Ajker Patrika

হজযাত্রায় বন্ধ হচ্ছে অযাচিত খরচ

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ৪২
হজযাত্রায় বন্ধ হচ্ছে অযাচিত খরচ

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাচ্ছেন ৮৩ হাজারের বেশি হজযাত্রী। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো নিজস্ব জনবল দিয়ে হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে। হজের অহেতুক খরচ কমাতে সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও নাগরিকদের মধ্য থেকে হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল গঠন করতে বলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তাই সহায়তাকারী দলে এবার অন্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ কিংবা দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকতে পারবেন না। তবে হজ কারিগরি দল ও চিকিৎসক দল থাকবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, সৌদিপ্রবাসীদের মধ্য থেকে সহায়তাকারী দল গঠন করা হলে সরকারের ১৫-২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। 
ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘হজের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে সরকারপ্রধানের নির্দেশনা আছে। এ কারণে গত বছর সরকারি টাকায় হজে যাওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এবারও তা-ই থাকবে। পাশাপাশি এবার হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাইরে কাউকে নেওয়া হবে না। তাদের বদলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী সৌদিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে হজকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে সরকারের বড় অঙ্কের টাকার সাশ্রয় হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে পবিত্র হজের সময় সৌদিতে অবস্থানরত আরবি ভাষা জ্ঞানসম্পন্ন এবং মক্কা-মদিনার রাস্তাঘাট সম্পর্কে ভালোভাবে জানা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মী ও নাগরিকদের মধ্য থেকে হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী নিয়োগ দিতে নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হয়।

জানা গেছে, প্রতিবছরই হজে বেশ কয়েকটি দল গঠন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে আছে হজ প্রতিনিধিদল, হজ প্রশাসনিক দল, হজ চিকিৎসক দল, হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল, হজ কারিগরি দল ইত্যাদি। ধর্মমন্ত্রীর নেতৃত্বে হজ প্রতিনিধিদলের সদস্য হন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, হাব নেতা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ আরও অনেকে। হজ প্রশাসনিক দলে থাকেন ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, দপ্তর বা সংস্থার প্রধান, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ ক্যাডার কর্মকর্তারা। হজ চিকিৎসক দলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসক, নার্স ও আয়া থাকেন।

কারিগরি দলে থাকেন কম্পিউটার অপারেটর ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকে। হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, গাড়িচালক, পাম্পচালক, মন্ত্রী-সচিবদের গানম্যান, ক্লিনার, অফিস সহায়ক, সরকারি বিভিন্ন বাহিনী এবং এজেন্সির সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার কমবেশি ৩৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সৌদিতে যান।

অভিযোগ আছে, রাষ্ট্রীয় টাকায় হাজিদের সেবার জন্য সরকারি কর্মচারীদের পাঠানো হলেও অনেকে সেবা না দিয়ে নিজের কেনাকাটা ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। হজ না করার শর্তে হাজিদের সেবার জন্য পাঠানো হলেও তাঁরা সবাই হজও করে থাকেন। এ ছাড়া হজ চিকিৎসক ও প্রশাসনিক সহায়তাকারী দলে নাম লেখাতে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগও ওঠে কারও কারও বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর হজের আগমুহূর্তে তাৎক্ষণিক অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয় মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, তাঁর একান্ত সচিব ও উপসচিবকে (হজ)। স্থগিত করা হয় সরকারি টাকায় হজ পালনের সুযোগ।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম বলেন, এবার সৌদিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের মধ্য থেকে হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী দল গঠন করা হবে। এতে সরকারের ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে হজ চিকিৎসক দলে ও কারিগরে দলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্বল্পসংখ্যক সদস্য নেওয়া হবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৩ হাজার ১৮৫ জন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত