Ajker Patrika

ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর: মুখোমুখি অবস্থানে এগোচ্ছে সব পক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ৫৩
ডেডলাইন ২৮ অক্টোবর: মুখোমুখি অবস্থানে এগোচ্ছে সব পক্ষ

২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ারি, মামলা-হামলা-ধরপাকড়সহ সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মহাসমাবেশ সফল করার কথা বলছেন দলটির নেতারা। একই দিনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ জনসভা ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। এ অবস্থায় ২৮ অক্টোবর ঘিরে সজাগ রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এদিন রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, জনজীবন যাতে ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি। জেলা প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে বলা হয়েছে।’

১৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির জনসমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই সমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে বলে জানান তিনি। 

বিএনপির প্রস্তুতি 
বিএনপির নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চান তাঁরা। এ জন্য মহানগরের সমন্বয় কমিটিগুলো জেলার সঙ্গে সমন্বয় করছে। প্রতিটি জেলা থেকে অধিকসংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকায় আনার কথা বলা হয়েছে দায়িত্বশীল নেতাদের। নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনা পর্যন্ত মামলা-হামলা ও ধরপাকড় এড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে নেতা-কর্মীদের আগেভাগে ঢাকায় আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শেষ সময়ে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা হতে পারে, সে বিষয়টিও ভাবনায় রেখেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সে রকম হলে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত আছেন, দলের এমন নেতাদের বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবর নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের ঢাকায় নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। পরিবহন বিড়ম্বনা এড়াতে যতটা সম্ভব আগেভাগেই নেতা-কর্মীদের নিজ উদ্যোগে ঢাকায় যেতে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকেই ঢাকা গেছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়া করা পরিবহনে না গিয়ে গণপরিবহনে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে আবাসিক হোটেলে না উঠে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে।

মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি আগ বাড়িয়ে কোনো সংঘাতে জড়াতে চায় না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাঁরা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করতে চান। এই বার্তা দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে বাধা এলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

মহাসমাবেশ-পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, সচিবালয় ঘেরাও, অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচির প্রস্তাব আছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চেয়ে এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে অবহিতকরণের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না দিয়ে বিকল্প স্থানের প্রস্তাব করা হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন দলটির নেতারা।

২৮ অক্টোবর বিএনপির পাশাপাশি রাজধানীতে সমাবেশ করবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরাও। মহাসমাবেশ এবং চলমান এক দফা আন্দোলন সফল করতে গতকাল যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা করেছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। সভায় মহাসমাবেশ উপলক্ষে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের যথাযথভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে, মহাসমাবেশ সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ১৮ অক্টোবর থেকে গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত অন্তত ৬২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে ৪৯টি মামলায় ১২ হাজার ৯৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি
 ২৮ অক্টোবর নিয়ে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন ঠেকাতে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিতে সহিংস আচরণ শুরু করতে পারে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতায় দমনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অশান্তি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করা, সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

ওইদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আয়োজনে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ অক্টোবর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে লোকসমাগম ঘটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগপর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব, এটা আমাদের পুরোনো ঘোষণায় আছে।’ বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা হলে আওয়ামী লীগ কীভাবে মোকাবিলা করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সময়ই সবকিছু বলে দেবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের নেতারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সতর্ক অবস্থায় থাকবে।’ 

পুলিশের প্রস্তুতি
 ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে আগামী চার-পাঁচ দিন বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের দিকে নজরদারি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি সমাবেশের দিন পুলিশ সদস্যদের মাথা ঠান্ডা রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়।

বৈঠক সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা আছে, থানায় মামলা রয়েছে, তাঁদের সমাবেশের আগে গ্রেপ্তারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। আগামী আরও চার-পাঁচ দিন দেশব্যাপী পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সমাবেশের অনুমতির বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপিকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের জন্য কোন জায়গা দেওয়া হবে, তা নিয়ে পুলিশ আলোচনা করছে। তবে অনুমতি দেওয়ার আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কাছে তাঁদের নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য যেসব এলাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে সেসব এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান ও সক্ষমতা জানাতে বলা হয়েছে। ৫০ থানার ওসিদের প্রতিবেদন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মূল্যায়ন করার পর দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বলেও বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের বৈঠকে বিএনপি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শিগগিরই বৈঠক করে সমাবেশ নিয়ে আলোচনা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। ওই বৈঠকে দলটির কর্মীরা সমাবেশের দিন যাতে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণ করেন, পুলিশ তাদের সেই আকাঙ্ক্ষার কথা বিএনপির নেতাদের জানাবেন।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখনো কোনো নাশকতার আশঙ্কা করছি না। কোনো ভীতির কিছুও দেখছি না। ডিএমপির কমিশনার নিরাপদ মনে করলে অনুমতি দেবেন, আর যদি ঝুঁকি থাকে তাহলে অনুমতি দেবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত