স্বপ্না রেজা

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তির। নিরস্ত্র বাঙালি তাঁর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণায় মাত্র ৯ মাসে এই দেশ শত্রুমুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতা জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছে। এমন সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
স্বাধীনতার মাস চলছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫২ বছর কম নয়। একাত্তর সালে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, সে এখন মধ্যবয়স্ক নারী কিংবা পুরুষ। পরিণত কেবল নয়, অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বয়স। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তার বয়স বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। যাই হোক, এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষার, বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা বাংলাদেশের, সার্বভৌমত্বের। এই স্বাধীনতার ফলেই একটা পবিত্র সংবিধানের সৃষ্টি, বাঙালি জাতির নিজস্ব সংবিধান পাওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আজও বিরক্ত বোধ করে, পাশ কাটিয়ে চলে, তারা আর যাই হোক না কেন, কোনোভাবেই প্রাদেশিক চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি এবং পারবেও না। অদ্ভুত এক মোহ আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের। যদিও স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তারা কী রকম জীবন যাপন করত, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। বলতেও পারে না। সেই বিশ্লেষণক্ষমতা নেই। এই শ্রেণির অধিকাংশই আবার লোকমুখে শুনে শুনে নিজেদের ধারণা ও শিক্ষাকে মজবুত করেছে। দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। তারা এমন প্রচারে সক্রিয় থাকে যে, সেই আমলটাই ভালো ছিল। মানে, পরাধীন অবস্থায় তারা ভালো ছিল। গণতন্ত্রের জন্য এখন মরিয়া হলেও তৎকালীন পরাধীনতাকে তারা শ্রেয় মনে করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই তথ্য ও বোধ পৌঁছায়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারণা নিয়ে ডালপালা মেলে সমাজে বিস্তার লাভ করে। এভাবেই সমাজে, রাষ্ট্রে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ—এই দুই শক্তির সহাবস্থান ঘটছে।
একজন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা অনীহা কিংবা বিরক্তবোধ, তার জন্য শুধু প্রাদেশিক মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীরাই দায়ী নয়, এর জন্য রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদারদের কারও কারও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে। যেনতেন ও যত্রতত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যতটা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বংশ বা পিতৃপরিচয় দিয়ে থাকেন, ততটা করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিষয়ক কথা বলাতে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পথেঘাটে দেখেছি, এ বিষয়ে একটা অংশের জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না। এটা যে কত বড় আতঙ্কের বিষয়, হতাশার কথা, এমনকি দুঃখজনক, তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে কেবল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরূপ মনোভাবী ব্যক্তিই নয়, ভিন্ন আদর্শের একধরনের বোধ তৈরি হচ্ছে এবং তা অন্তরালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করা হয়েছে, ততটা হয়নি সর্বজনীন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে ও কল্যাণে। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হলে ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের সূচনা হতো না বলে অনেকের ধারণা। এর জন্য অবশ্য সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা কমবেশি সবাই জানে যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উপস্থাপিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটা প্রজন্ম সেটাকেই সত্য বলে জেনেছে এবং তাদের চেতনাকে সেই অনুযায়ী গড়েছে। আজ যারা গায়ের জোরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে যে বিভ্রান্তকর কথা বলে, তারা সেই কার্যক্রমেরই ফলাফল। আবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আদতে কী শিখেছে ও শিখছে। শিক্ষক, পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম দেখলে বোঝা সম্ভব নয় যে, এসব মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় কতটা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে, যে এসব নিয়ে কিছুই বলতে পারে না।আদতে সে জানে না। এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয়?
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা বলে, লিখে একশ্রেণির মানুষ যে কম লাভবান হয়েছে, তা নয়। বরং লাভবান হয়েছে বেশি। এদের চাটুকদার বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখে এবং সেটা নিজের মনের মতো করে লিখে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণে তারা যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বা তৎপর থাকে, ততটা ব্যস্ততা বা তৎপরতা কিন্তু ইতিহাসের সঠিক গল্প বা ইতিহাস সাধারণ পাঠকের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়ার তাগাদায় থাকে না। তাদের কাছে এমন হিসাব আছে কি না, জানা নেই। তারা নিঃস্বার্থভাবে কতজনকে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে তাদের দায় মিটিয়েছে। আবার আমার জানা নেই এমন কেউ আছেন কি না, যিনি বিনা মূল্যে ও বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, গল্প তথা ইতিহাস জনগণকে অবহিত করার বড় ও মহৎ কাজটি করেছেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; অথবা অন্তত একবার ভেবেছেন যে কাজটি করা দরকার। তবে এটা বলা যায়, শহরে সেই রকম মানুষ চোখে না পড়লেও গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ব্যক্তি নিশ্চিত চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পত্রিকার পাতায় এমন দু-চারটি ঘটনার কথা ফুটে ওঠে। যাঁরা গাছের নিচে, চায়ের দোকানে অথবা মাঠে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। কেউবা কণ্ঠে সুর ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। অন্য রকম পরিবেশ, অন্য রকম আবেশ। এমন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে কেউ কিন্তু জোর করে বলে দেয় না—তোমার এই কাজ করা উচিত। এমন ব্যক্তি প্রকৃতির সরলতায় জন্মান, সক্রিয় থাকেন। হয়তো এ-ও দেখা যাবে যে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সনদ নয়, এমন মানুষের বুক ভরে রয়েছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতা অর্জন বলতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথাটাই জোরেশোরে ওঠে। কিন্তু এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো, বাঙালি জাতির পরাধীনতাকালীন ঘটনাগুলো তেমনভাবে না আসায়, সবাই জানতে না পারায় ক্রমেই প্রাদেশিক চেতনার প্রসার ঘটে। জনগণের বিচারশক্তি লোপ পায়। তুলনা করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আমাদের আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ছাড়া সম্ভবত তাদের বড় কোনো কাজ নেই। যদিও এই তালিকা করতে গিয়ে অনেক অঘটন, কেলেঙ্কারি ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার স্থান পেয়েছে, আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি কতটা অসতর্কতা ও অবহেলার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয় যথাযথ উপস্থাপন, অনুধাবন না হওয়াটা যেমন ঝুঁকির, তেমনি ঝুঁকির বিষয় হলো দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয় সমভাবে সমাদৃত না হওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তির। নিরস্ত্র বাঙালি তাঁর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণায় মাত্র ৯ মাসে এই দেশ শত্রুমুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতা জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছে। এমন সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
স্বাধীনতার মাস চলছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫২ বছর কম নয়। একাত্তর সালে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, সে এখন মধ্যবয়স্ক নারী কিংবা পুরুষ। পরিণত কেবল নয়, অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বয়স। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তার বয়স বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। যাই হোক, এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষার, বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা বাংলাদেশের, সার্বভৌমত্বের। এই স্বাধীনতার ফলেই একটা পবিত্র সংবিধানের সৃষ্টি, বাঙালি জাতির নিজস্ব সংবিধান পাওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আজও বিরক্ত বোধ করে, পাশ কাটিয়ে চলে, তারা আর যাই হোক না কেন, কোনোভাবেই প্রাদেশিক চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি এবং পারবেও না। অদ্ভুত এক মোহ আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের। যদিও স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তারা কী রকম জীবন যাপন করত, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। বলতেও পারে না। সেই বিশ্লেষণক্ষমতা নেই। এই শ্রেণির অধিকাংশই আবার লোকমুখে শুনে শুনে নিজেদের ধারণা ও শিক্ষাকে মজবুত করেছে। দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। তারা এমন প্রচারে সক্রিয় থাকে যে, সেই আমলটাই ভালো ছিল। মানে, পরাধীন অবস্থায় তারা ভালো ছিল। গণতন্ত্রের জন্য এখন মরিয়া হলেও তৎকালীন পরাধীনতাকে তারা শ্রেয় মনে করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই তথ্য ও বোধ পৌঁছায়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারণা নিয়ে ডালপালা মেলে সমাজে বিস্তার লাভ করে। এভাবেই সমাজে, রাষ্ট্রে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ—এই দুই শক্তির সহাবস্থান ঘটছে।
একজন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা অনীহা কিংবা বিরক্তবোধ, তার জন্য শুধু প্রাদেশিক মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীরাই দায়ী নয়, এর জন্য রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদারদের কারও কারও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে। যেনতেন ও যত্রতত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যতটা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বংশ বা পিতৃপরিচয় দিয়ে থাকেন, ততটা করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিষয়ক কথা বলাতে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পথেঘাটে দেখেছি, এ বিষয়ে একটা অংশের জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না। এটা যে কত বড় আতঙ্কের বিষয়, হতাশার কথা, এমনকি দুঃখজনক, তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে কেবল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরূপ মনোভাবী ব্যক্তিই নয়, ভিন্ন আদর্শের একধরনের বোধ তৈরি হচ্ছে এবং তা অন্তরালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করা হয়েছে, ততটা হয়নি সর্বজনীন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে ও কল্যাণে। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হলে ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের সূচনা হতো না বলে অনেকের ধারণা। এর জন্য অবশ্য সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা কমবেশি সবাই জানে যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উপস্থাপিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটা প্রজন্ম সেটাকেই সত্য বলে জেনেছে এবং তাদের চেতনাকে সেই অনুযায়ী গড়েছে। আজ যারা গায়ের জোরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে যে বিভ্রান্তকর কথা বলে, তারা সেই কার্যক্রমেরই ফলাফল। আবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আদতে কী শিখেছে ও শিখছে। শিক্ষক, পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম দেখলে বোঝা সম্ভব নয় যে, এসব মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় কতটা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে, যে এসব নিয়ে কিছুই বলতে পারে না।আদতে সে জানে না। এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয়?
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা বলে, লিখে একশ্রেণির মানুষ যে কম লাভবান হয়েছে, তা নয়। বরং লাভবান হয়েছে বেশি। এদের চাটুকদার বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখে এবং সেটা নিজের মনের মতো করে লিখে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণে তারা যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বা তৎপর থাকে, ততটা ব্যস্ততা বা তৎপরতা কিন্তু ইতিহাসের সঠিক গল্প বা ইতিহাস সাধারণ পাঠকের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়ার তাগাদায় থাকে না। তাদের কাছে এমন হিসাব আছে কি না, জানা নেই। তারা নিঃস্বার্থভাবে কতজনকে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে তাদের দায় মিটিয়েছে। আবার আমার জানা নেই এমন কেউ আছেন কি না, যিনি বিনা মূল্যে ও বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, গল্প তথা ইতিহাস জনগণকে অবহিত করার বড় ও মহৎ কাজটি করেছেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; অথবা অন্তত একবার ভেবেছেন যে কাজটি করা দরকার। তবে এটা বলা যায়, শহরে সেই রকম মানুষ চোখে না পড়লেও গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ব্যক্তি নিশ্চিত চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পত্রিকার পাতায় এমন দু-চারটি ঘটনার কথা ফুটে ওঠে। যাঁরা গাছের নিচে, চায়ের দোকানে অথবা মাঠে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। কেউবা কণ্ঠে সুর ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। অন্য রকম পরিবেশ, অন্য রকম আবেশ। এমন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে কেউ কিন্তু জোর করে বলে দেয় না—তোমার এই কাজ করা উচিত। এমন ব্যক্তি প্রকৃতির সরলতায় জন্মান, সক্রিয় থাকেন। হয়তো এ-ও দেখা যাবে যে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সনদ নয়, এমন মানুষের বুক ভরে রয়েছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতা অর্জন বলতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথাটাই জোরেশোরে ওঠে। কিন্তু এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো, বাঙালি জাতির পরাধীনতাকালীন ঘটনাগুলো তেমনভাবে না আসায়, সবাই জানতে না পারায় ক্রমেই প্রাদেশিক চেতনার প্রসার ঘটে। জনগণের বিচারশক্তি লোপ পায়। তুলনা করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আমাদের আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ছাড়া সম্ভবত তাদের বড় কোনো কাজ নেই। যদিও এই তালিকা করতে গিয়ে অনেক অঘটন, কেলেঙ্কারি ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার স্থান পেয়েছে, আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি কতটা অসতর্কতা ও অবহেলার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয় যথাযথ উপস্থাপন, অনুধাবন না হওয়াটা যেমন ঝুঁকির, তেমনি ঝুঁকির বিষয় হলো দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয় সমভাবে সমাদৃত না হওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
স্বপ্না রেজা

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তির। নিরস্ত্র বাঙালি তাঁর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণায় মাত্র ৯ মাসে এই দেশ শত্রুমুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতা জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছে। এমন সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
স্বাধীনতার মাস চলছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫২ বছর কম নয়। একাত্তর সালে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, সে এখন মধ্যবয়স্ক নারী কিংবা পুরুষ। পরিণত কেবল নয়, অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বয়স। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তার বয়স বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। যাই হোক, এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষার, বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা বাংলাদেশের, সার্বভৌমত্বের। এই স্বাধীনতার ফলেই একটা পবিত্র সংবিধানের সৃষ্টি, বাঙালি জাতির নিজস্ব সংবিধান পাওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আজও বিরক্ত বোধ করে, পাশ কাটিয়ে চলে, তারা আর যাই হোক না কেন, কোনোভাবেই প্রাদেশিক চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি এবং পারবেও না। অদ্ভুত এক মোহ আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের। যদিও স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তারা কী রকম জীবন যাপন করত, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। বলতেও পারে না। সেই বিশ্লেষণক্ষমতা নেই। এই শ্রেণির অধিকাংশই আবার লোকমুখে শুনে শুনে নিজেদের ধারণা ও শিক্ষাকে মজবুত করেছে। দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। তারা এমন প্রচারে সক্রিয় থাকে যে, সেই আমলটাই ভালো ছিল। মানে, পরাধীন অবস্থায় তারা ভালো ছিল। গণতন্ত্রের জন্য এখন মরিয়া হলেও তৎকালীন পরাধীনতাকে তারা শ্রেয় মনে করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই তথ্য ও বোধ পৌঁছায়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারণা নিয়ে ডালপালা মেলে সমাজে বিস্তার লাভ করে। এভাবেই সমাজে, রাষ্ট্রে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ—এই দুই শক্তির সহাবস্থান ঘটছে।
একজন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা অনীহা কিংবা বিরক্তবোধ, তার জন্য শুধু প্রাদেশিক মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীরাই দায়ী নয়, এর জন্য রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদারদের কারও কারও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে। যেনতেন ও যত্রতত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যতটা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বংশ বা পিতৃপরিচয় দিয়ে থাকেন, ততটা করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিষয়ক কথা বলাতে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পথেঘাটে দেখেছি, এ বিষয়ে একটা অংশের জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না। এটা যে কত বড় আতঙ্কের বিষয়, হতাশার কথা, এমনকি দুঃখজনক, তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে কেবল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরূপ মনোভাবী ব্যক্তিই নয়, ভিন্ন আদর্শের একধরনের বোধ তৈরি হচ্ছে এবং তা অন্তরালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করা হয়েছে, ততটা হয়নি সর্বজনীন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে ও কল্যাণে। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হলে ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের সূচনা হতো না বলে অনেকের ধারণা। এর জন্য অবশ্য সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা কমবেশি সবাই জানে যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উপস্থাপিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটা প্রজন্ম সেটাকেই সত্য বলে জেনেছে এবং তাদের চেতনাকে সেই অনুযায়ী গড়েছে। আজ যারা গায়ের জোরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে যে বিভ্রান্তকর কথা বলে, তারা সেই কার্যক্রমেরই ফলাফল। আবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আদতে কী শিখেছে ও শিখছে। শিক্ষক, পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম দেখলে বোঝা সম্ভব নয় যে, এসব মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় কতটা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে, যে এসব নিয়ে কিছুই বলতে পারে না।আদতে সে জানে না। এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয়?
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা বলে, লিখে একশ্রেণির মানুষ যে কম লাভবান হয়েছে, তা নয়। বরং লাভবান হয়েছে বেশি। এদের চাটুকদার বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখে এবং সেটা নিজের মনের মতো করে লিখে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণে তারা যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বা তৎপর থাকে, ততটা ব্যস্ততা বা তৎপরতা কিন্তু ইতিহাসের সঠিক গল্প বা ইতিহাস সাধারণ পাঠকের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়ার তাগাদায় থাকে না। তাদের কাছে এমন হিসাব আছে কি না, জানা নেই। তারা নিঃস্বার্থভাবে কতজনকে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে তাদের দায় মিটিয়েছে। আবার আমার জানা নেই এমন কেউ আছেন কি না, যিনি বিনা মূল্যে ও বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, গল্প তথা ইতিহাস জনগণকে অবহিত করার বড় ও মহৎ কাজটি করেছেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; অথবা অন্তত একবার ভেবেছেন যে কাজটি করা দরকার। তবে এটা বলা যায়, শহরে সেই রকম মানুষ চোখে না পড়লেও গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ব্যক্তি নিশ্চিত চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পত্রিকার পাতায় এমন দু-চারটি ঘটনার কথা ফুটে ওঠে। যাঁরা গাছের নিচে, চায়ের দোকানে অথবা মাঠে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। কেউবা কণ্ঠে সুর ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। অন্য রকম পরিবেশ, অন্য রকম আবেশ। এমন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে কেউ কিন্তু জোর করে বলে দেয় না—তোমার এই কাজ করা উচিত। এমন ব্যক্তি প্রকৃতির সরলতায় জন্মান, সক্রিয় থাকেন। হয়তো এ-ও দেখা যাবে যে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সনদ নয়, এমন মানুষের বুক ভরে রয়েছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতা অর্জন বলতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথাটাই জোরেশোরে ওঠে। কিন্তু এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো, বাঙালি জাতির পরাধীনতাকালীন ঘটনাগুলো তেমনভাবে না আসায়, সবাই জানতে না পারায় ক্রমেই প্রাদেশিক চেতনার প্রসার ঘটে। জনগণের বিচারশক্তি লোপ পায়। তুলনা করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আমাদের আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ছাড়া সম্ভবত তাদের বড় কোনো কাজ নেই। যদিও এই তালিকা করতে গিয়ে অনেক অঘটন, কেলেঙ্কারি ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার স্থান পেয়েছে, আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি কতটা অসতর্কতা ও অবহেলার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয় যথাযথ উপস্থাপন, অনুধাবন না হওয়াটা যেমন ঝুঁকির, তেমনি ঝুঁকির বিষয় হলো দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয় সমভাবে সমাদৃত না হওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধীনতা থেকে মুক্তির। নিরস্ত্র বাঙালি তাঁর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণায় মাত্র ৯ মাসে এই দেশ শত্রুমুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন মহান নেতা জন্মেছিলেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছে। এমন সত্যের কোনো বিকল্প নেই।
স্বাধীনতার মাস চলছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার ৫২ বছর কম নয়। একাত্তর সালে যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, সে এখন মধ্যবয়স্ক নারী কিংবা পুরুষ। পরিণত কেবল নয়, অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বয়স। ঠিক তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষের দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান এবং এই দ্বন্দ্ব নিয়েই তার বয়স বাড়ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। যাই হোক, এই স্বাধীনতা বাংলা ভাষার, বাঙালি জাতির এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা বাংলাদেশের, সার্বভৌমত্বের। এই স্বাধীনতার ফলেই একটা পবিত্র সংবিধানের সৃষ্টি, বাঙালি জাতির নিজস্ব সংবিধান পাওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আজও বিরক্ত বোধ করে, পাশ কাটিয়ে চলে, তারা আর যাই হোক না কেন, কোনোভাবেই প্রাদেশিক চিন্তা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেনি এবং পারবেও না। অদ্ভুত এক মোহ আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের। যদিও স্বাধীনতা অর্জিত না হলে তারা কী রকম জীবন যাপন করত, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। বলতেও পারে না। সেই বিশ্লেষণক্ষমতা নেই। এই শ্রেণির অধিকাংশই আবার লোকমুখে শুনে শুনে নিজেদের ধারণা ও শিক্ষাকে মজবুত করেছে। দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে। তারা এমন প্রচারে সক্রিয় থাকে যে, সেই আমলটাই ভালো ছিল। মানে, পরাধীন অবস্থায় তারা ভালো ছিল। গণতন্ত্রের জন্য এখন মরিয়া হলেও তৎকালীন পরাধীনতাকে তারা শ্রেয় মনে করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এদের কাছ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই তথ্য ও বোধ পৌঁছায়। পরবর্তী প্রজন্ম সেই ধারণা নিয়ে ডালপালা মেলে সমাজে বিস্তার লাভ করে। এভাবেই সমাজে, রাষ্ট্রে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ—এই দুই শক্তির সহাবস্থান ঘটছে।
একজন বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে যে কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বা অনীহা কিংবা বিরক্তবোধ, তার জন্য শুধু প্রাদেশিক মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধীরাই দায়ী নয়, এর জন্য রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদারদের কারও কারও মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে না পারার ব্যর্থতাও রয়েছে। যেনতেন ও যত্রতত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। একজন ব্যক্তি যতটা সতর্কতার সঙ্গে তাঁর বংশ বা পিতৃপরিচয় দিয়ে থাকেন, ততটা করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিষয়ক কথা বলাতে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে সশ্রদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যায় না। উপরন্তু, জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পথেঘাটে দেখেছি, এ বিষয়ে একটা অংশের জনগণের উদাসীনতা ও অনীহা তৈরি হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না। এটা যে কত বড় আতঙ্কের বিষয়, হতাশার কথা, এমনকি দুঃখজনক, তা বলে শেষ করা যাবে না। এতে কেবল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরূপ মনোভাবী ব্যক্তিই নয়, ভিন্ন আদর্শের একধরনের বোধ তৈরি হচ্ছে এবং তা অন্তরালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থে যতটা ব্যবহার করা হয়েছে, ততটা হয়নি সর্বজনীন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে ও কল্যাণে। অর্থাৎ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়টি সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখা হলে ভিন্ন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি বা মতবাদের সূচনা হতো না বলে অনেকের ধারণা। এর জন্য অবশ্য সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এটা কমবেশি সবাই জানে যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক উপস্থাপিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটা প্রজন্ম সেটাকেই সত্য বলে জেনেছে এবং তাদের চেতনাকে সেই অনুযায়ী গড়েছে। আজ যারা গায়ের জোরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে যে বিভ্রান্তকর কথা বলে, তারা সেই কার্যক্রমেরই ফলাফল। আবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমের কথা বলাই বাহুল্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আদতে কী শিখেছে ও শিখছে। শিক্ষক, পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম দেখলে বোঝা সম্ভব নয় যে, এসব মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় কতটা শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হচ্ছে। কেননা, এমন শিক্ষার্থীও রয়েছে, যে এসব নিয়ে কিছুই বলতে পারে না।আদতে সে জানে না। এটা কি আমাদের চরম ব্যর্থতা নয়?
আবার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা বলে, লিখে একশ্রেণির মানুষ যে কম লাভবান হয়েছে, তা নয়। বরং লাভবান হয়েছে বেশি। এদের চাটুকদার বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখে এবং সেটা নিজের মনের মতো করে লিখে বঙ্গবন্ধুকন্যার দৃষ্টি আকর্ষণে তারা যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠে বা তৎপর থাকে, ততটা ব্যস্ততা বা তৎপরতা কিন্তু ইতিহাসের সঠিক গল্প বা ইতিহাস সাধারণ পাঠকের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়ার তাগাদায় থাকে না। তাদের কাছে এমন হিসাব আছে কি না, জানা নেই। তারা নিঃস্বার্থভাবে কতজনকে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে তাদের দায় মিটিয়েছে। আবার আমার জানা নেই এমন কেউ আছেন কি না, যিনি বিনা মূল্যে ও বিনা পারিশ্রমিকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, গল্প তথা ইতিহাস জনগণকে অবহিত করার বড় ও মহৎ কাজটি করেছেন বা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন; অথবা অন্তত একবার ভেবেছেন যে কাজটি করা দরকার। তবে এটা বলা যায়, শহরে সেই রকম মানুষ চোখে না পড়লেও গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ব্যক্তি নিশ্চিত চোখে পড়ে। মাঝেমধ্যে পত্রিকার পাতায় এমন দু-চারটি ঘটনার কথা ফুটে ওঠে। যাঁরা গাছের নিচে, চায়ের দোকানে অথবা মাঠে শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। কেউবা কণ্ঠে সুর ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। অন্য রকম পরিবেশ, অন্য রকম আবেশ। এমন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে কেউ কিন্তু জোর করে বলে দেয় না—তোমার এই কাজ করা উচিত। এমন ব্যক্তি প্রকৃতির সরলতায় জন্মান, সক্রিয় থাকেন। হয়তো এ-ও দেখা যাবে যে, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ নেই। রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। রাজনৈতিক পরিচিতি ও সনদ নয়, এমন মানুষের বুক ভরে রয়েছে দেশপ্রেম।
স্বাধীনতা অর্জন বলতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কথাটাই জোরেশোরে ওঠে। কিন্তু এর নেপথ্যের ঘটনাগুলো, বাঙালি জাতির পরাধীনতাকালীন ঘটনাগুলো তেমনভাবে না আসায়, সবাই জানতে না পারায় ক্রমেই প্রাদেশিক চেতনার প্রসার ঘটে। জনগণের বিচারশক্তি লোপ পায়। তুলনা করার কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় আমাদের আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত ছাড়া সম্ভবত তাদের বড় কোনো কাজ নেই। যদিও এই তালিকা করতে গিয়ে অনেক অঘটন, কেলেঙ্কারি ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার স্থান পেয়েছে, আবার রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা হয়েছে। বিষয়টি কতটা অসতর্কতা ও অবহেলার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল কথা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয় যথাযথ উপস্থাপন, অনুধাবন না হওয়াটা যেমন ঝুঁকির, তেমনি ঝুঁকির বিষয় হলো দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয় সমভাবে সমাদৃত না হওয়া, গুরুত্ব না পাওয়া।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধ
১৭ মার্চ ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধ
১৭ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধ
১৭ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আজ ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। জাতির পিতার জন্ম দিবসের পাশাপাশি মার্চ মাস বাঙালি জাতির কাছে বেশ কটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য। মার্চের ৭ তারিখে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে ডাক দিয়েছিলেন পরাধ
১৭ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫