Ajker Patrika

কাঁচাবাজারে ডাকাতি!

আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৭: ২১
কাঁচাবাজারে ডাকাতি!

সাধারণ মানুষের জীবনে টিকে থাকার সংগ্রামটাই সবচেয়ে বড়। তাই হঠাৎ করে ডিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেলে তাদের জীবনে সমস্যা হয়। কেউ কেউ এই অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার পক্ষে যে ব্যাখ্যা দেন, তা শুনে মনে হয়, আরে তাই তো! ১৮০ টাকার কাঁচা মরিচের দাম তো ১ হাজার টাকা হতেই পারে! ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকা হওয়ারও তো ব্যাখ্যা আছে! আর ডিম? সিন্ডিকেটের কথা এড়িয়ে খামারের ফিডের দাম বাড়ার গল্প বললেই কেল্লা ফতে!

মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁরা আমিষের জন্য অনেকটাই নির্ভর করেন ডিমের ওপর। দৈনিক আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য ডিমই সবচেয়ে সহজলভ্য খাদ্য ছিল। কিন্তু সেই ডিম নিয়েও যে চালাকি করা হলো, তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে একটা প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের একটি সংঘবদ্ধ দল নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কোনো কারণ ছাড়াই রাতারাতি বাড়িয়ে দিতে পারে পণ্যের দাম। খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়তে বেশি দেরি হয় না। দিন দশেকের এই ডাকাতি তাদের লাভের ঘর পূর্ণ করে দেয়। যারা এ কাজটি করছে, তাদের অপতৎপরতা বন্ধ হয়েছে কোথাও, এমন নজির কি কেউ দেখাতে পারবে?

পেঁয়াজ নিয়ে মাঝে মাঝেই বাজার গরম হয়। বাজার গরম হলে ক্রেতার মাথাও গরম হয়। তখন আবার কিছু শেখানো বুলি বিতরণ করা হয়। কিন্তু তাতে ক্রেতার মাথা ঠান্ডা হবে, এতটা আশা করা ঠিক হবে না। একটি উদাহরণ দিলেই তা পরিষ্কার হবে। আজকের পত্রিকায় আমদানি করা পেঁয়াজ নিয়ে গত সোমবার যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, সেখান থেকেই বোঝা যাবে, কতটা চাতুর্যের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার লুটপাট সম্পন্ন করা সম্ভব। যে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল ২২ টাকা দরে, সেই পেঁয়াজই কোনো কারণ ছাড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। দাম বাড়ানোর যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা এতটাই হাস্যকর এবং বিকারপ্রসূত যে, এ কথা বলার জন্য তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

দেখুন, দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যা। ভারতে পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সুতরাং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম তো বাড়বেই—এই তাদের যুক্তি! ফাঁকটা কোথায়, সেটাই বলছি। ভারতে রপ্তানি শুল্ক কার্যকর হয়েছে গত সোমবার থেকে। সেই শুল্ক দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি এখনো। এই সুযোগে নিজেরাই দাম বাড়িয়ে কম দামে কেনা পেঁয়াজ অন্যায়ভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হলো। অনৈতিকতার চরম প্রকাশ!

বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যারা, তাদের মধ্যে যদি নৈতিক বোধ না থাকে, তাহলে অরাজকতাই হয়ে ওঠে শেষ কথা। যেকোনো ব্যবসার একটা সাধারণ সূত্র আছে। গ্রহণযোগ্য মুনাফা করে ভোক্তার দ্বার পর্যন্ত পণ্য পৌঁছে দেওয়া হলে বাজারে অস্থিরতা আসে না। অস্থিরতাই আমাদের বাজারের নিয়তি হয়ে উঠল কেন, সেটা বুঝতে কি খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত