নুসরাত জাহান সূচি
আদ্রিত। বয়স ছয় বছর। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। মাসখানেকের জন্য দাদুবাড়িতে ঘুরতে আসে। তখন ছেলেটিকে কিছুদিন পড়ানোর সুযোগ হয় আমার। শেখাতে পেরেছিলাম কতটুকু জানি না, তবে শিখেছিলাম অনেক কিছু।
সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম ওকে ছবি আঁকা শেখানোর সময়। আমি ওকে বাসায় কিছু ছবি আঁকতে বলি। ও এত ছোট ছোট করে এঁকে আমাকে দেখাল। অনেক বার বলার পরও সে কোনো অবস্থাতেই বড় করে ছবি আঁকবে না। কেন বড় করে আঁকবে না জিজ্ঞেস করায় বলল, ‘আমি যদি বড় করে আঁকি, তাহলে বেশি পৃষ্ঠা লাগবে। বেশি পৃষ্ঠা নষ্ট করলে পৃষ্ঠা বানানোর কাঠ লাগবে। তার জন্য বেশি গাছ কাটতে হবে। এতে তো আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হবে।’ এরপর ওকে আসলেই আমার কী বলা উচিত ছিল বুঝতে পারিনি।
হঠাৎ শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মনে পড়ল, এখানে আর সেই পুরোনো বটগাছটি নেই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো জানবে না বিশাল বকুলগাছের ছায়ায় ফুল কুড়িয়ে বকুলের মালা গাঁথা যেত কোনো একসময়, ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়ানোর কবিতাটিও আর পাঠ্যপুস্তকে থাকবে না হয়তো, হলুদ ছেয়ে যাওয়া সরিষার খেতে বাতাস লাগলে কেমন লাগে তা-ও জানবে না। হয়তো তারা কেবলই জানবে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় অর্কিড, বাগানবিলাস বা গোলাপের মতো ফুল রাখা যায়।
কালের স্রোতে আমরা হারিয়েছি অনেক। অনেক কিছুই বিলুপ্তির খাতায়।
এমনকি হারিয়েছি ডাইনোসরের মতো বিশাল প্রাণী। তাতে অবশ্য আমাদের তেমন কিছু আসে-যায়নি। তাই বৃক্ষ বা বনভূমি হারানোর কষ্ট যে আমাদের ছুঁয়ে দেখতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমরা ভুলে গেছি নিজের অস্তিত্বকে। ভুলেই গেছি অক্সিজেন ছাড়া আমরা তিন মিনিটের বেশি বাঁচতে পারব না। ভুলেই গেছি করোনাকালে একটু অক্সিজেনের জন্য কত হাহাকার করেছি।
শুধু কি তা-ই? না, শুধুই অক্সিজেন না। আমাদের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। খাদ্যের জন্য আমরা প্রত্যক্ষভাবেই বৃক্ষের ওপর নির্ভর করি। বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বানাতেও প্রয়োজন হয় বৃক্ষের। সব কয়টি মৌলিক চাহিদা পূরণেই আমাদের বৃক্ষের ওপর নির্ভর করতে হয়।
দূষিত বাতাসের তালিকায় আমরা বরাবরই রয়েছি প্রথম সারিতে। বাড়ছে বায়ুবাহিত রোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি, আরও কত-কী! আক্রান্ত কেবল শিশু থেকে বৃদ্ধ নয়, মায়ের গর্ভের শিশুও এর শিকার।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন আমাদের চারপাশে কেবলই নাভিশ্বাস অবস্থা, প্রতি নিশ্বাসে ঢুকছে দূষিত বায়ু।
যখন আমরা গাছ কেটে উন্নয়ন করতে ব্যস্ত, তখন প্রকৃতি তার নিয়মেই আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প বা লাভা। আমরা টাকার জন্য গাছ কাটছি, সেই টাকাই পুড়ছে আগুনে। আমরা গাছের শীতল ছায়া ছেড়ে এখন ছুটছি এসি কিনতে। সেই এসি বার্স্ট হয়েই প্রাণ দিচ্ছি। তাপমাত্রা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। রোদের তীব্রতায় পুড়ছে মগজ। ‘যারা গাছ রাখতে পারবে না, তারা শিগগিরই এমন পৃথিবীতে বাস করবে, যা মানুষকে ধরে রাখতে পারবে না’—বৃক্ষ নিয়ে প্রচলিত উক্তিটি যেন প্রতি সেকেন্ডে সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে। তবুও কি আমরা থামব না? উন্নয়নের নামে সব গাছ কেটে বনভূমি ধ্বংস করে ফেলব?
কোনো একসময়ে রসায়ন বইয়ে পড়েছিলাম কক্ষ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তা এখন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। এ নিয়ে হরহামেশাই আমরা মজার ছলে বলি, সূর্য মামা আজ মামির সঙ্গে ঝগড়া করে উঠেছে। তাই এত তেজ!
কিন্তু আসলেই কি তাই? বাঙালি হিসেবে বরাবরই নিজের দোষ, ভুল বা অক্ষমতা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আমাদের ব্যাপক। তাই আর যা-ই হোক, বদলে যাওয়া আবহাওয়া যে নিজ কর্মের ফল তা আমরা মানতে নারাজ। আর ছোটবেলা থেকেই তো যেকোনো রচনার শেষ করেছি এটাই বলে যে ‘সরকারের উচিত এ বিষয়ে অতিদ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।’ তাই যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিজেদেরও যে কিছু দায়িত্ব থাকে তা শৈশবেই ভুলেছি।
আর কিছুদিন পর হয়তো বৃক্ষের দেখা পেতে, অর্থাৎ বৃক্ষবিলাস করতে কেবলই যেতে হবে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বা দূর প্রত্যন্ত কোনো প্রদেশে।
লেখক: সাংবাদিক
আদ্রিত। বয়স ছয় বছর। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। মাসখানেকের জন্য দাদুবাড়িতে ঘুরতে আসে। তখন ছেলেটিকে কিছুদিন পড়ানোর সুযোগ হয় আমার। শেখাতে পেরেছিলাম কতটুকু জানি না, তবে শিখেছিলাম অনেক কিছু।
সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম ওকে ছবি আঁকা শেখানোর সময়। আমি ওকে বাসায় কিছু ছবি আঁকতে বলি। ও এত ছোট ছোট করে এঁকে আমাকে দেখাল। অনেক বার বলার পরও সে কোনো অবস্থাতেই বড় করে ছবি আঁকবে না। কেন বড় করে আঁকবে না জিজ্ঞেস করায় বলল, ‘আমি যদি বড় করে আঁকি, তাহলে বেশি পৃষ্ঠা লাগবে। বেশি পৃষ্ঠা নষ্ট করলে পৃষ্ঠা বানানোর কাঠ লাগবে। তার জন্য বেশি গাছ কাটতে হবে। এতে তো আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হবে।’ এরপর ওকে আসলেই আমার কী বলা উচিত ছিল বুঝতে পারিনি।
হঠাৎ শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মনে পড়ল, এখানে আর সেই পুরোনো বটগাছটি নেই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো জানবে না বিশাল বকুলগাছের ছায়ায় ফুল কুড়িয়ে বকুলের মালা গাঁথা যেত কোনো একসময়, ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়ানোর কবিতাটিও আর পাঠ্যপুস্তকে থাকবে না হয়তো, হলুদ ছেয়ে যাওয়া সরিষার খেতে বাতাস লাগলে কেমন লাগে তা-ও জানবে না। হয়তো তারা কেবলই জানবে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় অর্কিড, বাগানবিলাস বা গোলাপের মতো ফুল রাখা যায়।
কালের স্রোতে আমরা হারিয়েছি অনেক। অনেক কিছুই বিলুপ্তির খাতায়।
এমনকি হারিয়েছি ডাইনোসরের মতো বিশাল প্রাণী। তাতে অবশ্য আমাদের তেমন কিছু আসে-যায়নি। তাই বৃক্ষ বা বনভূমি হারানোর কষ্ট যে আমাদের ছুঁয়ে দেখতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমরা ভুলে গেছি নিজের অস্তিত্বকে। ভুলেই গেছি অক্সিজেন ছাড়া আমরা তিন মিনিটের বেশি বাঁচতে পারব না। ভুলেই গেছি করোনাকালে একটু অক্সিজেনের জন্য কত হাহাকার করেছি।
শুধু কি তা-ই? না, শুধুই অক্সিজেন না। আমাদের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। খাদ্যের জন্য আমরা প্রত্যক্ষভাবেই বৃক্ষের ওপর নির্ভর করি। বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বানাতেও প্রয়োজন হয় বৃক্ষের। সব কয়টি মৌলিক চাহিদা পূরণেই আমাদের বৃক্ষের ওপর নির্ভর করতে হয়।
দূষিত বাতাসের তালিকায় আমরা বরাবরই রয়েছি প্রথম সারিতে। বাড়ছে বায়ুবাহিত রোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি, আরও কত-কী! আক্রান্ত কেবল শিশু থেকে বৃদ্ধ নয়, মায়ের গর্ভের শিশুও এর শিকার।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন আমাদের চারপাশে কেবলই নাভিশ্বাস অবস্থা, প্রতি নিশ্বাসে ঢুকছে দূষিত বায়ু।
যখন আমরা গাছ কেটে উন্নয়ন করতে ব্যস্ত, তখন প্রকৃতি তার নিয়মেই আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প বা লাভা। আমরা টাকার জন্য গাছ কাটছি, সেই টাকাই পুড়ছে আগুনে। আমরা গাছের শীতল ছায়া ছেড়ে এখন ছুটছি এসি কিনতে। সেই এসি বার্স্ট হয়েই প্রাণ দিচ্ছি। তাপমাত্রা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। রোদের তীব্রতায় পুড়ছে মগজ। ‘যারা গাছ রাখতে পারবে না, তারা শিগগিরই এমন পৃথিবীতে বাস করবে, যা মানুষকে ধরে রাখতে পারবে না’—বৃক্ষ নিয়ে প্রচলিত উক্তিটি যেন প্রতি সেকেন্ডে সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে। তবুও কি আমরা থামব না? উন্নয়নের নামে সব গাছ কেটে বনভূমি ধ্বংস করে ফেলব?
কোনো একসময়ে রসায়ন বইয়ে পড়েছিলাম কক্ষ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তা এখন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। এ নিয়ে হরহামেশাই আমরা মজার ছলে বলি, সূর্য মামা আজ মামির সঙ্গে ঝগড়া করে উঠেছে। তাই এত তেজ!
কিন্তু আসলেই কি তাই? বাঙালি হিসেবে বরাবরই নিজের দোষ, ভুল বা অক্ষমতা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আমাদের ব্যাপক। তাই আর যা-ই হোক, বদলে যাওয়া আবহাওয়া যে নিজ কর্মের ফল তা আমরা মানতে নারাজ। আর ছোটবেলা থেকেই তো যেকোনো রচনার শেষ করেছি এটাই বলে যে ‘সরকারের উচিত এ বিষয়ে অতিদ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।’ তাই যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিজেদেরও যে কিছু দায়িত্ব থাকে তা শৈশবেই ভুলেছি।
আর কিছুদিন পর হয়তো বৃক্ষের দেখা পেতে, অর্থাৎ বৃক্ষবিলাস করতে কেবলই যেতে হবে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বা দূর প্রত্যন্ত কোনো প্রদেশে।
লেখক: সাংবাদিক
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
২০ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫