Ajker Patrika

লাভ থাকে না বাঁশের সামগ্রীতে

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৪২
লাভ থাকে না বাঁশের সামগ্রীতে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরির সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। উপকরণের দাম বাড়ায় তেমন লাভ থাকে না এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের। ফলে উপজেলার দুই শতাধিক পরিবারের দিন কাটছে অভাব-অনটনে। যে কারণে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই কুটিরশিল্প।

পরিবারের ভরণ-পোষণের যোগান দিতে এক যুগ আগে বাঁশ-বেতের কাজ শুরু করেন উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের উত্তর মাহামুদাবাদ এলাকার আনোয়ারা বেগম (৪৫)। বাজার থেকে বাঁশ ও বেত সংগ্রহের পর তা দিয়ে তৈরি করতেন ধামা, ঢোল, ডালা ও চাটাইসহ নানা ধরনের পণ্য। শুরুর দিকে ক্রেতাদের কাছে এসব পণ্যের কদর ছিল। ফলে বাজারে বেশ চাহিদা ছিল। এতে লাভ বেশ হতো আনোয়ারার। সেই উপার্জনে চালাতেন সংসারের খরচ। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পের কদর কমছে। উপকরণের দাম বেড়ে চলায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তবে সেই অনুপাতে পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি তাঁর তৈরি পণ্যে। যে কারণে বিক্রি করে আশানুরূপ লাভ মিলছে না। ফলে এক রকম অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের।

শুধু আনোয়ারা বেগমই নন, কুটির শিল্পের কদর কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, বহরপুর ও টেরিয়াইলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সঠিক বাজারদরের অভাব ও ব্যবসার প্রয়োজনীয় পুঁজি সংকটের কারণে তাঁদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাজারে আধুনিক ও বাহারি জিনিসের প্রচলনের কারণে বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজন পড়েছেন অস্তিত্বের সংকটে। পরিবারের ব্যয় মেটাতে অনেকেই পেশা ছেড়ে জড়িয়ে পড়ছেন অন্য পেশায়।

বহরপুর এলাকার অনিল চন্দ্র দাস (৬৫) তাঁদেরই একজন। তিনি বলেন, এক সময় পুরো উপজেলাজুড়ে বাঁশ ও বেতের তৈরি নানা পণ্যের বেশ কদর ছিল। বাজারের চাহিদা থাকায় সে সময় কুটির শিল্প ছিল মহৎপুর এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের জীবিকার মাধ্যম। পাইকারি বাজারে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা কাজ করতেন এসব পরিবারের নারী-পুরুষেরা। অনেকে বাড়িতে এসে আগেই জানিয়ে যেতেন তাঁদের চাহিদার কথা। এতে স্বচ্ছন্দ ছিল তাঁদের জীবন-যাপন।

অনিল দাস আরও বলেন, একসময় পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বাঁশ ও বেত উৎপাদন হতো। তখন সাধ্যের মধ্যে স্বল্প মূল্যে পাওয়া যেত এসব পণ্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাঁশ-বেতের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের উত্তর মাহামুদাবাদ এলাকার জালাল আহমেদ বলেন, কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলে বাঁশ সহজলভ্য ছিল। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় একটি বাঁশ কেনা যেত। এখন তার দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। কিন্তু সেই অনুপাতে উৎপাদিত পণ্যের দাম তেমন বাড়েনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এই শিল্পকে বাঁচাতে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করার পর সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়াও তাঁদের ব্যবসার প্রসারে ব্যাংক ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত