Ajker Patrika

রাশিয়ায় বন্ধ চিংড়ি রপ্তানি

শামিমুজ্জামান, খুলনা
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১২: ২২
রাশিয়ায় বন্ধ চিংড়ি রপ্তানি

করোনার ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব পড়েছে চিংড়ি রপ্তানিতে। গত তিন মাস রাশিয়ায় চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এখনো সংকট কাটছে না। ইতিমধ্যে রাশিয়ায় চিংড়ি রপ্তানিকারকদের ৭২০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।

জানা গেছে, রপ্তানি হওয়া চিংড়ি মাছের বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে তাদের নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত মার্চ মাস থেকে রাশিয়ায় চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশ হতে রপ্তানি হওয়া চিংড়ির ৮০ লাখ ডলার সমপরিমাণ টাকা বৈদেশিক মুদ্রা যা বাংলাদেশি টাকায় ৭২০ কোটি টাকা পাচ্ছে না বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। টাকা না পাওয়ায় দেশের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকেরা পড়েছেন বিপাকে।

এ ব্যাপারে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রি পক্ষ হতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে চিঠি দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবর্তনের সময় বৃদ্ধি এবং ওভারডিউ ইন্টারেস্ট চার্জ না করার আবেদন জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন এর সহ সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, রাশিয়া হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকদের ৮০ লাখ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ৭২০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধজ্ঞায় ওই টাকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। টাকা না পেয়ে চিংড়ি রপ্তানিকারকেরাও আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

এ ছাড়া গত মার্চ মাস থেকে মে পর্যন্ত এই তিন মাসে রাশিয়ায় কোনো চিংড়ি রপ্তানি হয়নি। এই সময়ে আনুমানিক ৬০ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হওয়ায় কথা ছিল। সমপরিমাণ চিংড়ির আনুমানিক দাম ৬০ কোটি টাকা। যুদ্ধের কারণে তা হয়নি। একেতো পাওনা টাকা পাচ্ছে না। আবার নিশ্চিত রপ্তানি বাজার বন্ধ হয়েছে। যে কারণে কিছুটা হলেও চিংড়ি রপ্তানিকারকেরা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। তিনি বলেন, তবে নতুন বাজার ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।

সর্বশেষ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বরের) রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে অর্থবছর শেষে চিংড়ি রপ্তানি ৪৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া হিমায়িত চিংড়ির ৮৫ ভাগ যায় ইউরোপে। আর ১৫ ভাগ আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই চিংড়ি রপ্তানির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে ৪৫ কোটি ডলার ছাড়ালে রপ্তানি আয় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এক অর্থবছরের মধ্যে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি সাম্প্রতিক সময়ে খুব কম হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকায় ‘পজিশনিং বাংলাদেশ ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প অ্যাজ প্রিমিয়াম ন্যাচারাল টাইগার শ্রিম্প ইন দ্য ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল সিফুড অ্যালায়েন্সের সভাপতি জর্জ চেম্বারলিন। সভাপতিত্ব করেন বিএসএফএফের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক।

সেমিনারে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, চিংড়ি রপ্তানির ধারা বেশ উন্নতি দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ রপ্তানি ৪৫ কোটি ডলারের বেশি হতে পারে। বৈশ্বিক চাহিদা ও দেশের জোগান পরিস্থিতি ভালো হলে ৫০ কোটি ডলার হতে পারে। গত কয়েক বছর ধরেই এ খাতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে চলতি অর্থবছরে আশার আলো দেখাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত