Ajker Patrika

সন্তান চাইলে মেনে চলুন

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩: ০০
সন্তান চাইলে মেনে চলুন

নারীর জীবনের আকাঙ্ক্ষিত অনুভূতির নাম মাতৃত্ব। প্রত্যেক নারী-পুরুষই সন্তানের মুখে মা-বাবা ডাক শুনতে চান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে পরিবেশগত ও আচরণগত বিভিন্ন কারণে গর্ভধারণে ব্যর্থতার হার বেড়েই চলেছে। ফলে অনেক নারীই মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কখন বন্ধ্যত্ব
নিয়মিত শারীরিক মিলন সত্ত্বেও কোনো নারী এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে চিকিৎসাবিদ্যায় সেটাকে বন্ধ্যত্ব 
বলে ধরা হয়।

নারী-পুরুষ উভয়ের হতে পারে
এটি পরীক্ষালব্ধ স্বীকৃত যে বন্ধ্যত্বের জন্য নারী ও পুরুষ দুজনই সমানভাবে দায়ী। আবার বন্ধ্যত্বের কিছু কারণ রয়েছে অজানা।

গর্ভধারণে জটিলতা বা ব্যর্থতার কারণ
পুরুষের ক্ষেত্রে স্পার্ম বা শুক্রাণুর উৎপাদন, সংখ্যা, গতি, আকার ইত্যাদি ব্যাহত হলে বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। 
নারীর ক্ষেত্রে ডিম্বাণু উৎপাদন-পরিস্ফুটন ব্যাহত হলে, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে কোনো ধরনের ত্রুটি বা টিউমার অথবা চকলেট সিস্ট থাকলে, ডিম্বনালি বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ্যত্ব হতে পারে।  

বন্ধ্যত্বের কারণ

  • নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই বেশি বয়স বন্ধ্যত্বের কারণ।
  • অতিরিক্ত চা, কফি পান এবং ধূমপান, মদ্যপানেও বন্ধ্যত্ব হতে পারে।
  • ওজন বেশি বা কম হলেও গর্ভধারণের জটিলতা তৈরি হতে পারে।
  • অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বন্ধ্যত্বের কারণ।
  • প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ এবং যৌনবাহিত রোগ কিংবা হরমোনজনিত সমস্যায় গর্ভধারণ ব্যর্থ হতে পারে।
  • পুরুষদের ভেরিকোসিল, ছোটবেলায় মাম্পস হলেও বন্ধ্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • প্রজনন অঙ্গে অস্ত্রোপচার হলে বা আঘাত পেলে, নারীদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, এন্ডোমেট্রিওসিস, চকলেট সিস্ট, জরায়ু বা পুরুষাঙ্গের জন্মগত ত্রুটি এবং জরায়ুর টিউমারের কারণেও বন্ধ্যত্ব হয়।
  • পরিবেশগত, যেমন কীটনাশক বা ভারী ধাতুর সংস্পর্শে এলেও গর্ভধারণে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সমাধান

  • সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ।
  • মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস, যেমন ফোলেট, জিংক, ভিটামিন সি ও ই, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার ফার্টিলিটিতে সহায়ক।
  • অতিরিক্ত তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটি করা।
  • সঠিক জীবনাচরণ, যেমন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ও ঘুমানো।
  • নারী বা পুরুষের প্রজননতন্ত্রে যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

 চিকিৎসা
গর্ভধারণে ব্যর্থতা বা বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা কিছুটা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ধৈর্য ধরে মানসিক চাপমুক্ত থেকে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গর্ভধারণে সাফল্য পেতে নারীর ঋতুচক্রের উর্বর সময়ে ঘন ঘন শারীরিক মিলন অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ঋতুচক্রের ক্ষেত্রে উর্বর সময় মাসিকের ৯ম দিন থেকে ১৯তম দিন পর্যন্ত ধরা হয়। অনিয়মিত ঋতুচক্রের ক্ষেত্রে মাসিক শেষ হওয়ার পরদিন থেকে পরবর্তী দুই-তিন দিন অন্তর শারীরিক মিলন করতে হবে পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত। দেখা গেছে, শুধু সঠিক সময়ে শারীরিক মিলনের ফলে ৯০ শতাংশ দম্পতি দুই বছরের মধ্যে গর্ভধারণে সক্ষম হন।

বন্ধ্যত্বের চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:

  • মুখে ওষুধ খাওয়া।
  • ইনজেকশনের মাধ্যমে ডিম্ব স্ফুটন ও শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি।
  • ল্যাপারস্কপি বা শল্যচিকিৎসা।
  • আইইউআই বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্বামীর শুক্রাণু স্ত্রীর গর্ভে প্রদান।
  • আইভিএফ বা টেস্টটিউব চিকিৎসাপদ্ধতি।
  • এ ছাড়া রয়েছে টেসা, পেসা, ইকসি ইত্যাদি কৃত্রিম পদ্ধতি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ্যত্ব রোগের চিকিৎসায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। রয়েছে শুক্রাণু বৃদ্ধির এবং ডিম্বাণু পরিস্ফুটনের সহায়ক ওষুধসহ কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের চিকিৎসা। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালি অনুসরণ ছাড়া কোনো পদ্ধতিই সম্পূর্ণ কার্যকর হবে না। সুষম খাদ্যাভ্যাস, সুন্দর জীবনযাপন বন্ধ্যত্ব নিরাময়ে অনেকটাই সহায়ক। 

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, সহকারী অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত