Ajker Patrika

শয্যা সংখ্যার তিনগুণ রোগী

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর
Thumbnail image

জামালপুরের সদর হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই জ্বর-ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও বুকের ব্যথাসহ নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। ফলে রোগীদের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। অনেকেই আবার শয্যা না পেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মেঝেতেই।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। বয়স্ক রোগীরা নানান জটিল রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। একইভাবে শিশু রোগীর চাপও বেড়েছে। জ্বর-ঠান্ডাসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের প্রচণ্ড ভিড়। মেডিসিন বিভাগে ২৪টি আসনের বিপরীতে ১২০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক আসনে দুজন রোগীও সেবা নিচ্ছেন। শয্যা খালি না থাকায় অনেকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আসন সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় ঠিকমতো সেবাও দিতে পারছি না। সরকারি হাসপাতালে রোগী আসবেই; কিন্তু আসন সংখ্যা বৃদ্ধি না করলে সেবা দেওয়া কঠিন।’

২৪ ঘণ্টায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। জ্বর-ঠান্ডা নিয়ে ২৯ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অর্ধেকই শিশু। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী। হাসপাতালের চার তলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ড এবং মেডিসিন বিভাগে রোগীতে ঠাসা।

রোগীর স্বজনরা বলছেন, গরমের কারণে ঠান্ডা-জ্বর-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা ভালো হয়েছেন।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে ৫০৮ জন। হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ২৪টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ৭০ জন। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে ২৪টি। এখানে রোগী ভর্তি আছন ১১০ জন। হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে ২৪টি। ভর্তি আছে ৪৫ জন। মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে ২৪টি। এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ৩৯ জন। একইভাবে গাইনি ওয়ার্ডে ৩২, প্রসূতি ওয়ার্ডে ৩৯, শিশু ওয়ার্ডে ৪১, স্ক্যানু ওয়ার্ডে ৪৬, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩৩, পুরুষ অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে ২২, মহিলা অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে ২৮ ও ইএনটিতে তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক মিয়া জানান, হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শয্যাসংখ্যা ও জনবল বাড়ানো না হলে মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মেলান্দহ উপজেলার চরপলিশা এলাকার মেডিসিন ওয়ার্ডে মমতাজ বেগম জ্বর-ঠান্ডাজনিত রোগে মেয়ে রোজিনাকে নিয়ে এসেছেন। মমতাজ বলেন, ‘রোগীর চাপে আরও অসুস্থ হয়ে গেছি। এর মধ্যে আবার বিদ্যুৎ থাকে না।’

সদর উপজেলার চরযথার্থপুরের শাহানা বেগম পিত্তথলিতে পাথর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মেডিসিন ওয়ার্ডে। তাঁর স্বামী রিপন মিয়া বলেন, হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা নেই। ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। রোগীর চাপে ঠিকমতো চিকিৎসাও নেওয়া যাচ্ছে না।

জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, রোগীর চাপ বেশি আসন সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ। এর মধ্যে জনবল সংকট তো আছেই। এ ছাড়া হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজের আওতায় নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত