Ajker Patrika

ইয়াবা লেনদেন নিয়ে কিশোর নুরুলকে হত্যা করা হয়

রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪৫
Thumbnail image

‘আমরা তিনজন নুরুল কবিরকে (১৫) প্রথমে উত্তর মিঠাছড়িতে নিয়ে যাই। সেখানে তাড়ি (মাদকদ্রব্য) খাইয়ে তাকে মাতাল করি। এরপর রামু রাবার বাগানের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করি। মাথায় আঘাত করার পর সে একসময় চিৎকার করা বন্ধ করে দেয় এবং মারা যায়। আমাদের সঙ্গে ইয়াবা নিয়ে লেনদেনের কারণেই আমরা তাকে হত্যা করি।’

গত সোমবার কিশোর নুরুল কবিরকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন ফরহাদ।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ মার্চ রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের একটি রাবার বাগানে অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের লাশ দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দেন রামু থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন তৎকালীন উপপরিদর্শক গণেশ চন্দ্র শীল। তিনি ঘটনাস্থলে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। এ ছাড়া নিজের মোবাইলে তোলেন কয়েকটি ছবি।

স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের তিনি ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। কিন্তু কেউ ওই কিশোরকে শনাক্ত করতে পারেননি। পরে লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

এর মধ্যে উপপরিদর্শক গণেশ নিজের মোবাইলে তোলা লাশের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরিচয় জানার চেষ্টা করেন।

২০২০ সালের ২৪ মার্চ বিকেলে ফেসবুক ও স্থানীয় পত্রিকায় লাশের ছবি দেখে নিজের ছেলেকে শনাক্ত করেন রামুর ছমি উদ্দিন। তিনি ২৫ মার্চ রামু থানায় গিয়ে ছেলের লাশের বিষয়ে খোঁজখবর নিলে পুলিশ জানায়, তাঁর ছেলে নুরুল কবিরকে আন্জুমান মুফিদুল ইসলামের সাহায্যে হত্যার এক দিন পর বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে জানা যায়, ওই কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে রামু থানায় মামলা করা হয়।

এই হত্যা মামলার তদন্তভার পড়ে তৎকালীন উপপরিদর্শক সুব্রত রায়ের ওপর। তিনি দীর্ঘ সময় তদন্ত করার পরেও কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। পরে সুব্রত রায়ের কাছ থেকে তদন্তভার নিয়ে দেওয়া হয় উপপরিদর্শক মো. মন্জুকে।

উপপরিদর্শক মন্জু বলেন, ‘তদন্তে দেখা যায় আল আমিন, রায়হান এবং ফরহাদের মোবাইল লোকেশন হত্যার দিন জোয়ারিয়ানালায় ছিল। গত রোববার ফরহাদকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ নুরুল কবিরকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। গত সোমবার আদালতে ফরহাদ ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হত্যায় আল আমিন ও রায়হানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন ফরহাদ।’

নুরুল কবিরের বাবা মো. ছমি উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাই আর কোনো বাবার বুক যাতে খালি না হয়। আমি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা বারবার এই হত্যাকাণ্ডের মীমাংসা নিজেই করতে চেয়েছেন। আসামিদের বাঁচাতে বিভিন্ন তদবির চালিয়েছেন। এমনকি লাশ এক দিনের মধ্যেই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত