Ajker Patrika

ছাদ দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি মঞ্চ ভাঙা শিল্পকলার

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৪৮
ছাদ দিয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি মঞ্চ ভাঙা শিল্পকলার

পাঁচ বছর ধরে ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে, মঞ্চ ভাঙা, সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট—এ রকম অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা কমিটির নির্বাচন হয় না।

বরাদ্দের অভাবে শিল্পকলা একাডেমির ভবনে রং করা হয় না। আংশিক রঙ করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকমতো বেতন পান না প্রশিক্ষক ও কর্মচারীরা। দর্শকের আসনের চেয়ারগুলো ভাঙা। রয়েছে কক্ষসংকট। দীর্ঘদিন ধরে কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা নেই একাডেমিতে।

২০০৭ সালে নির্মিত জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কারের প্রয়োজন হয় কমপক্ষে পাঁচ বছর আগে। মাঝেমধ্যে অল্প কিছু সংস্কার করা হলেও তা একেবারেই অপ্রতুল।

শিল্পীরা জানান, প্রায় চার বছর ধরে সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট। তিন-চার বছর হলো দোতলার গ্যালারির দুটি সৌচাগার পরিত্যক্ত। অডিটোরিয়ামের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এদিকে কোনো অনুষ্ঠান করার জন্য বাইরে থেকে আলোক প্রক্ষেপক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করা লাগে। এক দিনের অনুষ্ঠান করতে ১০-১৫ হাজার পর্যন্ত খরচ করতে হয়।

একাডেমির অফিস সূত্রে জানা যায়, ভ্যাটসহ সরকারি অডিটোরিয়ামের ভাড়া ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, বেসরকারি ভাড়া ৯ হাজার ৭৭৫ টাকা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত সংগঠনের জন্য ভাড়া ২ হাজার ৮৭৫ টাকা। কিন্তু এ টাকা দিয়েও কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে এক দিনের জন্য আলোকসজ্জার জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও সাউন্ড সিস্টেম ৩ হাজার টাকায় ভাড়া নিতে হয়।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির অফিস সহকারী আবু সাইদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শিল্পকলা একাডেমির অবস্থা বেহাল। অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি কক্ষসংকট, বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা রয়েছে। প্রায় ৫ বছর ধরে ভেঙে যাওয়া মঞ্চ স্থায়ীভাবে ঠিক করা হচ্ছে না। কোনো অনুষ্ঠান সামনে থাকলে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। প্রায় ৯ মাস ধরে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ছাড়া অফিস করছি। বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত এক বছরের বকেয়া সম্মানী ঈদের আগে শিল্পীদের জন্য আসার কথা থাকলেও এটি এখনো আসেনি। প্রায় চার বছর ধরে প্রশিক্ষকেরা সম্মানী পান না। প্রতি মাসে প্রশিক্ষকের ১ হাজার ৪০০ টাকা ও সহকারী হিসেবে ১ হাজার ২০০ টাকার সম্মানী পাওয়ার কথা। তা ছাড়া কর্মচারীরা দেরিতে বেতন পাচ্ছে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি মতিউল ইসলাম হিরু বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমিতে স্থায়ীভাবে একজন সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া জরুরি। শিল্পকলা একাডেমির সমস্যা নিরসনে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন জাকির বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমিতে কমিটি না থাকায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিল্পীরা। যেসব অনুষ্ঠান জেলা পর্যায়ে হওয়ার কথা সেগুলো বন্ধ আছে। সম্প্রতি ১২-১৩টি জেলা আধুনিক শিল্পকলা একাডেমির সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু মুন্সিগঞ্জ এ তালিকায় ছিল না। মঞ্চ ভাঙা থাকায় শিল্পীরা মাঝেমধ্যে আহত হন। সরকারি, বেসরকারি কোনো অনুষ্ঠান হলে অস্থায়ীভাবে মঞ্চ মেরামত করা হয়। কিন্তু এরপর সে সমস্যা থেকেই যায়। গরমের দিনে এখানে কোনো কাজই করা যায় না।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল হাসান মারুফ বলেন, ‘আমি এক মাস ধরে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তার নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এ বছর অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ার বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত