Ajker Patrika

বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের মুখোমুখি

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১০: ০৫
বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের মুখোমুখি

বিশ্বজুড়ে ব্যাপ্ত পুঁজিবাদীব্যবস্থাটা এখন বর্বরতার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। পুঁজিবাদমনস্ক অতি নিকৃষ্ট স্তরের মানুষেরা রাষ্ট্রের কর্তা হচ্ছে, রাষ্ট্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে, সঙ্গে রয়েছে ব্যবসায়ীরা, তবে এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য এটাও যে পুঁজিবাদীব্যবস্থাটা এখন ভেঙে পড়বে-পড়বে অবস্থায় পৌঁছে গেছে। তার সব খেলা, কৌশল, প্রতিষ্ঠানই এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ধরা যাক নোবেল পুরস্কারের কথাই। এই পুরস্কার একসময়ে অত্যন্ত গৌরবজনক ছিল, এখন আর তেমন নেই; বিশেষ করে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের অবস্থাটা তো বেশ কাহিল। কয়েক বছর আগে দেখা গেল দেওয়ার মতো কোনো লেখক নেই, তাই পুরস্কার দেওয়া হলো একজন সংগীত রচয়িতা ও গায়ককে। পরের বছর পুরস্কার দেওয়াই হলো না; কারণ? কারণ দাতা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা। পুরস্কার কয়েক বছর আগে যে দুজনকে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের একজন বসনিয়ায় গণহত্যাকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছেন। অর্থনীতিতে আবার নোবেল পেয়েছেন তিনজন; তাঁদের দুজন আবার স্বামী-স্ত্রী। স্বামীটি বাঙালি। সেই খবরে বাঙালি মহলে বেশ উৎফুল্ল দেখা গিয়েছিল, পরে সেটা স্তিমিত হয়ে গেছে। কারণ, জানা গেছে বাঙালি ভদ্রলোক, নাম অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নৈতিক দিক থেকে মোটেই প্রশংসনীয় মানের নন। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন বাঙালি, তিনিও উঁচু স্তরের একজন অধ্যাপক ছিলেন। যাঁর সঙ্গে মিলে তিনি পুরস্কারটি পেলেন তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। ফরাসি বংশোদ্ভূত এই নারী একদা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের ছাত্রী ছিলেন; দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণা করতে তাঁরা ভারতে কয়েক বছর একত্রে কাটিয়েছেন। তা ছাত্রীটিকে বিয়ে করতে ওই শিক্ষকের বিশেষ রকমের আগ্রহ যে ছিল, তা নয়; কিন্তু না করে উপায় থাকেনি। কেননা, ছাত্রী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে তিনি মা হতে যাচ্ছেন এবং তাঁর ভাবী সন্তানের পিতা অন্য কেউ নন, তাঁর শিক্ষক মহাশয়ই। ফলে প্রথম স্ত্রী পরিত্যক্ত হয়েছেন। সেই স্ত্রী ইংল্যান্ডে চলে গেছেন একমাত্র পুত্রসন্তানটিকে সঙ্গে নিয়ে। ঘটনাধারার অত্যাচারে পুত্রটি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একসময় আত্মহত্যাই করে ফেলে। সেটা গেল পারিবারিক তথ্য, এ নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই; তবে লক্ষ করার বিষয় হলো তাঁর চিন্তাধারা, যেটি খাঁটি পুঁজিবাদী এবং যেটির প্রচারে তিনি সবেগে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর বইপত্র পড়ার সুযোগ এখনো আমাদের হয়নি, তবে সাক্ষাৎকার পড়ে বিলক্ষণ জানা গেছে, তিনি কোন ঘরানার মানুষ। পুঁজিবাদী তো হবেনই, না হয়ে উপায় নেই; কিন্তু মনে হচ্ছে বেশ কট্টরপন্থী। যেমন তিনি বলেছেন, উন্নয়নের জন্য দুর্নীতি কোনো অন্তরায় নয়; অর্থাৎ প্রকারান্তরে বলা যে উন্নতি চাইলে দুর্নীতি মেনে নিতে হবে, যে বাণীর উচ্চারণ আমরা নিম্ন, উচ্চ, নীরব কণ্ঠে অহরহ শুনছি, বাধ্য হচ্ছি শুনতে। তিনি আরও একটা কথা বলেছেন। জানিয়েছেন যে বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে বেশি আদর পাচ্ছে অতিধনীরা এবং অতিগরিবেরা। যত কষ্ট মধ্যবিত্তের। মধ্যবিত্ত যে কষ্টে আছে এবং অতিধনীরা যে আদর পাচ্ছে, সেটা তো আমাদেরও অভিজ্ঞতা। কিন্তু অতিগরিব? হ্যাঁ, তারাও আদর পায়। তাদের জন্য এনজিও আছে, দাতারা আছে, এমনকি স্বীয় ব্যথায় কাতর মধ্যবিত্তও রয়েছে; কিন্তু এই ব্যবস্থাটা যে ভাঙা দরকার, অন্ততপক্ষে অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠা যে অত্যাবশ্যক, সেটা তো আমরা খুবই অনুভব করি। তবে ভরসা রাখি যে এই ব্যবস্থাটা ভাঙবে; ভাঙবে এই জন্য যে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যাই অধিক এবং তারা এ ব্যবস্থা মেনে নেবে না; মেনে নিচ্ছে না।

পুঁজিবাদীব্যবস্থাটা যে পিতৃতান্ত্রিক, সেটা তো পদে পদে টের পাই। বাঙালি সমাজে পিতৃতান্ত্রিকতার তৎপরতা সামন্তবাদের আধিপত্যের কালে বেশ ভালোভাবেই ছিল, পরেও যে একেবারে বিদায় নিয়েছে তা নয়; বরং আরও দুর্বার হয়ে উঠেছে। বাংলা সাহিত্যে নারীদের প্রতি যাঁরা সহানুভূতিশীল এমন লেখকদের বেলাতেও দেখা গেছে টানটা কিন্তু বাবার দিকেই। বাবা অনেক ক্ষেত্রেই কর্তব্য পালনে অপারগ, কখনো কখনো করুণার পাত্র, কিন্তু তাঁরাই কর্তা; তাঁদের প্রতিই পুত্রদের তো অবশ্যই, কন্যাদেরও বিশেষ রকমের পক্ষপাত। শরৎচন্দ্র ও বিভূতিভূষণের কথা বেশ স্মরণে আসে। ১৯৩৫ সালে লেখা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি-প্রদীপ উপন্যাসে একজন পিতার কথা আছে, তিনি দার্জিলিংয়ের চা-বাগানে অফিসার ছিলেন। দাপুটে মানুষ। স্নেহপ্রবণও। তবে কর্তৃত্বপরায়ণ এবং মদ্যাসক্ত। সপ্তাহে অন্তত একবার মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান না করলে তাঁর চলত না এবং সেই সময়ে তিনি স্ত্রী-সন্তান কোনো বাছবিচার করতেন না, সবাইকে ইচ্ছামতো পেটাতেন। মদ্যাসক্তির কারণেই হবে, একসময় তিনি কর্মচ্যুত হলেন। তাঁকে চলে আসতে হলো পৈতৃক গৃহে। চাকরি নেই; চাকরি খোঁজেন, পান না। থাকেন বড় ভাইয়ের কর্তৃত্বাধীন। আশ্রিত। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাকে বলে, সেটা তিনি যতটা না বোঝেন তার চেয়ে বেশি বোঝেন তাঁর স্ত্রী। একান্নবর্তী পরিবার কত যে বীভৎস হতে পারে, তার ছবি সামন্তবাদের প্রতি পিছুটানসম্পন্ন ঔপন্যাসিকের পক্ষেও আড়াল করাটা সম্ভব হয় না। ওই পিতা শেষ পর্যন্ত পাগলই হয়ে গেলেন। প্রলাপ বকেন। তাঁকে বেঁধে রাখা হয়। কলকাতায় পাঠানো হলো মানসিক ব্যাধির হাসপাতালে। সেখান থেকে পালিয়ে চলে এলেন বাড়িতে। অবস্থা যখন আরও খারাপ হলো, তখন জিতুর জ্যাঠা-কাকারা (জিতু হচ্ছে উপন্যাসের নায়ক, কথকও সে-ই) মিলে জিতু, তার দাদা ও বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গেল বাড়ি থেকে অনেক দূরে, বিলের অপর পাড়ে, এক জঙ্গলে। সেখানে সন্ধ্যাবেলায় জিতুর বাবাকে ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে, আশা ছিল যে তিনি আর ফিরে আসতে পারবেন না। ওখানেই শেষ হয়ে যাবেন। তিন দিনের দিন বাবা ঠিকই বাড়িতে এসে হাজির। তারপর সেই যে শয্যাশায়ী হলেন আর উঠলেন না। বিভূতি-সাহিত্যে বহু মর্মস্পর্শী দৃশ্য আছে, কিন্তু বাবাকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে কিশোর দুই সন্তানের দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ফিরে আসার এই দৃশ্যটির সঙ্গে অন্য কোনোটাই বোধ করি তুলনীয় নয়। বাবা চলে গেলেন, কিন্তু তাতে পিতৃতন্ত্র যে ভাঙল, তা তো নয়। পিতৃহীন কিশোর জিতু একেবারে অসহায় অবস্থায় পড়েছে, অনেক দুঃখ-কষ্ট সে সহ্য করেছে; কিন্তু দেখা গেল ঠিক নিজের পিতার মতো না হলেও সে ওই পিতৃতান্ত্রিকই রয়ে গেছে। ব্যবস্থাটা যে ভাঙার দরকার, জিতু তা বোঝে না। বোঝাটা তার পক্ষে সম্ভবও নয়; সে পালিয়ে যায়, আশ্রয় নেয় আধ্যাত্মিক জগতে। বাস্তবতা কিন্তু বলছে যে ব্যবস্থাটাকে ভাঙতে হবে; নইলে জিতুর মা, জিতুর প্রতিমার মতো দেখতে বোন সীতা, অকালপ্রয়াত তার সাদাসিধা বড় ভাই, কারোরই মুক্তি নেই। মুক্তি নেই জিতুর বাবারও।

বিশ্বজুড়েই এখন মুক্তির জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। মূল ভরসাটা এখানেই। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ এখনই কমাতে হবে, নইলে পৃথিবী টিকবে না; রূপক নয়, আক্ষরিক অর্থেই যাবে সে রসাতলে। একের পর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা উপস্থিত থাকছেন; তথ্য আসছে, আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু তাঁদের শুভেচ্ছার ওপর ভরসা করাটা একেবারেই বৃথা। তাঁরা সবাই পুঁজিবাদের আজ্ঞাবাহী সেবক। ভরসা ওই জনগণই। তবে জনগণের চেতনা, ক্ষোভ, বিক্ষোভ, শোভাযাত্রা, ঘেরাও সবকিছুই অফলপ্রসূই রয়ে যাবে যদি আসল কর্তব্যটি পরিষ্কারভাবে উঠে না আসে এবং সেই কর্তব্য পালনে ঐক্যবদ্ধ না হওয়া যায়।

কর্তব্যটি অন্য কিছু নয়, পুঁজিবাদকে বিদায় করা। পুঁজিবাদ ব্যক্তি নয় যে তাকে সন্ধ্যাবেলা বিলের ওপাশে নির্জন জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসা যাবে, তা ছাড়া ফেলে দিলেও তো সে ঘরে ফিরে আসবে। পুঁজিবাদ একটি আর্থসামাজিক ব্যবস্থা, বিশেষ একধরনের সম্পর্ক, একটি আদর্শ এবং সভ্যতার বিবর্তনে গড়ে ওঠা একটি সংস্কৃতি, যাকে ভাঙতে হবে, একেবারে ভেতর থেকে এবং কেবল ভাঙলেই কুলাবে না, তার জায়গায় সামাজিক মালিকানার নতুন এক ব্যবস্থা গড়ে তোলাটা অত্যাবশ্যক হবে। তখন সাগিরা মোর্শেদ তাঁর ভাশুরের হাতে আর নিহত হবেন না, মন্টু বিশ্বাসকেও জেল খাটতে হবে না তার না-করা অপরাধের জন্য। ত্বকী ও আবরারের মৃত্যু তাদের পিতা-মাতা ও সহপাঠীদের সহ্য করতে হবে না। মানুষে-মানুষে সম্পর্ক হবে মৈত্রীর ও সহযোগিতার; মানুষের সৃষ্টিশীলতা হবে অবিরত; পৃথিবীতে দারিদ্র্য থাকবে না। নিপীড়ন তো নয়ই। ভাঙার ও গড়ার এই পথটা হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব, যে বিপ্লব ঘটলে সমাজের অভ্যন্তরে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদিতা থাকবে না—পিতার তো নয়ই, মাতারও নয়।

বর্তমানে দাঁড়িয়ে এই ভবিষ্যৎকে গড়ার জন্যই মানুষ এখন কাজ করছে। এ কাজ কত তাড়াতাড়ি ও কীভাবে সফল হয়, তার ওপরই বিশ্বের ভবিষ্যতের একান্ত নির্ভরতা। এই মুহূর্তে পৃথিবীর অন্তত ১০টি দেশে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ চলছে। ইরাকে দলবলসহ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, সুদানের স্বৈরশাসক পদত্যাগ করেও রক্ষা পাননি, তাঁর দলকেই বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা বাড়বে, বাড়তে থাকবে, কিন্তু তাতে পৃথিবীটা বদলাবে না, যদি না ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

এ কাজ ভালো মানুষদের। কিন্তু এটা তাঁরা করতে পারবেন না, যদি না একত্র হন, একত্র হতে হবে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে। কেবল একত্র হওয়া নয়, দরকার হবে সংঘবদ্ধ হওয়া এবং বিকল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত