Ajker Patrika

পাহাড়ি ঢলে বিচ্ছিন্ন ২২ গ্রাম

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১১: ৩১
পাহাড়ি ঢলে বিচ্ছিন্ন ২২ গ্রাম

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমার প্রভাবে চরফ্যাশন উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ২২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রধান সড়কগুলো প্লাবিত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ ছাড়া ফসিল জমি, মাছের ঘের, পুকুর ডুবে গেছে।

কোমর পানিতে ডুবে রয়েছে ঢালচর, চর পাতিলা, চর নিজাম, চর মাদ্রাজ, জাহানপুর, মুজিবনগর, নজরুল নগর এলাকা। এ দিকে দিনে-রাতে দুইবার জোয়ারের পানি প্লাবিত হওয়ায় বেড়ির বাইরে থাকা পরিবারগুলো রান্না-বান্না করতে না পেরে অর্ধহারে-অনাহার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে এখন পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ জোয়ারে প্লাবিত নিম্নাঞ্চলসহ বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকার পরিবারগুলোর।

চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (ডিভিশন-২) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরের পর থেকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এখনো এসব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় চরফ্যাশন উপজেলাধীন ঢালচর, কুকরি মুকরি, চর পাতিলা, চর নিজাম, জাহানপুর, চর মাদ্রাজ, নজরুল নগর, মুজিব নগরসহ নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ এবং পূর্ণিমার প্রভাবে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে এসব অঞ্চলের অন্তত ৩০ হাজার পরিবার।

চর মাদ্রাজ এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের বসবাস করা নুর নাহার (৩৮) বলেন, ‘ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। দুই দিন ধরে পানির নিচে ডুবে আছে রান্নার চুলা। রান্না বান্না করতে না পারায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। কোনো বছরেই আমাদের দুর্ভোগ কাটে না। গত বছরের আষাঢ় মাসে জোয়ারের পানিতে আমার হাঁস-মুরগি ভেসে যায়।’

চর পাতিলা গ্রামের মো. আলমগির (৫৬) বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছি। দিনে-রাতে দুইবার জোয়ারের পানি উঠে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চৌকিতে বসে রাত পার করতে হয়। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও আমার মতো অধিকাংশ মানুষ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। নিজের ঘর রেখে কোথায় যাব?’

চর মাদ্রাজ এলাকার আবদুল জলিল, লোকমান, সেলিম, কামাল, কালু সর্দার জানান, গত চার দিন ধরে জোয়ারের পানিতে বসতঘর ডুবে রয়েছে। শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে খুব বিপদে আছি। গরু, ছাগল কোনো মতে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। অনেকের হাঁস, মুরগি, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। দিনের তুলনা রাতে জোয়ার বেড়ে যায়। এতে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। জোয়ারের পানি বেড়ে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না।

চর কুকরি মুকরি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ‘চর কুকরি মুকরি ইউনিয়নের চর পাতিলা এলাকার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। দিনে রাতে দুইবার জোয়ার আসে। ভাটায় পানি কিছুটা কমলেও জোয়ার চাপে আবার বেড়ে যায়। ইউপি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, ‘সব চরাঞ্চলসহ নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (ডিভিশন-২) এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এ অবস্থা আরও কিছুদিন বিরাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত