Ajker Patrika

গাজীপুর-২: গুরুত্বপূর্ণ আসনে হবে শক্ত লড়াই

এম. আসাদুজ্জামান সাদ, গাজীপুর
গাজীপুর-২: গুরুত্বপূর্ণ আসনে হবে শক্ত লড়াই

রাজধানী লাগোয়া শিল্পনগরী গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ আসন গাজীপুর-২। ভাওয়াল বীর, প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। জীবদ্দশায় শ্রমিকনেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের সব আন্দোলন-সংগ্রামে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। আহসান উল্লাহ মাস্টার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর তাঁর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালেও এমপি হন তিনি। আগামী নির্বাচনেও মাস্টারের ছেলেই আওয়ামী লীগের অন্যতম ভরসার জায়গা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ থেকে ৩৮ নম্বর, ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর—মোট ৩৫টি ওয়ার্ড এবং গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসন। অর্থাৎ আসনটি রাজধানীর উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে সালনা পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই আসনটি জেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন শুরু হওয়ায় এখানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সবকিছুই এখন সিটি নির্বাচনমুখী। তবে সিটি নির্বাচনের প্রভাবও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে। 

গাজীপুর-২ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এই আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগে তিনিই একমাত্র প্রার্থী। ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকায় তাঁর রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। আগামী নির্বাচনে তাঁর হাত ধরেই নৌকার বিজয় আসবে বলে আশাবাদী দলটির নেতা-কর্মীরা। এখানে সংসদ নির্বাচনে আর কোনো প্রার্থীর খবর পাওয়া যায়নি। তাই আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্ভার।

যুবলীগ নেতা নাহিদ ও সাইফুল্লাহ শাওন বলেন, ‘রাসেল ভাই তাঁর বাবার মতোই দেশপ্রেমিক। তিনি গত তিনটি নির্বাচনে এই অঞ্চলের সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, তিনিই মনোনয়ন পাবেন এবং বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করবেন।’

বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ হাসান উদ্দিন সরকার গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। এবারের সিটি নির্বাচনেও তাঁর অংশগ্রহণের জোর গুঞ্জন ছিল। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তিনি সিটি নির্বাচনে প্রার্থী না হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন। হাসান উদ্দিন গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এ ছাড়া গত ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এলাকায় তাঁর যথেষ্ট সুনাম ও প্রভাব রয়েছে। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবেন বলে নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।

বিএনপির আরেক প্রার্থী সাবেক এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে মঞ্জুরুল আলম রনিও মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। রাজনীতিতে নবীন হলেও তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একাধিক মামলার আসামি এবং নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। গাজীপুরে অধ্যাপক এম এ মান্নানের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বাবার অবর্তমানে দলীয় নেতা-কর্মীদের সহানুভূতি ও সমর্থন রয়েছে রনির প্রতি।

নির্বাচনের ব্যাপারে রনি বলেন, ‘দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমার ও আমার পরিবারের অবদানের দিক বিবেচনায় নিয়ে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা রাখি।’

এ ছাড়া এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন সরকারের নামও আলোচনায় রয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি হিসেবে টঙ্গী এলাকায় শ্রমিক অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান মূল্যায়ন করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, এই আসনে মোট ভোটার ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ভোটার ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬১৮ জন এবং পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৭৭ হাজার ১১৬ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত