Ajker Patrika

‘অসুস্থ’ পরিবেশে চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৩৯
‘অসুস্থ’ পরিবেশে চিকিৎসা

‘হাসপাতালের যে পরিবেশ তাতে রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হইয়া পড়ব। তারপরও কিছু করার নাই, আমরা তো গরিব মানুষ। বাধ্য হইয়া তাই সরকারি হাসপাতালে আসছি।’ পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে এমন মন্তব্য করেন মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা মোহন বাঁশি সেনের স্ত্রী কাজল সেন।

মিটফোর্ড হাসপাতালের নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ে এমন অসন্তোষ রয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগী ও তাঁদের স্বজনদের। মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আরেক রোগী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা এলাকার ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘টয়লেট ঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না। দুর্গন্ধে বেডে থাকা যায় না।’

পরিবেশ নিয়ে রোগীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী রশীদ-উন-নবী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখানে রোগীর লোকজনের ভিড় বেশি। একজন রোগীর সঙ্গে তিনজন লোকও রয়েছে। দৈনিক আট হাজার লোক ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। এতেও পরিবেশ নোংরা হচ্ছে।

শুধু মিটফোর্ড নয়, দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে রোগীদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসাপাতাল ঘুরে রোগীদের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের আন্তরিকতা না থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকেও বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ১১ নভেম্বর সেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট হলেও অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশের কারণে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে অসন্তোষ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। এর মূল কারণ সরকারি হাসপাতালগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি। অভিযোগ রয়েছে, প্রয়োজনীয় জনবল থাকার পরও অনেক হাসপাতাল ঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না। বৈঠকে জানানো হয়, টাঙ্গাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মডেল তৈরি করা হয়েছে। সব হাসপাতালে এই মডেল অনুসরণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিষয়টি তুলে ধরেন। ওই কর্মকর্তা জানান, রোগী ও স্বজনদের খাবার পরিবেশনের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবেশ নোংরা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি এড়াতে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর স্বজনদের খাওয়ার জন্য আলাদা স্থান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মান উন্নয়নে চাহিদা অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অনুমোদন দিতে হবে। আউটসোর্সিং জনবলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, রোগীর পরিচর্যাকারী নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতাল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও বলা হয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতালের কীটপতঙ্গ বিনাশ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল চত্বরে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত যানবাহন, যন্ত্রপাতি, আসবাব ও অন্যান্য বাতিল জিনিস নষ্ট বা বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে মানসম্মত টয়লেট স্থাপনের নির্দেশও দেওয়া হয় বৈঠকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ মিঞা আজকের পত্রিকাকে জানান, হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক করতে তাঁরা কাজ করছেন। এটা এক দিনে হবে না। বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করে পরিস্থিতি ঠিক করার চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ শক্তিশালী করা গেলে রোগী ভর্তির চাপ অর্ধেক কমবে। এতে হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সুবিধা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

ভোটের হাওয়ায় জোটের অঙ্ক

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

আন্দোলনকারীদের মারধর, থমথমে শেবাচিম হাসপাতাল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত