Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জ-২: নূর-সোহরাব কোন্দল চরমে

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৩: ০৫
কিশোরগঞ্জ-২: নূর-সোহরাব কোন্দল চরমে

কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় একটা কথা আছে ‘হাইজের মাইর’। দুই গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়, তাকেই বলে ‘হাইজের মাইর’। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে এই ‘হাইজের মাইর’ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সংঘাত কমলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। মনোনয়নের লড়াইয়ে সরব আরও বেশ কয়েকজন নেতা।

অন্যদিকে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে সক্রিয় কর্মীরা।

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের কোন্দল নজিরবিহীন পর্যায়ে ঠেকেছে। ১৯৯৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর একবারও আর নতুন কমিটি হয়নি। কয়েক দফা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও অনিবার্য কারণবশত বাতিল করা হয়েছে। ২০২১ সালে সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক কমিটি পেলেও সেই কমিটিকে ঘিরে নূর মোহাম্মদ সমর্থকদের সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সংঘাত-সংঘর্ষ নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইদানীং সোহরাব উদ্দিনের আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন ভিড় জমাচ্ছেন নূর মোহাম্মদের গ্রুপে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ দুজনের বাইরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী এম এ আফজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাহার আকন্দ, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক।

কোন্দলের ব্যাপারে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি বারবার জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কোন্দল নিরসন করতে কথা বলেছি।’ নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি আগামীতেও জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’

সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয়  দিবসগুলোতে আমাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে দেওয়া হয়নি। দল যদি এবার আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে বিজয় সুনিশ্চিত করে ঘরে ফিরব।’

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও তাঁরা তা মানতে নারাজ। অন্যদিকে পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপিতে বিরোধ থাকলেও দিন দিন লোক দেখানো ঐক্যের সুর দেখা যাচ্ছে।

তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও দলের সমর্থন পেতে লবিংয়ে সক্রিয় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলা বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী জালাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি মো. রুহুল আমিন আকিল, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আশফাক আহমেদ জুন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে দেশের বাইরে থাকলেও দুই উপজেলাতেই ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকন।

শহীদুজ্জামান কাঁকন বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমিই দলীয় মনোনয়ন পাব এবং এ আসন থেকে জয়লাভ করব।’

জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নূর মোহাম্মদ এমপির প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ। তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আওয়ামী লীগের মূল বাধা এখন দলীয় বিরোধ। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির মধ্যেও গ্রুপিং রয়েছে, তবে তা এতটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যায় না। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন কাটায়। এ জন্য অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান সবাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত