Ajker Patrika

চাঁপাইয়ে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ২০
Thumbnail image

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে পবিত্র রমজান মাসে চরম বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। যদিও বিদ্যুৎবিভ্রাট এই জেলার দীর্ঘদিনের পরিচিত সমস্যা। তবে গত কয়েক দিন এ সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

জানা গেছে, প্রথম রমজান থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিদিনই গড়ে চার-পাঁচবার করে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। বিদ্যুৎবিভ্রাট নিয়ে অনেককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস-সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং থাকছে।

বিদ্যুৎবিভ্রাটে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বলেন, একদিকে প্রচণ্ড গরম অন্যদিকে রমজান মাস। এ সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎহীন কয়েক ঘণ্টা তাঁদের কষ্টে কাটছে। তাঁরা বলছেন, এই গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা।

সদর উপজেলার ইসলামপুরের কামাল উদ্দীন জাফোরি বলেন, রমজানে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে তাঁরা অতিষ্ঠ। বিশেষ করে ইফতার ও সাহ্‌রির সময়েও বিদ্যুৎ থাকে না। তারাবিহর নামাজের সময়ও একই অবস্থা।

ভোলাহাটের বাসিন্দা আলী হায়দার রোমান তাঁর ফেসবুকের টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কী ন্যূনতম বিবেক নাই? রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গত ৭ দিন থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে লাইনের কাজ করার পরেও প্রথম রমজানের জোহর নামাজের সময় থেকে শুরু করেছে ভেলকিবাজি। পরদিন ইফতারের সময় বিদ্যুৎ ছিল না। তারাবিহর নামাজের আগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পরদিন আসর নামাজের আগে বিদ্যুৎ দিয়েছে। আবার ইফতারের সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়।’

নাচোল উপজেলার খেসবা এলাকার ধানচাষি আসাদুল করিম বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরা ধান চাষ করেছেন। বিএমডিএর গভীর নলকূপ থেকে সেচ সুবিধা নিয়ে থাকেন তিনি। এখন জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দেওয়ার প্রয়োজন। কয়েক দিন নলকূপের অপারেটরকে সিরিয়াল দিয়েও বিদ্যুৎ না থাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

টিকইল গ্রামে অপর বোরো ধানচাষি এনামুল করিম বলেন, তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তাঁর দাবি, বার বার গভীর নলকূপের অপারেটরের কাছে ঘুরেও সময়মতো পানি মিলছে না। ফলে পানির অভাবে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তিনি।

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, মৌখিকভাবে কৃষকেরা সময়মতো সেচ না পাওয়ার অভিযোগ করেছে। তবে বিষয়টি দেখভাল করেন স্থানীয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

তবে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নাচোলের সহকারী প্রকৌশলী শাহ মঞ্জুর আলম বলেন, এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎবিভ্রাট থাকে জেলাজুড়ে। সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। কৃষকেরা দিনে পানি নিতে চান না। তাই রাতের বেলা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্যাস-সংকটের কারণে উৎপাদন কম। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত মঙ্গলবার ২৩ মেগাওয়াট, তার আগের দুদিন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে। গ্যাসের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এর উত্তরণ ঘটবে না। গ্যাস-সংকটের কারণে এই অঞ্চলের থেকে ময়মনসিংহে আরও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তাঁরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত