Ajker Patrika

গাজীপুর সিটি: কিরণের বিরুদ্ধে অনিয়মের ২১ অভিযোগ, তদন্তে অনীহা

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১০: ০৭
গাজীপুর সিটি: কিরণের বিরুদ্ধে অনিয়মের ২১ অভিযোগ, তদন্তে অনীহা

দুর্নীতি, ঘুষ ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্ত অর্জন, বিদেশে টাকা পাচারসহ সুনির্দিষ্ট ২১টি অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চার মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক। এ ছাড়া ১৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে জারি করা রুলের জবাব দিতে বলা হলেও এখনো কোনো পক্ষই জবাব দেয়নি। 

মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি একের পর এক অনিয়মে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁরই সহকর্মীদের। কিরণের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য গত বছরের ২০ জুলাই দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন মো. নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এতে ফল না পেয়ে ওই ব্যক্তি ও গাজীপুরের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ চার মাসের মধ্যে এসব অভিযোগ অনুসন্ধান শেষ করতে দুদককে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়নি দুদক। এই অবস্থায় দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দ্রুত দাখিল করার নির্দেশনা চেয়ে ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেছেন রিটকারীরা। আবেদনে ওই অনুসন্ধান চলাকালে কিরণের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে। 

জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান। শেষ হলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

অভিযোগ জমা পড়েছে মন্ত্রণালয়ে 
গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। ২ আগস্ট সিটি করপোরেশনটির প্যানেল মেয়র আব্দুল আলীম মোল্লা এই অভিযোগ জমা দেন। এতে বলা হয়, কিরণ ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেও ৫ দিনের ছুটি নিয়ে অন্তত ১২ দিন বিদেশে থেকেছেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের সামগ্রিক কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। এর আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) অনুযায়ী অনুপস্থিতি বা অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মেয়র দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে তিনি পুনরায় দায়িত্ব পালনে সমর্থ্য না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের কোনো সদস্য মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু কিরণ এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে এবং কোনো পরামর্শ না করে বিদেশ গিয়েছেন। 
 
অভিযোগগুলো যেমন
গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে করা আবেদনে আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২১টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এই অভিযোগগুলোই পরে রিট আবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে। আবেদনে উল্লেখ করা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে–উত্তরায় দুটি বাড়ি (মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা), রূপায়ণ সিটি উত্তরায় ম্যাজিস্ট্রিক ফেইস ভবনে দুটি বিলাসবহুল কন্ডোনিয়াম ফ্ল্যাট (১৬ দশমিক ৬০ কোটি টাকা), ময়মনসিংহের ভালুকায় নিজের ও স্ত্রীর নামে ২০০ বিঘা জমির ওপর ফ্যাক্টরি (আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা), গুলশানে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট (আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি টাকা), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন টঙ্গী জোনে তিনটি কারখানা (আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা) স্থাপন। 

এ ছাড়া দুর্নীতির অর্থ পাচার করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তিনটি বাড়ি (মূল্য ৪০০ কোটি টাকা), নিজের ও স্ত্রীর নামে এবং শ্যালক ও শ্যালিকার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের লকারে ৫০০-৬০০ ভরি সোনা ও হীরা, সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স আদায়ে অনিয়ম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলে কর্মচারীদের নিকট থেকে ১০ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে হাইকোর্টে রিটকারীদের আইনজীবী সাজ্জাদ উল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ২১টি অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকে আবেদন করা হয়েছিল। দুদক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট করা হয়। হাইকোর্ট দুদককে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। আর তদন্তে কোনো কিছু পাওয়া গেলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে অদৃশ্য কারণে আসাদুর রহমান কিরণকে ডেকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। ১৫ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ জবাব দেয়নি। আমরা ২৪ আগস্ট আবেদন করেছি দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য।’

সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দুর্নীতি অনুসন্ধানের বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন এখনো আসেনি। এ ছাড়া রুলের জবাবও দেয়নি কোনো পক্ষ। 

জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো জবাব দিইনি। জবাব রেডি হচ্ছে। দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত