Ajker Patrika

আবহাওয়া, বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি

অরুণ কর্মকার
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭: ৪৯
আবহাওয়া, বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বাংলাদেশে (প্রকৃতপক্ষে সারা পৃথিবীতে) এর বিরূপ প্রভাব এখন সবার সামনে দৃশ্যমান। আবহাওয়ার যে রুক্ষ-রুদ্ররূপ আমরা দেখছি, তা যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে এমনও নয় যে এর আগে কখনো বৈশাখে আবহাওয়ার এই বিরূপতা দেখা যায়নি। অবশ্য বৈশাখের প্রথম দুই সপ্তাহে এবারের মতো এত কম কালবৈশাখী এবং বৃষ্টিপাত এর আগে কখনো হয়েছে, তা খুঁজে দেখার বিষয়। কারণ স্মরণকালের মধ্যে তেমন ঘটনা বিশেষ একটা ঘটেনি।

আবহাওয়ার এই রুক্ষতা ও বিরূপতা শুধু বাংলাদেশে কিংবা এই উপমহাদেশে হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু তা তো নয়। পৃথিবীজুড়েই আবহাওয়া উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করেছে। সুতরাং এ যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই হচ্ছে, তা এখন সবাই মানে। বিশ্বখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী জেমস লাভলক কয়েক বছর আগেই বলে দিয়েছেন, অব্যাহতভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর পরিবেশ ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ পৌঁছে গেছে। এই পর্যায় থেকে পৃথিবীকে আর সুস্থ করে তোলা এবং বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এ বিষয়েও এখন আর সন্দেহ পোষণ করা যায় না। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করার যে বৈশ্বিক উদ্যোগ, তা আড়াই-তিন দশক ধরে অশ্বডিম্ব প্রসব করে চলেছে।

এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ২৮টি ‘কপ’ (কনফারেন্স অব পার্টিস)-এর ফলাফলের কথা। এককথায় বললে, ওই ফলাফল হলো বিরাট একটি শূন্য। কিন্তু অব্যাহতভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি তো এমনি এমনি হয়নি। এর পেছনে আছে মানুষ। মানুষের কৃতকর্ম। আছে তার আয়েশি জীবনযাপনকেন্দ্রিক জৌলুশ। তার সভ্যতা এবং অসভ্যতা। ১৯০০ সালে শুরু হওয়া শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের গড়ে তোলা আজকের আধুনিক সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান উপকরণ গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বিস্তারের ঘটনাও ঘটে চলেছে তখন থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এই গ্যাস সৃষ্টির প্রধান অনুঘটক। আজকের অবস্থায় পৌঁছে জানা যাচ্ছে যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং এখনো হচ্ছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে কয়লা। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনকে (ইআইএ) উদ্ধৃত করে বিশ্বব্যাংকের ‘ডেটা ব্যাংক’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও কয়লার ব্যবহার বাড়ছিল সবচেয়ে দ্রুত। ওই সময় পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন হতো কয়লা পুড়িয়ে। এখন ২০২৪ সাল পর্যন্ত কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন তখনকার চেয়ে কমেছে বলে কোনো তথ্য কোথাও নেই। পৃথিবীতে যত কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার শতকরা ৭৩ ভাগের বেশি করছে মাত্র চারটি দেশ। চীন (মোট বৈশ্বিক ব্যবহারের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ), ভারত (১১ দশমিক ৩ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (৮ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জার্মানি (৩ শতাংশ)। এর পরেই অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার।

বলা বাহুল্য যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার আরও বেড়ে চলেছে। কারণ উল্লিখিত দেশগুলো যেমন কয়লার ব্যবহার কমায়নি, তেমনি বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার শুরু করেছে। কয়লার পরেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি হচ্ছে ফার্নেস তেল ও ডিজেল। এই দুটি জ্বালানিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এক গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য শতকরা ৭০ ভাগ দায় হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতের। কিন্তু বিদ্যুৎ ছাড়া তো আধুনিক সভ্যতা অচল হয়ে পড়বে। তাই এ খাতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোসহ পরিচ্ছন্ন জ্বালানির (ক্লিন এনার্জি) ব্যবহার বাড়ানো বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু হচ্ছেও। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।

এ ক্ষেত্রে রাজনীতি হচ্ছে, বিশ্ব মোড়লেরা নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ালেও কয়লার মতো ‘ডার্টি ফুয়েল’-এর ব্যবহার কমাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বলছে ডার্টি ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে। কিন্তু নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে ব্যয় এখনো অনেক বেশি। তা ছাড়া বাংলাদেশের মতো অনেক দেশই রয়েছে, যারা কয়লা ও তরল জ্বালানি ব্যবহার করে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার প্রভাব অতিনগণ্য, যা কোনো গণনার মধ্যে আসে না; অর্থাৎ আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের যে বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছি এবং জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তার সম্পূর্ণ দায় বিশ্ব মোড়লদের। এ জন্য তারা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েও তা দিচ্ছে না। মোড়লদের এসব অনৈতিক রাজনীতিই পৃথিবীকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।

বাংলাদেশ এখনো তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০ শতাংশ করছে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালিয়ে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু আমাদেরও তো উন্নয়ন দরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি দরকার। বিশ্ব মোড়লদের সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি আমাদের যে পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে জীবন ধারণের জন্যও বেশি করে বিদ্যুৎ দরকার। তাই আমাদের পক্ষে কয়লা এবং তরল জীবাশ্ম জ্বালানি একেবারে পরিহার করা সম্ভব নয়। তবে নবায়নযোগ্য এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। যদিও প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে তার অগ্রগতি যথেষ্ট কম। সরকারের উচিত এদিকে আরও বেশি নজর দেওয়া। 

আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবেশ বিধ্বংসী ও দুর্নীতিপ্রবণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আড়ালে আমরা নদী-খাল-বিল-ঝিল দূষিত ও ধ্বংস করে চলেছি। আমরা নির্বিচারে বন-বৃক্ষ-পাহাড় নিধন করে চলেছি। মাটি, পানি ও বায়ু—পরিবেশের এই তিনটি প্রধান ও মৌলিক উপকরণ মারাত্মকভাবে দূষিত করে চলেছি। ভূগর্ভের পানির অপচয় এবং দূষণের ক্ষেত্রে আমরা বোধ হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমরা আমাদের সামর্থ্য হারাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংকটাপন্ন করে ফেলেছি। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপতা আমাদের অস্তিত্বকে বিপদাপন্ন করে ফেলেছে। আমাদের যেমন বিদ্যুৎ দরকার, উন্নয়ন দরকার, তেমনি দরকার একটি সুস্থ, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশও। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন আমরা ঠেকাতে পারব না। কিন্তু নিজেদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সর্বোচ্চ সংরক্ষণ করে উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমরা মোকাবিলা করতে পারি। সেটাই আমাদের জন্য টেকসই পন্থা—এ কথা আমাদের বুঝতে হবে।

লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত