Ajker Patrika

পাখি ও মানুষের মিতালি

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১৪
Thumbnail image

প্রায় চার বছর ধরে অতিথি পাখির সঙ্গে মিতালি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মাইলমারী ধলা গ্রামের মানুষের। প্রতিবছর অক্টোবরে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে এ গ্রামের পদ্মবিলে আসতে থাকে অতিথি পাখিগুলো। বংশবিস্তার শেষে মার্চ মাসের শেষের দিকে আবার নীড়ে ফিরতে থাকে। এ সময়ে গ্রামবাসী ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে তাদের অতিথি।

মাইলমারী ধলা গ্রামের পদ্মবিলে কখনো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে, আবার কখন সাঁতরে বেড়াচ্ছে পাখিগুলো। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। হাজারো পাখি উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য অবাক দৃষ্টিতে দেখেন গ্রামবাসী ও পর্যটকেরা। নির্ভয়ে ঝাঁক বেঁধে পাখিগুলোর আকাশে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্যই বলে দেয়, পাখিরা এখানে গড়ে তুলেছে আপন ভুবন।

পরিবেশবিদ এনামুল আযীম বলেন, এখানে আসা বেশির ভাগই পাখি সাইবেরিয়া থেকে এসেছে। অধিকাংশই সরালি আর সামকুল প্রজাতির। আরও দুই প্রজাতির খেড়িহাঁস ও পানকৌড়ি পাখি দেখা মিলে এখানে। সবই হাঁসজাতীয় পাখি। অক্টোবরের দিকে যখন সাইবেরিয়ায় বরফ গলতে থাকে, তখন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে সরালি ও সামকুল। এরাই এখানে এসে আবাস তৈরি করেছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে বংশবিস্তার শুরু করে। এপ্রিলের দিকে সাইবেরিয়ায় যখন বরফ জমতে থাকে তখন পাখিগুলো ফিরে যায় নিজ আবাসে। রেখে যায় বংশবিস্তারের কিছু পাখি। পরের বছর সেগুলো হয় তাদের সঙ্গী। তিনি আরও বলেন, আর এসব পাখির বিষ্ঠায় তৈরি হয় ফসফেট জাতীয় সার, যা জমির জন্য খুবই উপকারী।

পাখিগুলো আগলে রাখা ওধলা গ্রামের চাঁদ আলী বলেন, ‘আমি এ বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। সারা দিন এখানেই কাটে। গত কয়েক বছর ধরে পাখিগুলো আগলে রেখেছি। আগে বন্দুক নিয়ে অনেকেই পাখি শিকার করতে আসত। আমরা গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের বাধা দিয়েছি। এখন আর কেউ পাখি শিকার করার সাহস রাখে না।’

হিন্দা গ্রাম থেকে আসা কৃষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিলে পাশেই জমি আছে। আবাদ করতে আসি। পাখিগুলো প্রতিনিয়তই পোকামাকড় খায়। এতে ফসলের উপকারই হয়। তবে মাঝে মধ্যে ধান গাছে শিষ বাঁধলে সেগুলো খেয়ে ফেল। সে সময়ে একটু অসুবিধায় পড়ে যাই। কিন্তু পাখিগুলোর প্রতি বিরক্ত হই না।’

বেড়াতে আসা যুবক আনিছুর রহমান বলেন, ‘অবসর সময়ে ক্লান্তি দূর করতে পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে আসি। পাখির কলকাকলিতে যখন মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা, তখন নিজের মধ্যে একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।’

ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা জাফর উল্লাহ বলেন, ‘কেউ যেন পাখি শিকার না করে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত