ড. মইনুল ইসলাম

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
দেশের পত্রপত্রিকায় ও ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় খসড়াটি সম্পর্কে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে বিলটি সংসদে পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ সমস্যার একটা ভালো সমাধান পাওয়া যেতে পারে। আমার মতে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নেহাতই কতগুলো ‘কসমেটিক পরিবর্তন’।
কোনো পরিবার থেকে পরিচালক তিনজনে নামিয়ে আনা, গাড়ি, বাড়ি ও কোম্পানির মালিকানা নেওয়ায় বাধা, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ কিছুটা সংকুচিত করা, কিছু রাজনৈতিক বিধিনিষেধ, বিদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা, নতুন ঋণ নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ইত্যাকার পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আসলে সমস্যার মূল জায়গাটায় হাতই দেওয়া হয়নি। সমস্যার মূলে রয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে শত শত বা হাজার হাজার খেলাপি ঋণ মামলা বছরের পর বছর অমীমাংসিতভাবে ঝুলিয়ে রেখে ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘খেলাপি ঋণ ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি’ অব্যাহত রাখতে পারা। এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার কোনো প্রস্তাব এই খসড়া বিলে আমি দেখতে পাইনি।
আমার মতে, দুঃখজনকভাবে সরকার এখনো খেলাপি ঋণের ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার খেলাই চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আইএমএফ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তাই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এই ‘কসমেটিক পরিবর্তনগুলো’ আনার নাটক সাজিয়ে চলেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার শর্ত দিয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী যত দিন দায়িত্বে থাকবেন, তত দিন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সত্যিকারভাবে দমনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এই সরকার গ্রহণ করবে না—এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা। কেন এ কথা বলছি তার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, তাঁর আমলে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এতদুদ্দেশ্যে অতি দ্রুত তিনি নিচের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করেছিলেন:
১) দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০১২ সাল থেকে প্রচলিত তিন ধরনের শ্রেণীকরণের নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের অনাদায়ি ঋণকে শ্রেণীকরণের নতুন নিয়ম চালু করেছে: এক. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের তিন মাস পর যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, নতুন নিয়মে তিন মাসের পরিবর্তে সময়টা ছয় মাস করা হয়েছে; দুই. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছয় মাসের বেশি যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘ডাউটফুল ঋণ’ বলা হতো, নতুন নিয়মে ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ‘ডাউটফুল’ শ্রেণীকরণ হচ্ছে এবং তিন. আগের নিয়মে ৯ মাসের বেশি কোনো ঋণ খেলাপি হলে ‘মন্দ ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, এখন এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ঋণ অনাদায়ি হলে ‘মন্দ ঋণ’ বা ‘লস’ শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের নিয়মটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোনো শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে ফিরে গেল।
২) এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপনের নিয়মনীতি অনেকখানি শিথিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করল: আগের নিয়মে যেখানে পাঁচ বছরের খেলাপি মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ করার যোগ্য বিবেচিত হতো, সে ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে দুই বা তিন বছরের মন্দ ঋণও ‘রাইট অফ’ করায় কোনো বাধা থাকবে না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপন করার মানে হলো ওই অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের হিসাবটা ব্যাংকের মূল ব্যালেন্সশিট থেকে অপসারণ করে আরেকটি লেজারে সংরক্ষণ করা। ‘রাইট অফ’ করার দুটি শর্ত হলো: ১. ওই ঋণ সুদাসলে আদায়ের জন্য ব্যাংক মামলা করবে, ২. যে পরিমাণ ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয়, তার সমপরিমাণ অর্থ ‘প্রভিশনিং’ বা ‘সঞ্চিতি’ করতেই হবে। প্রভিশনিং মানে হলো, ওই পরিমাণ অর্থ অন্য কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না। রাইট অফ করার ফলে ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোনের পরিমাণ ঠিক অতটুকু কম দেখানো যাবে। অতএব, নতুন নিয়ম চালু করে ক্লাসিফাইড লোন কমানোর হাতিয়ার ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো। আর একটা সুবিধা ঘোষিত হলো, মামলা করার বাধ্যবাধকতার জন্য আগে যে সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর) ছিল ৫০ হাজার টাকা, ওটাকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা।
৩) তারপর ২৫ মার্চ ২০১৯ তারিখে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, মাত্র ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ প্রথম কিস্তিতে শোধ করলে ঋণখেলাপিকে ১০ বছর সময় দেওয়া হবে, যার মধ্যে তিন মাসের কিস্তিতে মাত্র ৭ শতাংশ সুদে বাকি ঋণ শোধ করা যাবে (পরে তিনি বললেন, সুদের হার ৯ শতাংশ হবে)।
ওপরের পদক্ষেপগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, একজন ‘ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী’ তাঁর ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী বন্ধুদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দরদ দেখিয়ে চলেছেন। তাঁর এসব পদক্ষেপ খেলাপি ঋণ সমস্যাকে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোন ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় নেমে গেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের শীর্ষ ২০ জন ঋণখেলাপির যে তালিকা অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেছেন, তার মধ্যে দেশের পরিচিত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপির একজনের নামও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই হয়তো ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ জমা দিয়ে নিজেদের নাম খেলাপির তালিকা থেকে গায়েব করে দিয়েছেন! অথচ, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, দেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ইতিমধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।
গত চার বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো গতি সঞ্চার করা যায়নি। এই বিপুল খেলাপি ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের ঝুলে থাকা মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ওগুলোকে ক্লাসিফাইড লোনের হিসাবে প্রকাশ করা যায় না। দেশের ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা’ তাঁদের অর্থশক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ব্যবহার করে বছরের পর বছর মামলাগুলো ঝুলিয়ে রাখতে সমর্থ হচ্ছেন এবং এই খেলাপি ঋণের বৃহদংশই তাঁরা দেশের বাইরে পাচার করে বিদেশে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি কিনে বহালতবিয়তে সপরিবার দেশে-বিদেশে দিনাতিপাত করছেন।
দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থা ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্যই প্রয়োজন সব ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির বিচারকে ত্বরান্বিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু আপিল করা যায় না, তাই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তাঁদের জেলের ভাত খাওয়াতে হলে এবং তাঁদের সম্পত্তি ক্রোক করতে হলে ট্রাইব্যুনাল ছাড়া গত্যন্তর নেই। ১৯৯৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরের বছর আবার বিচারপতি হাবিবুর রহমান একই আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তদানীন্তন সরকার কর্ণপাত করেনি। অথচ এই দুজনই ছিলেন এ দেশের প্রধান বিচারপতি।
১৯৯৯ সালে দেশে দেউলিয়া আইন পাস হওয়ার পর প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। তিনি তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আবার আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ায় আমৃত্যু তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আর কাউকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি।
২৪ বছর ধরে দেউলিয়া আদালতটি ঘুমিয়ে রয়েছেন। দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থঋণ আদালতের রায়ের আপিল মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে কয়েকটি ‘ডেজিগনেটেড বেঞ্চ’ স্থাপনের জন্য কয়েকবার প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর ওই সুপারিশে কোনো সাড়া মেলেনি। এসব বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিচারব্যবস্থার এহেন দুর্নীতি ও বেহাল অবস্থার নিরসন চান না। এখন দেশের জনগণের মধ্যে একটা বিষয়ে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অধিকাংশই যেহেতু হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে আসছে, তাই ব্যাংকঋণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার হওয়া এখন একেবারেই সহজ হয়ে গেছে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের মধ্যে ব্যাংকের মালিক, পরিচালক, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাই যেহেতু সবচেয়ে বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার একচ্ছত্র সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, তাই তাঁদের সুবিধাগুলো কাটছাঁট করে খেলাপি ঋণ কমানো যেতে পারে বলে ধারণা গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল করা ছাড়া খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
দেশের পত্রপত্রিকায় ও ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় খসড়াটি সম্পর্কে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে বিলটি সংসদে পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ সমস্যার একটা ভালো সমাধান পাওয়া যেতে পারে। আমার মতে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নেহাতই কতগুলো ‘কসমেটিক পরিবর্তন’।
কোনো পরিবার থেকে পরিচালক তিনজনে নামিয়ে আনা, গাড়ি, বাড়ি ও কোম্পানির মালিকানা নেওয়ায় বাধা, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ কিছুটা সংকুচিত করা, কিছু রাজনৈতিক বিধিনিষেধ, বিদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা, নতুন ঋণ নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ইত্যাকার পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আসলে সমস্যার মূল জায়গাটায় হাতই দেওয়া হয়নি। সমস্যার মূলে রয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে শত শত বা হাজার হাজার খেলাপি ঋণ মামলা বছরের পর বছর অমীমাংসিতভাবে ঝুলিয়ে রেখে ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘খেলাপি ঋণ ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি’ অব্যাহত রাখতে পারা। এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার কোনো প্রস্তাব এই খসড়া বিলে আমি দেখতে পাইনি।
আমার মতে, দুঃখজনকভাবে সরকার এখনো খেলাপি ঋণের ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার খেলাই চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আইএমএফ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তাই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এই ‘কসমেটিক পরিবর্তনগুলো’ আনার নাটক সাজিয়ে চলেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার শর্ত দিয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী যত দিন দায়িত্বে থাকবেন, তত দিন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সত্যিকারভাবে দমনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এই সরকার গ্রহণ করবে না—এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা। কেন এ কথা বলছি তার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, তাঁর আমলে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এতদুদ্দেশ্যে অতি দ্রুত তিনি নিচের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করেছিলেন:
১) দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০১২ সাল থেকে প্রচলিত তিন ধরনের শ্রেণীকরণের নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের অনাদায়ি ঋণকে শ্রেণীকরণের নতুন নিয়ম চালু করেছে: এক. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের তিন মাস পর যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, নতুন নিয়মে তিন মাসের পরিবর্তে সময়টা ছয় মাস করা হয়েছে; দুই. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছয় মাসের বেশি যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘ডাউটফুল ঋণ’ বলা হতো, নতুন নিয়মে ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ‘ডাউটফুল’ শ্রেণীকরণ হচ্ছে এবং তিন. আগের নিয়মে ৯ মাসের বেশি কোনো ঋণ খেলাপি হলে ‘মন্দ ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, এখন এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ঋণ অনাদায়ি হলে ‘মন্দ ঋণ’ বা ‘লস’ শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের নিয়মটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোনো শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে ফিরে গেল।
২) এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপনের নিয়মনীতি অনেকখানি শিথিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করল: আগের নিয়মে যেখানে পাঁচ বছরের খেলাপি মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ করার যোগ্য বিবেচিত হতো, সে ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে দুই বা তিন বছরের মন্দ ঋণও ‘রাইট অফ’ করায় কোনো বাধা থাকবে না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপন করার মানে হলো ওই অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের হিসাবটা ব্যাংকের মূল ব্যালেন্সশিট থেকে অপসারণ করে আরেকটি লেজারে সংরক্ষণ করা। ‘রাইট অফ’ করার দুটি শর্ত হলো: ১. ওই ঋণ সুদাসলে আদায়ের জন্য ব্যাংক মামলা করবে, ২. যে পরিমাণ ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয়, তার সমপরিমাণ অর্থ ‘প্রভিশনিং’ বা ‘সঞ্চিতি’ করতেই হবে। প্রভিশনিং মানে হলো, ওই পরিমাণ অর্থ অন্য কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না। রাইট অফ করার ফলে ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোনের পরিমাণ ঠিক অতটুকু কম দেখানো যাবে। অতএব, নতুন নিয়ম চালু করে ক্লাসিফাইড লোন কমানোর হাতিয়ার ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো। আর একটা সুবিধা ঘোষিত হলো, মামলা করার বাধ্যবাধকতার জন্য আগে যে সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর) ছিল ৫০ হাজার টাকা, ওটাকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা।
৩) তারপর ২৫ মার্চ ২০১৯ তারিখে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, মাত্র ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ প্রথম কিস্তিতে শোধ করলে ঋণখেলাপিকে ১০ বছর সময় দেওয়া হবে, যার মধ্যে তিন মাসের কিস্তিতে মাত্র ৭ শতাংশ সুদে বাকি ঋণ শোধ করা যাবে (পরে তিনি বললেন, সুদের হার ৯ শতাংশ হবে)।
ওপরের পদক্ষেপগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, একজন ‘ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী’ তাঁর ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী বন্ধুদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দরদ দেখিয়ে চলেছেন। তাঁর এসব পদক্ষেপ খেলাপি ঋণ সমস্যাকে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোন ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় নেমে গেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের শীর্ষ ২০ জন ঋণখেলাপির যে তালিকা অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেছেন, তার মধ্যে দেশের পরিচিত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপির একজনের নামও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই হয়তো ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ জমা দিয়ে নিজেদের নাম খেলাপির তালিকা থেকে গায়েব করে দিয়েছেন! অথচ, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, দেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ইতিমধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।
গত চার বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো গতি সঞ্চার করা যায়নি। এই বিপুল খেলাপি ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের ঝুলে থাকা মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ওগুলোকে ক্লাসিফাইড লোনের হিসাবে প্রকাশ করা যায় না। দেশের ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা’ তাঁদের অর্থশক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ব্যবহার করে বছরের পর বছর মামলাগুলো ঝুলিয়ে রাখতে সমর্থ হচ্ছেন এবং এই খেলাপি ঋণের বৃহদংশই তাঁরা দেশের বাইরে পাচার করে বিদেশে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি কিনে বহালতবিয়তে সপরিবার দেশে-বিদেশে দিনাতিপাত করছেন।
দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থা ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্যই প্রয়োজন সব ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির বিচারকে ত্বরান্বিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু আপিল করা যায় না, তাই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তাঁদের জেলের ভাত খাওয়াতে হলে এবং তাঁদের সম্পত্তি ক্রোক করতে হলে ট্রাইব্যুনাল ছাড়া গত্যন্তর নেই। ১৯৯৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরের বছর আবার বিচারপতি হাবিবুর রহমান একই আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তদানীন্তন সরকার কর্ণপাত করেনি। অথচ এই দুজনই ছিলেন এ দেশের প্রধান বিচারপতি।
১৯৯৯ সালে দেশে দেউলিয়া আইন পাস হওয়ার পর প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। তিনি তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আবার আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ায় আমৃত্যু তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আর কাউকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি।
২৪ বছর ধরে দেউলিয়া আদালতটি ঘুমিয়ে রয়েছেন। দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থঋণ আদালতের রায়ের আপিল মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে কয়েকটি ‘ডেজিগনেটেড বেঞ্চ’ স্থাপনের জন্য কয়েকবার প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর ওই সুপারিশে কোনো সাড়া মেলেনি। এসব বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিচারব্যবস্থার এহেন দুর্নীতি ও বেহাল অবস্থার নিরসন চান না। এখন দেশের জনগণের মধ্যে একটা বিষয়ে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অধিকাংশই যেহেতু হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে আসছে, তাই ব্যাংকঋণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার হওয়া এখন একেবারেই সহজ হয়ে গেছে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের মধ্যে ব্যাংকের মালিক, পরিচালক, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাই যেহেতু সবচেয়ে বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার একচ্ছত্র সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, তাই তাঁদের সুবিধাগুলো কাটছাঁট করে খেলাপি ঋণ কমানো যেতে পারে বলে ধারণা গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল করা ছাড়া খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মইনুল ইসলাম

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
দেশের পত্রপত্রিকায় ও ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় খসড়াটি সম্পর্কে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে বিলটি সংসদে পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ সমস্যার একটা ভালো সমাধান পাওয়া যেতে পারে। আমার মতে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নেহাতই কতগুলো ‘কসমেটিক পরিবর্তন’।
কোনো পরিবার থেকে পরিচালক তিনজনে নামিয়ে আনা, গাড়ি, বাড়ি ও কোম্পানির মালিকানা নেওয়ায় বাধা, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ কিছুটা সংকুচিত করা, কিছু রাজনৈতিক বিধিনিষেধ, বিদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা, নতুন ঋণ নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ইত্যাকার পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আসলে সমস্যার মূল জায়গাটায় হাতই দেওয়া হয়নি। সমস্যার মূলে রয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে শত শত বা হাজার হাজার খেলাপি ঋণ মামলা বছরের পর বছর অমীমাংসিতভাবে ঝুলিয়ে রেখে ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘খেলাপি ঋণ ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি’ অব্যাহত রাখতে পারা। এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার কোনো প্রস্তাব এই খসড়া বিলে আমি দেখতে পাইনি।
আমার মতে, দুঃখজনকভাবে সরকার এখনো খেলাপি ঋণের ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার খেলাই চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আইএমএফ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তাই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এই ‘কসমেটিক পরিবর্তনগুলো’ আনার নাটক সাজিয়ে চলেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার শর্ত দিয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী যত দিন দায়িত্বে থাকবেন, তত দিন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সত্যিকারভাবে দমনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এই সরকার গ্রহণ করবে না—এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা। কেন এ কথা বলছি তার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, তাঁর আমলে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এতদুদ্দেশ্যে অতি দ্রুত তিনি নিচের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করেছিলেন:
১) দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০১২ সাল থেকে প্রচলিত তিন ধরনের শ্রেণীকরণের নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের অনাদায়ি ঋণকে শ্রেণীকরণের নতুন নিয়ম চালু করেছে: এক. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের তিন মাস পর যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, নতুন নিয়মে তিন মাসের পরিবর্তে সময়টা ছয় মাস করা হয়েছে; দুই. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছয় মাসের বেশি যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘ডাউটফুল ঋণ’ বলা হতো, নতুন নিয়মে ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ‘ডাউটফুল’ শ্রেণীকরণ হচ্ছে এবং তিন. আগের নিয়মে ৯ মাসের বেশি কোনো ঋণ খেলাপি হলে ‘মন্দ ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, এখন এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ঋণ অনাদায়ি হলে ‘মন্দ ঋণ’ বা ‘লস’ শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের নিয়মটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোনো শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে ফিরে গেল।
২) এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপনের নিয়মনীতি অনেকখানি শিথিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করল: আগের নিয়মে যেখানে পাঁচ বছরের খেলাপি মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ করার যোগ্য বিবেচিত হতো, সে ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে দুই বা তিন বছরের মন্দ ঋণও ‘রাইট অফ’ করায় কোনো বাধা থাকবে না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপন করার মানে হলো ওই অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের হিসাবটা ব্যাংকের মূল ব্যালেন্সশিট থেকে অপসারণ করে আরেকটি লেজারে সংরক্ষণ করা। ‘রাইট অফ’ করার দুটি শর্ত হলো: ১. ওই ঋণ সুদাসলে আদায়ের জন্য ব্যাংক মামলা করবে, ২. যে পরিমাণ ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয়, তার সমপরিমাণ অর্থ ‘প্রভিশনিং’ বা ‘সঞ্চিতি’ করতেই হবে। প্রভিশনিং মানে হলো, ওই পরিমাণ অর্থ অন্য কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না। রাইট অফ করার ফলে ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোনের পরিমাণ ঠিক অতটুকু কম দেখানো যাবে। অতএব, নতুন নিয়ম চালু করে ক্লাসিফাইড লোন কমানোর হাতিয়ার ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো। আর একটা সুবিধা ঘোষিত হলো, মামলা করার বাধ্যবাধকতার জন্য আগে যে সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর) ছিল ৫০ হাজার টাকা, ওটাকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা।
৩) তারপর ২৫ মার্চ ২০১৯ তারিখে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, মাত্র ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ প্রথম কিস্তিতে শোধ করলে ঋণখেলাপিকে ১০ বছর সময় দেওয়া হবে, যার মধ্যে তিন মাসের কিস্তিতে মাত্র ৭ শতাংশ সুদে বাকি ঋণ শোধ করা যাবে (পরে তিনি বললেন, সুদের হার ৯ শতাংশ হবে)।
ওপরের পদক্ষেপগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, একজন ‘ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী’ তাঁর ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী বন্ধুদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দরদ দেখিয়ে চলেছেন। তাঁর এসব পদক্ষেপ খেলাপি ঋণ সমস্যাকে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোন ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় নেমে গেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের শীর্ষ ২০ জন ঋণখেলাপির যে তালিকা অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেছেন, তার মধ্যে দেশের পরিচিত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপির একজনের নামও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই হয়তো ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ জমা দিয়ে নিজেদের নাম খেলাপির তালিকা থেকে গায়েব করে দিয়েছেন! অথচ, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, দেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ইতিমধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।
গত চার বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো গতি সঞ্চার করা যায়নি। এই বিপুল খেলাপি ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের ঝুলে থাকা মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ওগুলোকে ক্লাসিফাইড লোনের হিসাবে প্রকাশ করা যায় না। দেশের ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা’ তাঁদের অর্থশক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ব্যবহার করে বছরের পর বছর মামলাগুলো ঝুলিয়ে রাখতে সমর্থ হচ্ছেন এবং এই খেলাপি ঋণের বৃহদংশই তাঁরা দেশের বাইরে পাচার করে বিদেশে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি কিনে বহালতবিয়তে সপরিবার দেশে-বিদেশে দিনাতিপাত করছেন।
দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থা ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্যই প্রয়োজন সব ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির বিচারকে ত্বরান্বিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু আপিল করা যায় না, তাই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তাঁদের জেলের ভাত খাওয়াতে হলে এবং তাঁদের সম্পত্তি ক্রোক করতে হলে ট্রাইব্যুনাল ছাড়া গত্যন্তর নেই। ১৯৯৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরের বছর আবার বিচারপতি হাবিবুর রহমান একই আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তদানীন্তন সরকার কর্ণপাত করেনি। অথচ এই দুজনই ছিলেন এ দেশের প্রধান বিচারপতি।
১৯৯৯ সালে দেশে দেউলিয়া আইন পাস হওয়ার পর প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। তিনি তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আবার আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ায় আমৃত্যু তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আর কাউকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি।
২৪ বছর ধরে দেউলিয়া আদালতটি ঘুমিয়ে রয়েছেন। দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থঋণ আদালতের রায়ের আপিল মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে কয়েকটি ‘ডেজিগনেটেড বেঞ্চ’ স্থাপনের জন্য কয়েকবার প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর ওই সুপারিশে কোনো সাড়া মেলেনি। এসব বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিচারব্যবস্থার এহেন দুর্নীতি ও বেহাল অবস্থার নিরসন চান না। এখন দেশের জনগণের মধ্যে একটা বিষয়ে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অধিকাংশই যেহেতু হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে আসছে, তাই ব্যাংকঋণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার হওয়া এখন একেবারেই সহজ হয়ে গেছে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের মধ্যে ব্যাংকের মালিক, পরিচালক, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাই যেহেতু সবচেয়ে বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার একচ্ছত্র সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, তাই তাঁদের সুবিধাগুলো কাটছাঁট করে খেলাপি ঋণ কমানো যেতে পারে বলে ধারণা গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল করা ছাড়া খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
দেশের পত্রপত্রিকায় ও ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় খসড়াটি সম্পর্কে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে বিলটি সংসদে পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ সমস্যার একটা ভালো সমাধান পাওয়া যেতে পারে। আমার মতে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নেহাতই কতগুলো ‘কসমেটিক পরিবর্তন’।
কোনো পরিবার থেকে পরিচালক তিনজনে নামিয়ে আনা, গাড়ি, বাড়ি ও কোম্পানির মালিকানা নেওয়ায় বাধা, ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ কিছুটা সংকুচিত করা, কিছু রাজনৈতিক বিধিনিষেধ, বিদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা, নতুন ঋণ নেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ইত্যাকার পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আমি মনে করি, আসলে সমস্যার মূল জায়গাটায় হাতই দেওয়া হয়নি। সমস্যার মূলে রয়েছে দেশের বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে শত শত বা হাজার হাজার খেলাপি ঋণ মামলা বছরের পর বছর অমীমাংসিতভাবে ঝুলিয়ে রেখে ঋণখেলাপিরা তাদের আর্থিক ক্ষমতা ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘খেলাপি ঋণ ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি’ অব্যাহত রাখতে পারা। এই সমস্যাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার কোনো প্রস্তাব এই খসড়া বিলে আমি দেখতে পাইনি।
আমার মতে, দুঃখজনকভাবে সরকার এখনো খেলাপি ঋণের ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার খেলাই চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আইএমএফ আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের শর্ত জুড়ে দিয়েছে, তাই তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য এই ‘কসমেটিক পরিবর্তনগুলো’ আনার নাটক সাজিয়ে চলেছে সরকার। বিশ্বব্যাংকও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার শর্ত দিয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু বর্তমান অর্থমন্ত্রী যত দিন দায়িত্বে থাকবেন, তত দিন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সত্যিকারভাবে দমনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এই সরকার গ্রহণ করবে না—এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা। কেন এ কথা বলছি তার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, তাঁর আমলে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এতদুদ্দেশ্যে অতি দ্রুত তিনি নিচের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করেছিলেন:
১) দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ২০১২ সাল থেকে প্রচলিত তিন ধরনের শ্রেণীকরণের নিয়ম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের অনাদায়ি ঋণকে শ্রেণীকরণের নতুন নিয়ম চালু করেছে: এক. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের তিন মাস পর যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, নতুন নিয়মে তিন মাসের পরিবর্তে সময়টা ছয় মাস করা হয়েছে; দুই. পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছয় মাসের বেশি যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হতো, সেগুলোকে ‘ডাউটফুল ঋণ’ বলা হতো, নতুন নিয়মে ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ‘ডাউটফুল’ শ্রেণীকরণ হচ্ছে এবং তিন. আগের নিয়মে ৯ মাসের বেশি কোনো ঋণ খেলাপি হলে ‘মন্দ ঋণ’ শ্রেণীকরণ করা হতো, এখন এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ঋণ অনাদায়ি হলে ‘মন্দ ঋণ’ বা ‘লস’ শ্রেণীকরণ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের নিয়মটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ছিল, কিন্তু অর্থমন্ত্রীর চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোনো শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে ফিরে গেল।
২) এর পরই বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপনের নিয়মনীতি অনেকখানি শিথিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করল: আগের নিয়মে যেখানে পাঁচ বছরের খেলাপি মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ করার যোগ্য বিবেচিত হতো, সে ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে দুই বা তিন বছরের মন্দ ঋণও ‘রাইট অফ’ করায় কোনো বাধা থাকবে না। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মন্দ ঋণ ‘রাইট অফ’ বা অবলোপন করার মানে হলো ওই অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের হিসাবটা ব্যাংকের মূল ব্যালেন্সশিট থেকে অপসারণ করে আরেকটি লেজারে সংরক্ষণ করা। ‘রাইট অফ’ করার দুটি শর্ত হলো: ১. ওই ঋণ সুদাসলে আদায়ের জন্য ব্যাংক মামলা করবে, ২. যে পরিমাণ ঋণ ‘রাইট অফ’ করা হয়, তার সমপরিমাণ অর্থ ‘প্রভিশনিং’ বা ‘সঞ্চিতি’ করতেই হবে। প্রভিশনিং মানে হলো, ওই পরিমাণ অর্থ অন্য কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না। রাইট অফ করার ফলে ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোনের পরিমাণ ঠিক অতটুকু কম দেখানো যাবে। অতএব, নতুন নিয়ম চালু করে ক্লাসিফাইড লোন কমানোর হাতিয়ার ব্যাংকগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হলো। আর একটা সুবিধা ঘোষিত হলো, মামলা করার বাধ্যবাধকতার জন্য আগে যে সর্বনিম্ন সীমা (ফ্লোর) ছিল ৫০ হাজার টাকা, ওটাকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা।
৩) তারপর ২৫ মার্চ ২০১৯ তারিখে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, মাত্র ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ প্রথম কিস্তিতে শোধ করলে ঋণখেলাপিকে ১০ বছর সময় দেওয়া হবে, যার মধ্যে তিন মাসের কিস্তিতে মাত্র ৭ শতাংশ সুদে বাকি ঋণ শোধ করা যাবে (পরে তিনি বললেন, সুদের হার ৯ শতাংশ হবে)।
ওপরের পদক্ষেপগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, একজন ‘ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী’ তাঁর ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী বন্ধুদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দরদ দেখিয়ে চলেছেন। তাঁর এসব পদক্ষেপ খেলাপি ঋণ সমস্যাকে কার্পেটের নিচে লুকিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লাসিফাইড লোন ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় নেমে গেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের শীর্ষ ২০ জন ঋণখেলাপির যে তালিকা অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেছেন, তার মধ্যে দেশের পরিচিত রাঘববোয়াল ঋণখেলাপির একজনের নামও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই হয়তো ২ শতাংশ খেলাপি ঋণ জমা দিয়ে নিজেদের নাম খেলাপির তালিকা থেকে গায়েব করে দিয়েছেন! অথচ, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, দেশের প্রকৃত খেলাপি ঋণ ইতিমধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।
গত চার বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো গতি সঞ্চার করা যায়নি। এই বিপুল খেলাপি ঋণের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের ঝুলে থাকা মামলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ওগুলোকে ক্লাসিফাইড লোনের হিসাবে প্রকাশ করা যায় না। দেশের ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা’ তাঁদের অর্থশক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ব্যবহার করে বছরের পর বছর মামলাগুলো ঝুলিয়ে রাখতে সমর্থ হচ্ছেন এবং এই খেলাপি ঋণের বৃহদংশই তাঁরা দেশের বাইরে পাচার করে বিদেশে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি কিনে বহালতবিয়তে সপরিবার দেশে-বিদেশে দিনাতিপাত করছেন।
দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থা ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্যই প্রয়োজন সব ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির বিচারকে ত্বরান্বিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু আপিল করা যায় না, তাই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তাঁদের জেলের ভাত খাওয়াতে হলে এবং তাঁদের সম্পত্তি ক্রোক করতে হলে ট্রাইব্যুনাল ছাড়া গত্যন্তর নেই। ১৯৯৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পরের বছর আবার বিচারপতি হাবিবুর রহমান একই আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তদানীন্তন সরকার কর্ণপাত করেনি। অথচ এই দুজনই ছিলেন এ দেশের প্রধান বিচারপতি।
১৯৯৯ সালে দেশে দেউলিয়া আইন পাস হওয়ার পর প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। তিনি তড়িঘড়ি করে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আবার আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ায় আমৃত্যু তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আর কাউকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি।
২৪ বছর ধরে দেউলিয়া আদালতটি ঘুমিয়ে রয়েছেন। দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থঋণ আদালতের রায়ের আপিল মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে কয়েকটি ‘ডেজিগনেটেড বেঞ্চ’ স্থাপনের জন্য কয়েকবার প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর ওই সুপারিশে কোনো সাড়া মেলেনি। এসব বাস্তবতা পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিচারব্যবস্থার এহেন দুর্নীতি ও বেহাল অবস্থার নিরসন চান না। এখন দেশের জনগণের মধ্যে একটা বিষয়ে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে যে খেলাপি ঋণের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অধিকাংশই যেহেতু হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে আসছে, তাই ব্যাংকঋণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার হওয়া এখন একেবারেই সহজ হয়ে গেছে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের মধ্যে ব্যাংকের মালিক, পরিচালক, বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাই যেহেতু সবচেয়ে বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার একচ্ছত্র সুবিধা ভোগ করে চলেছেন, তাই তাঁদের সুবিধাগুলো কাটছাঁট করে খেলাপি ঋণ কমানো যেতে পারে বলে ধারণা গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল করা ছাড়া খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
০৬ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
০৬ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
০৬ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের’ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য একটি প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যেটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
০৬ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫