Ajker Patrika

বৃষ্টি হলে পানিতে থইথই ছড়া মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৩: ৪৫
বৃষ্টি হলে পানিতে থইথই ছড়া মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ

এসএসসি পরীক্ষার্থী পায়েল দেববর্মা। সাত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় তাকে। এর মধ্যে অন্তত তিন কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা। বৃষ্টি হলে এই রাস্তায় চলাচল দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় সময়মতো পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে এই পরীক্ষার্থী।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুড়ি ইউনিয়নের মধুপুর হিল রিজার্ভ ফরেস্টের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কালিগজিয়া গ্রামে বসবাস করে পায়েল। তার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ একটি ছড়া। অন্তত ৪০ ফুট চওড়া এই ছড়াটি বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায়। তখন পায়েলের মতো টিলাবন্দি হয়ে পড়েন কালিগজিয়ার বাসিন্দারা।

পায়েল বলে, ‘গ্রাম থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তা। পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে এখানে কোনো গাড়ি আসে না। মাঝেমধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু বৃষ্টি হলে এই রাস্তা দিয়ে অটোরিকশা আসা দূরের কথা, হাঁটাও যায় না।’

‘আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ছড়াতে কোমরপানি হয়ে যায়। তখন ছেলেরা লুঙ্গি পরে ছড়া পার হয়ে ওপরে গিয়ে স্কুলড্রেস লাগিয়ে নেয়। কিন্তু আমরা মেয়েরা পড়ি বেকায়দায়। তাই বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকে। কিন্তু পরীক্ষার সময় তো আর স্কুল বাদ দেওয়া যাবে না।’ বলে পায়েল।

কালিগজিয়া গ্রামে ৩০০ ত্রিপুরা পরিবারের বাস। এর মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১৫ জন। এখানে বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা ও অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে মূলত পাহাড়ে বিভিন্ন ফলদ ও সবজি চাষ করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় তাঁদের ফলানো কৃষিপণ্যও ঠিক সময় বাজারজাত করতে পারছেন না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাঁরা।

ওই গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাজন দেববর্মা বলে, ‘এখন ঝড়-বৃষ্টির সময়। এই সময় আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি, তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম দেববর্মা বলেন, ‘একটি রাস্তার অভাবে বছরের পর বছর ধরে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঠিক সময় স্কুলে যেতে পারে না। সরকারের কাছে দাবি, রাস্তা নির্মাণসহ ছড়ার ওপরে একটি সেতু দেওয়ার জন্য।’

অটোচালক সুমন মিয়া বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে কোনো অটোচালক আসতে চান না। মাঝেমধ্যে আমি আসি। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমন গাড়িরও ক্ষতি হয়। বৃষ্টি হলে গাড়ি নিয়ে টিলার মধ্যে আটকা থাকতে হয়।’

পুটিজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুদ্দত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাহুবল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান বলেন, ‘রাস্তাটির বিষয়ে আমি অনেকবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এখানে একটি চা-বাগান আছে। বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। এই রাস্তাটি যাতে না হয়, সে জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ একটি মামলাও করেছে।’

বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া শারমীন ফাতেমা বলেন, ‘আমরা রাস্তাটি নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এটি চা-বাগানের জায়গা, তাই বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই রাস্তা তৈরি হবে। চেষ্টা চালাচ্ছি রাস্তাটি নির্মাণ হলে সেখানে সেতুও হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত