Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শিল্পসত্তাকে অনুসরণ করা শিল্পীর কাজ

শিল্পসত্তাকে অনুসরণ করা শিল্পীর কাজ

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে শবনম ফেরদৌসীর প্রথম সিনেমা ‘আজব কারখানা’। আগামী ১২ জুলাই দেশব্যাপী মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনেমার অভিনেতা পশ্চিমবঙ্গের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। এদিন ছিল অভিনেতার জন্মদিন। নতুন সিনেমা, শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, প্রথমবার ঢাকায় জন্মদিন উদ্‌যাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বলা পরমব্রতের নানা কথা তুলে এনেছেন শিহাব আহমেদ

আজব কারখানার গল্প 
সিনেমাটি তৈরি হয়েছে শহুরে এক রকস্টারকে নিয়ে। যে ব্যক্তি গ্রামবাংলার বাউলশিল্পীদের সংস্পর্শে এসে নিজের জীবনের নতুন অর্থ খুঁজতে শুরু করে। গল্পে আবহমান বাংলার বিভিন্ন গানের ধারা, ঘরানা ও মর্মবাণী তুলে ধরা হয়েছে। 

যে কারণে যুক্ত হওয়া 
প্রান্তিক বাংলা গান সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই নানাভাবে আমার মধ্যে ছিল। বাংলা লোকায়ত গান-বাজনার মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা। আমার মা-বাবা দীর্ঘ সময় বাউল, ফকির ও দরবেশসঙ্গ করেছেন। এমনকি আমার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় একটি বাউল মেলা থেকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ভাষার সংস্কৃতি, গানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আমার। তবে একটা বয়সের পর ছোটবেলার সেই সংস্কৃতির প্রতি টানটা আবার বেড়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে অনেকটা সময় সঙ্গ করেছি। গানের গবেষণায় বাউলদের সঙ্গে থেকেছি। সে কারণে ‘আজব কারখানা’র চিত্রনাট্য পড়ার সময় আমার আগ্রহ জন্মায়। আমাদের উপমহাদেশের মানুষেরা আদবকায়দায় প্রতিদিন শহুরে হচ্ছি। কিন্তু কোথায় যেন আমাদের হৃদয়ের ভেতরটা একেবারে কাঙাল। এখনো যখন আমরা শিকড়ের গানগুলো শুনি, তখন ওই ডাকটা শুনতে পাই। সেই ডাকটা আমাদের ভেতরে আলোড়ন সৃষ্টি করে, রিং রিং করে আওয়াজ দেয়। যেই আওয়াজ শুনে বুঝতে পারি, আমরা কতটা কাঙাল। এ কারণেই এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

কাজ করার অভিজ্ঞতা 
যে ধারার গান-বাজনার কথা সুদীপ চক্রবর্তীর বইয়ে পড়েছি বা অন্য গবেষকদের কাজে পড়েছি, সেই গানগুলো চাক্ষুষ করার সুযোগ পেয়েছি এ সিনেমার শুটিংয়ে। সাধুসঙ্গ অনেক করেছি কিন্তু একজন সারিগান শিল্পী, জারিগান শিল্পী, একজন ঘাটুগান শিল্পী, একজন ভাওয়াইয়া শিল্পীকে সহঅভিনেতা হিসেবে পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার। এঁদের সঙ্গে আদানপ্রদানটা মানুষ হিসেবে কিছু শতাংশ হলেও আমাকে ঋদ্ধ করেছে। আর কোনো পরিচালক প্রথম সিনেমা বানাতে গেলে তাঁর মধ্যে অতটা পরিকল্পনা থাকে না, সেটা শবনমের ক্ষেত্রেও হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় প্ল্যানিংয়ের অভাব দেখতে পেয়েছি। এমনও হয়েছে, সহজ কিছু জিনিস দেখে মনে হয়েছে রকেট সায়েন্স। কিন্তু দিন শেষে বলব, শবনম যে গল্পটা ভেবেছে, তার মধ্য দিয়ে আমাকে এমন একটা অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে, সেটার জন্য সাত খুন মাফ।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।শিল্পসত্তার তাগিদ
আমরা প্রত্যেকেই যশখ্যাতির জন্য কাজ করি। তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে রাতে ঘুমাতে গেলে বা ঘুম থেকে ওঠার সময় নিজেদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার, আমরা যে জিনিসের জন্য ছুটে চলেছি, সেটা শুধু যশ বা খ্যাতি অর্জন নয়। শিল্পসত্তাকে অনুসরণ করা শিল্পীর মুখ্য কাজ। সেই তাগিদ থেকে কিছু কাজ করা হয়। তেমন একটি সিনেমা আজব কারখানা। কোন সিনেমার দর্শক কে হবেন, তা বলা মুশকিল। সব সিনেমাতেই কিছু কম ভালো জিনিস থাকে, কিছু বেশি ভালো জিনিস থাকে। সেটা দিয়ে তুল্যমূল্য বিচারে গিয়ে লাভ নেই। আজব কারখানা যদি সেই মানুষগুলোর কাছে পৌঁছায়, যাঁরা শহুরে হয়েও শিকড়ে ফিরতে চান বা টান আছে, তাঁদের ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। 

টালিউডের সঙ্গে ঢালিউডের পার্থক্য
পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দিন ধরে যেহেতু কাজ হচ্ছে, তাই পরিকাঠামো দিক থেকে একটু বেশি গোছানো। কিন্তু বাংলাদেশে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে যে কাজ হচ্ছে, তা অসাধারণ। যেমন ‘আয়নাবাজি’, ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’ বা ‘তুফান’। মৌলিক ভাবনার দিক থেকে প্রশংসা করতেই হয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের দর্শক বিরাট একটা ভূমিকা পালন করছে। তাঁরা যেভাবে নতুন সময়ের বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমাকে সমর্থন করছে, সেটা অসাধারণ।

প্রথমবার ঢাকায় জন্মদিন
জন্মদিনেই এবার ঢাকা আসা হবে, এটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। জন্মদিনে কলকাতা ছাড়া অন্য কোথাও যদি থাকতে ভালো লাগতে পারে, সেটা ঢাকা। তার কারণ, এই শহরের সঙ্গে আমার আত্মিক যোগাযোগ। উষ্ণভাবে এত মানুষ আমায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, সেটা গায়ে মেখে খুব ভালো লাগছে। সব সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ শুভেচ্ছা পাই, সেটা অভূতপূর্ব, ভাবা যায় না।

বিদেশি হিসেবে না দেখার আহ্বান
বাংলাদেশে এলে একবারও মনে হয় না ভিন্ন দেশে সফরে এসেছি। সবার ভালোবাসার জন্যই এমন অনুধাবন। সৌভাগ্যক্রমে আমি যে সিনেমাগুলো করেছি বাংলাদেশে, সেগুলো শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয় বা ঢাকার মধ্যে শুটিং আটকে থাকেনি। আমার সুযোগ হয়েছে পুরো দেশকে চেনার, তার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার। আমি চেষ্টা করি, বাংলাদেশকে আলাদা একটি রাষ্ট্র হিসেবে চিন্তা না করতে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাকেও বিদেশি হিসেবে দেখবেন না। 

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।পছন্দের অভিনয়শিল্পী 
আমি মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরীর কাজের বড় ভক্ত। আমার সমসাময়িকদের মধ্যে নিশোর কাজ ভালো লাগে, অপূর্বকে ভালো লাগে। জয়ার সঙ্গে আমার ভীষণ ভালো সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়ে ফারিণের কাজ দেখা হয়েছে। খুব অল্প বয়সেই নিজেকে শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছে। এ ছাড়া পরীমণিকে আমার মনে হয় পাওয়ার হাউস অব ট্যালেন্ট। তাঁকে যদি আরও একটু ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, তিনি খুব ভালো করবেন। তাঁর যেটুকু কাজ দেখেছি, দুর্দান্ত মনে হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত