Ajker Patrika

দুর্নীতি ও শাস্তি

সম্পাদকীয়
দুর্নীতি ও শাস্তি

৫ আগস্ট রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর থেকে রাজনীতিবিদ, আমলা এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এমনই একজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

অভিযুক্ত ব্যক্তি সিলেট জোনের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে। তিনি এর আগে গাজীপুর, বরিশাল ও ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। সেসব জায়গায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তারপরও তিনি নিজেকে পরিবর্তন না করে সিলেটে এসে একই অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর শাসনে দেশের অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনার অভিযোগ আছে। এই সময়ের মধ্যে কিছু দলীয় নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু কর্মকর্তার বেপরোয়া হয়ে ওঠার কথাও শোনা গেছে। 

সিলেট সওজের সেই প্রকৌশলীও আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতার সহযোগিতায় আইনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি করেছেন, বাগিয়েছেন পদোন্নতি। তাঁর দুর্নীতির কারণে এখনো ভোগান্তির শিকার সেই এলাকার মানুষ। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যার পরে সিলেটের চার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য সরকার ২০২২ সালে ৬৫০ কোটি টাকার ৩১টি প্রকল্প গ্রহণ করে। সেইসব সড়কের কাজ ঠিকাদাররা পুরোপুরি শেষ না করে অগ্রিম টাকা নিয়ে নেন। ফজলে রব্বে সেসব সড়কের কাজ তদারক না করেই অনেক ঠিকাদারকে টাকা দিয়েছিলেন। সরকারি কাজের নিয়ম হলো, কাজ শেষ করার পর টাকা দেওয়া। কিন্তু তিনি এখানে সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন স্পষ্টভাবে। 

ফজলে রব্বের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ—তিনি সেখানে একটা কমিশন-বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন, পছন্দের ঠিকাদারকে তিনি কাজ দিতেন। প্রয়োজনবোধে তিনি রিটেন্ডার করেও পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেন। এখনো ৩১ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন এলাকার সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় খানাখন্দে ভরা সড়কে কষ্ট করে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। 

যদিও ফজলে রব্বে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, কিন্তু এ কথাও সত্যি যে বাংলাদেশেই দুর্নীতি করে ছাড় পাওয়ার নজির দেখা যায়। যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অপরাধ করার পর বিভাগীয় আইনে শাস্তি পাওয়ার কথা অপরাধীদের। আমাদের দেশে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে কারও বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ ওঠে, তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্ত শুরু হলেও পরে সব ‘যেই লাউ সেই কদু’ হয়ে যায়! ফলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া বড় কর্মকর্তাদের আর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না। 

এসব ঘটনায় শাস্তি না পাওয়ার কারণ হলো ‘ছাড় দেওয়ার প্রবণতা’। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা—এই প্রবণতার ফাঁদে নিশ্চয়ই তারা পা দেবে না। শুধু কোনো নির্দিষ্ট সরকারের আমলের নয়, যেকোনো দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত সংস্কারপ্রক্রিয়া বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত