Ajker Patrika

মুক্তিযুদ্ধের অরক্ষিত গণকবর

মিজান মাহী, দুর্গাপুর
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ১৪
মুক্তিযুদ্ধের অরক্ষিত গণকবর

দেখে বোঝার উপায় নেই এটি মুক্তিযুদ্ধের গণকবর। কবরের পাশেই চাষ করা হচ্ছে সবজি। সীমানা বেষ্টনীতে শুকানো হচ্ছে কাপড়। কেউ কেউ সেখানে বেঁধে রেখেছেন গবাদিপশু। গত বুধবার সরেজমিন দেখা গেল এ চিত্র।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুর্গাপুরের ১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি এবং মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার সাক্ষী যে গণকবর, সেটির আজ এ অবস্থা। এতে শহীদদের অবমাননা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর রাতে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে গগনবাড়িয়া গ্রামে বেঁধে রাখে। পরের দিন সন্ধ্যার দিকে ওই গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় কোনো হয় তাঁদের। এরপর গুলি চালিয়ে ও জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় হয় ১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার সাধারণ মানুষকে। মুহূর্তেই পুরো এলাকা রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। এর বহু বছর পর এ গণহত্যার স্মৃতি ধরে রাখতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের অভিযোগ, ‘শহীদ মিনার সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। তাই এ অবস্থা। শহীদ মিনারে দখল করে গরু ও ছাগল বেঁধে রাখা হয়। শহীদ মিনারের পাদদেশে কাপড়চোপড় ও লাকড়ি শুকানো হচ্ছে। এভাবে শহীদদের অবমাননা করা হচ্ছে।’

গগনবাড়িয়া গ্রামের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী এ গণকবর। এটি পরিদর্শনে ২০১১ সালের ৬ মার্চ এসেছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বিচার কার্যক্রম অধরাই থেকে গেছে।

দাওকান্দি সরকারি কলেজের প্রভাষক আয়নাল হক, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গগনবাড়িয়া গ্রামের ১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে গুলি করে এবং জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে তৎকালীন রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির লোকজন। যুগিশো পালশা গ্রামে গিয়ে হিন্দুধর্মাবলম্বী ৪২ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

যুগিশো গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যদু নাথ সরকারের ভাতিজা ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. প্রফুল্ল চন্দ্র সরকার জানান, স্বাধীনতার এত বছর পরও গগনবাড়িয়া গ্রামে গণহত্যার স্থানটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই স্থানে ২০০২ সালে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। গণকবরটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এভাবে একটি শহীদ মিনার দখল করে যদি গরুর গোয়াল বানানো হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই হয় না।’ তিনি শিগগিরই শহীদ মিনারটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত