলায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৭ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফড়া, কালুডাঙ্গা গ্রামের কাঠালীপাড়া, হাজীপাড়া, খারিজাপাড়া, মৌলভীপাড়া, পূর্বপাড়া, কালুডাঙ্গাপাড়া এবং থেতরাই ইউনিয়নের রামপ্রসাদ, নুরানীপাড়া, হোকডাঙ্গা, কিশোরপুর, বকশিপাড়া, তেলিপাড়া, থেতরাই বাজার এলাকার ফকিরপাড়া, সাতদরগাহ, বকশির বাজার, দালালীপাড়া, মতুল্ল্যাটারী, বকশিপাড়া, নাপিতপাড়া, হাজীপাড়া, কানিপাড়া, তেলিপাড়ার এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, দিনের বেলা নারী ও বৃদ্ধরা বাজারঘাট করলেও রাতের বেলা যেন এলাকা ফাঁকা হয়ে পড়ে। অভাবের কারণে একদিকে পেটের জ্বালা, অপরদিকে পুলিশি গ্রেপ্তার আতঙ্ক এখানকার বাসিন্দাদের।

নুরানীপাড়ার বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলেমেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিন্তু হঠাৎ একদিন বাসায় পুলিশ আসায় ছেলে আমার পালিয়েছে। তার আর কোনো খোঁজখবর নেই। কোথায় আছে, কী খাচ্ছে—কিছুই জানা নেই আমাদের।’

মতুল্ল্যাটারী গ্রামের কিশোর সজীব হাসান বলেন, ‘দুর্গাপূজায় মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার পর থেকে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আমার মতো অনেক ছেলেও পালিয়েছে। তখন থেকে মহল্লার এই মসজিদে আজান ও নামাজ হয় না। মসজিদের দরজা তালাবদ্ধ রয়েছে।’

রামপ্রসাদপাড়ার বাসিন্দা কৃষক বাবলু মিয়া (৬০) বলেন, ‘হামার এলাকাত সবজি ভালো হয়। এই যে শীতকালীন সবজি তুলমো, কামলা পাবাইছি না। এলাকার অবস্থা ভালো না। এলাকাত কামলা তো দূরে থাক ফকির-মিসকিনও আসে না।’

ফকিরপাড়ার নবীজন বেগম বলেন, ‘ভাত নাই, পানি নাই, কী খাই? মানুষের বাড়িত কাম পাওয়া যায় না? ইয়ার থাকি হামার মরণে ভালো।’

সাতদরগাহ রাস্তার পাশে মুদির দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) জানান, শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় মুদি দোকান করে সংসার চালান। এই গণ্ডগোলের পর থেকে দুই দিন দোকান খুললে এক দিন ১০ টাকা, আরেক দিন ২০ টাকার চা বিক্রি করতে পেরেছেন। মামলার ভয়ে এলাকা এখন পুরুষশূন্য হয়ে গেছে।

উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু এলাকায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।

উলিপুরের ওসি ইমতিয়াজ কবীর জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। নিরীহ কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সে ব্যাপারে পুলিশ সচেতন রয়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত