Ajker Patrika

হোতাসহ একে একে সাত আসামিই পেলেন জামিন

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১০: ০১
Thumbnail image

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ-বাণিজ্যের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি বোর্ডের সাময়িক বরখাস্ত সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানসহ গ্রেপ্তার ৭ জন জামিন পেয়ে গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন।

এই মামলার আসামিদের জামিন আদালতপাড়ায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের আছে। মামলায় ফাঁকফোকর রয়েছে বলেই হয়তো আদালত জামিন দিয়েছেন।

মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর শামসুজ্জামানসহ ৫ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অপর ৪ জন হলেন শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত কর্মচারী ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি, হিলফুল ফুজুল নামের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সরদার গোলাম মোস্তফা এবং যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমান। এ মামলায় গ্রেপ্তার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী মোসাম্মৎ সেহেলা পারভীন এবং শামসুজ্জামানের সহযোগী আব্দুল বাসেত ওরফে মো. বাছেদও জামিন পেয়েছেন। ঢাকার আদালতের প্রসিকিউশন দপ্তরের মিরপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন এই ৭ জনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান হাওলাদার বলেন, এই মামলার অভিযোগ গুরুতর। তবে মামলায় ফাঁকফোকর রয়েছে বলেই হয়তো আদালত জামিন দিয়েছেন। আদালতের জামিন দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

সূত্র জানায়, এ মামলায় প্রথম জামিন পান কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীন। গত ২০ এপ্রিল তাঁকে উত্তরা থেকে গ্রেপ্তারের পর দুই দিনের রিমান্ডেও নিয়েছিল পুলিশ। ১৪ মে তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন। জামিন আদেশে আদালত বলেন, সনদ জালিয়াতির অভিযোগ-সম্পর্কিত বিষয়ে এই আসামি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন, এরূপ কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. আমিরুল ইসলামের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামি শামসুজ্জামান কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শন বিভাগ থেকে কম্পিউটার বিভাগে সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে বদলির জন্য সেহেলাকে ৫ লাখ টাকা দেন।

মামলার প্রধান আসামি ও জাল সনদ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ থাকা শামসুজ্জামানকে ২৬ জুন জামিন দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আখতারুজ্জামান। আদালতের আদেশে দেখা যায়, দীর্ঘ হাজতবাস বিবেচনায় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

মামলার অপর আসামিদের মধ্যে সানজিদা আক্তার কলি ৪ জুন, মাকসুদুর রহমান মামুন ২৩ জুন, সরদার গোলাম মোস্তফা ৭ জুলাই আদালত থেকে জামিন পান। আরেক আসামি মো. বাসেত ১৩ জুন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন দেন।

গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ ১ এপ্রিল মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট (পরে সাময়িক বরখাস্ত) শামসুজ্জামান ও তাঁর সহযোগী ফয়সালকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করা হাজার হাজার আসল সনদ ও নম্বরপত্রের (মার্কশিট) খালি কপি, শতাধিক জাল সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়। ডিবি বলেছে, চক্রটি এসব কম্পিউটার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরে ৫ হাজারের বেশি জাল সনদ, নম্বরপত্র বানিয়ে বিক্রি করেছে। এসব সনদ কারিগরি বোর্ডের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়; যাতে পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গেলে সনদগুলো আসল হিসেবে দেখাবে। এ ঘটনায় ডিবির উপপরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন ১ এপ্রিল মিরপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

আইনজীবীরা বলছেন, শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতি গুরুতর অপরাধ। এমন মামলায় জামিন পেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্ম রোধ হবে না।

তবে ঢাকার আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, জামিন দেওয়ার এখতিয়ার বিচারকের আছে। সাধারণত ঢাকার আদালতে এ ধরনের মামলার আসামির জামিন হয় না।

ফৌজদারি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন মল্লিক বলেন, এমন অপরাধের মামলার আসামির জামিন হয় কীভাবে? শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা সনদ জালিয়াতি চক্র মুক্ত থাকলে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত