Ajker Patrika

মধু সংগ্রহে সরিষার ফলন বাড়ে ৩৫ শতাংশ

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৯
মধু সংগ্রহে সরিষার ফলন বাড়ে ৩৫ শতাংশ

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় সরিষাখেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা এক দিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিষার ফলনও বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চলতি বছরে উপজেলায় মধু সংগ্রহের জন্য ৮টি খামার গড়ে তোলা হয়েছে।

গত বছর ৮টি খামার থেকে ৪০ টন মধু সংগ্রহ করা হয়। সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ায় এই উপজেলায় ১ হাজারের বেশি খামার গড়ে তোলা সম্ভব। সরিষা খেতে মধুর খামার গড়ে তোলা হলে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

রৌমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘সরিষাখেতে মৌমাছি থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফলন বেশি হয়।

মৌমাছি যে সরিষা গাছের ফুলে পরাগায়ণ ঘটায়, তার দানা বেশি হয় ও ভালো হয়। যে খেতে মৌমাছি নেই সেখানে সরিষার ফলন কম হয়।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সরিষাখেত মধুর খামার গড়ে তোলার প্রচলন আগে ছিল না। গত ৩ বছর থেকে ফরহাদ হোসেনের নামে এক কৃষক সরিষাখেত থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করে লাভবান হয়েছেন। ওই খামার দেখে অনেকে মধু সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর ফলে এ বছর ৮টি খামার করা হয়েছে। সরিষাখেত মধু চাষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে সরকারিভাবে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, পুঁজির জোগান, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মধু বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে।

মূলত পৃষ্ঠপোষকের অভাবে মধুর খামার করতে পারছে না কৃষক। তা ছাড়া ওই খামার যে ব্যাপক লাভজনক এটা জানে না অনেকে। কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় যে পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়ে থাকে তার অর্ধেক রৌমারীতে। এ বছর এ উপজেলার পূর্বাঞ্চল সীমান্তে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে সরিষাখেত মধুর খামারে দেখা গেছে, খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। হাজার হাজার মৌমাছি হলুদ রঙের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করছে। এ সময় কথা হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে আসা খামারি ফজর আলী সঙ্গে। তিনি বলেন, সাত-আট দিন পর পর ওই সব বাক্স থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি বাক্সে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৌমাছি ও একজন রানি থাকে। রানি মৌমাছি ডিম দেয়।

এগুলো ‘অ্যাফিস মিলিফেরা’ জাতের মাছি। সারা দিন মাছিগুলো সরিষার ফুলে পরাগায়ণ ঘটায় ও মধু সংগ্রহ করে। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের সরিষাখেত থেকেও মধু সংগ্রহ করে মাছিগুলো।

মধুচাষি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে মোট দেড় শর মতো বাক্স রয়েছে। প্রতি বাক্সে ৯-১০টি করে মোমের ফ্রেম রয়েছে। মোমের ফ্রেমে মাছি মধু জমা করে আর রানি মাছি ডিম দেয়।

যখন ফ্রেমগুলো মধুতে ভরে যায় তখন বাক্স থেকে ফ্রেম খুলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাছিমুক্ত করা হয়। ড্রামের মধ্যে ঘুরাইয়া (ঘূর্ণমান ড্রাম) মধু পৃথক করে নেওয়া হয়। এতে প্রতি বাক্স থেকে ছয়-সাত লিটার মধু বের করা যায়। খামার করতে খরচের মধ্যে একটা বাক্স ৬০০ টাকা, একটা মোমের ফ্রেম ৫০০ টাকা। বাক্সভর্তি মৌমাছি নারায়ণগঞ্জ থেকে কিনে আনা হয়েছে। সরিষাখেত থেকে সংগ্রহ করা এসব মধু ৩৫০-৪০০ টাকা লিটারে বিক্রি করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত