Ajker Patrika

অরুণিতার বাঁশের টুথব্রাশ

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১০: ১৩
অরুণিতার বাঁশের টুথব্রাশ

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম যে উপকরণটি হাতে নিই, সেটি টুথব্রাশ। অধিকাংশ টুথব্রাশের হ্যান্ডেল প্লাস্টিকের এবং ব্রিসলস নাইলন দিয়ে তৈরি। এসব উপকরণ পরিবেশবান্ধব নয়। এর পরিবেশবান্ধব বিকল্প নিয়ে কখনো ভেবেছেন কি?

‘আরুণিকার’ কর্ণধার অরুণিতা ঘোষাল মূলত কাঠের গয়নার নকশা করেন। সম্প্রতি তিনি নিয়ে এসেছেন বাঁশের তৈরি পরিবেশবান্ধব টুথব্রাশ। এর ব্রিসলস বাঁশ প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা একধরনের আঁশ দিয়ে তৈরি। এই পুরো ব্রাশটিই প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয় হয়ে যায়।

মূলত পরিবেশবান্ধব চিন্তা থেকেই এই বাঁশের ব্রাশ তৈরির কথা ভেবেছেন অরুণিতা। তিনি বলেন, ‘বাঁশ বা কাঠের ব্রাশ প্রথম ব্যবহার করতে দেখি আমার ভাইকে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি আমাকে জানান, সেখানে কিছু স্থানীয় কারিগর পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করেন ও স্থানীয় লোকজনের কাছে সেগুলো বিক্রি করেন। ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। তখন থেকেই চিন্তা করতে থাকি—কীভাবে এই ব্রাশগুলো দেশে তৈরি করা যায়।’

টুথব্রাশ এমন একটা ব্যবহার্য উপকরণ, যা আমরা দুই বা তিন মাস পরপর বদলাই। ফলে প্রতিবার নতুন ব্রাশ কেনার পর পুরোনো ব্রাশটি আবর্জনা হিসেবে থেকে যায়। আর প্রতিদিন ব্যবহার করা টুথব্রাশগুলো এমন উপাদানে তৈরি, যা মাটিতে মেশে না; বরং পরিবেশ দূষণ করে। এই দূষণ সৃষ্টিকারী উপকরণগুলোর জায়গায় প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়ে যাওয়ার মতো উপাদান ব্যবহার করা যায় কি না, সে চিন্তাও ছিল—যোগ করেন অরুণিতা ঘোষাল।

আরুণিকার হরেক রকমের ব্রাশ২০২০ সালে একটি উৎসব সামনে রেখে অরুণিতা বাঁশের তৈরি এই ব্রাশগুলো প্রথম তৈরি করান। একদম ঝোঁকের বশে, ঝুঁকি নিয়ে এক হাজার পিস বাঁশের ব্রাশ বানিয়ে নেন এক কারিগরকে দিয়ে। অরুণিতা বলেন, ‘আমি যখন কারিগরকে ব্রাশ তৈরির জন্য স্যাম্পল দেখাই, তিনি একটু সময় নিয়েই আমাকে প্রথম স্যাম্পল ব্রাশটি তৈরি করে দেখান।

পুরোপুরি আমার দেওয়া স্যাম্পলের মতো না হলেও, আমাদের দেশীয় উপকরণ দিয়ে যতটা সুন্দর করা সম্ভব, ততটাই সুন্দর করে তিনি তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি নিজেও ব্যবহার করে দেখেছি যে আসলে এই ব্রাশ রোজকার ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত কি না।’

লকডাউনের কারণে প্রকল্পটি একসময় বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি আবার সেগুলো তৈরি করেছে আরুণিকা। এসব ব্রাশের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরির জন্য সেগুলোর ওপর রং দিয়ে নকশা করা হয়েছে। অরুণিতা বলেন, ‘আমি কিছু জায়গায় দেখেছি, অনেকে এ ধরনের পণ্য আমদানি করছে বাইরে থেকে। কিন্তু আমি চেয়েছি দেশীয় উপকরণ দিয়েই তৈরি করে নিতে।’

দরদাম
ডিজাইনভেদে বাঁশের এসব ব্রাশের দাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। অরুণিতা ঘোষাল জানান, খুব মিনিমাল ডিজাইনের কিছু ব্রাশ পরে আনা হবে, যেগুলোর দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্য়ে রাখার চেষ্টা থাকবে। ২০১৪ সালে ফেসবুক অনলাইন শপ নিয়ে কাজ শুরু করে আরুণিকা। প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয় পণ্য কাঠের লুডু, গয়না ইত্যাদি সবকিছুই পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি, যার ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ পণ্য বায়োডিগ্রেডেবল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত